বিজ্ঞাপন

তেল উত্তোলন কমানোর ঘোষণা সৌদি আরবের

June 5, 2023 | 9:28 am

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে উত্তোলন হ্রাস করছে সৌদি আরব। আগামী জুলাই থেকে দৈনিক ১৫ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন কমাবে দেশটি। বর্তমানে দৈনিক ১ কোটি ব্যারেল তেল উত্তোলন করে সৌদি আরব।

বিজ্ঞাপন

২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববাজারে তেলের দাম ধরে রাখতে উৎপাদন হ্রাসের জন্য ওপেক প্লাসের একটি সমঝোতা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে জুলাই থেকে ৫ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন হ্রাসের ঘোষণা দিয়েছে রিয়াদ। এবার রিয়াদ জানিয়েছে, ওপেক প্লাসের সমঝোতার বাইরে আরও ১০ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন কমানো হবে।

সৌদি আরবের জ্বালানি মন্ত্রণালয় বলেছে, জুলাইয়ে দেশটির তেল উৎপাদন প্রতিদিন ৯০ লাখ ব্যারেলে নেমে আসবে। সৌদি জ্বালানিমন্ত্রী প্রিন্স আবদুল আজিজ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এটি একটি সৌদি ললিপপ। আমরা সবসময় রহস্য তৈরি করতে চাই। আমরা চাই না যে লোকেরা আমরা যা করি তা অনুমান করার চেষ্টা করুক। এই বাজারে স্থিতিশীলতা প্রয়োজন।’

বিজ্ঞাপন

জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক। এ সংগঠনের সঙ্গে রাশিয়া ও তার নেতৃত্বাধীন কিছু দেশ নিয়ে গঠিত ওপেক প্লাস। বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ অপরিশোধিত তেল উৎপাদন করে এই জোটের দেশগুলো। জোটটির নীতিগত সিদ্ধান্ত বিশ্ববাজারে তেলের দামে বড় প্রভাব ফেলে।

এর আগে গত এপ্রিলেও আকস্মিকভাবে এক দফা জ্বালানি তেলের উৎপাদন কমিয়েছিল ওপেক প্লাস। সে সময় ব্রেন্ট ক্রুডের দর ৯ ডলার বেড়ে গিয়েছিল। যদিও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দুর্বলতায় তেলের চাহিদা কমে যাওয়ায় বাজারে দামও কমে যায়।

বিজ্ঞাপন

সৌদি আরব হলো ওপেক প্লাসের একমাত্র সদস্য যেখানে অতিরিক্ত তেল সংরক্ষণের অবকাঠামো রয়েছে। ফলে দেশটি সহজেই উৎপাদন ও রফতানি বাড়াতে-কমাতে পারে।

গত এপ্রিলে দৈনিক ১৬ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন হ্রাসের ঘোষণা দিয়েছিল ওপেক প্লাস। এর আগে গত বছর আরও ২০ লাখ ব্যারেল উৎপাদন হ্রাস করে জোটটি। সবমিলিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত দৈনিক ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন হ্রাসের একটি সমঝোতা রয়েছে ওপেক প্লাসের। রোববার জোটটির ৭ ঘণ্টাব্যাপী এক সভায় এই সময় আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মূলত বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তি রেখে মুনাফা লাভের জন্যই তেলের উৎপাদন হ্রাস করছে ওপেক প্লাস। শীর্ষ তেল উৎপাদক দেশ সৌদি আরব ওপেক প্লাসের সমঝোতার বাইরে আরও ১০ লাখ ব্যারেল ঐচ্ছিক উৎপাদন হ্রাসের ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্ববাজারে তেলের বাজার স্থিতিশীল রাখতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সৌদি।

তবে সৌদি আরবের কাছে স্থিতিশীল বিশ্ববাজারের অর্থ হলো—তেলের একটি চাঙ্গা বাজার। তেলের দাম বাড়লে লাভবান হয় উৎপাদক দেশগুলো, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভোক্তা দেশ।

বিজ্ঞাপন

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ তেল-গ্যাস রফতানিকারক দেশ রাশিয়া প্রতিবেশী ইউক্রেনে হামলা চালায়। এর ফলে রাশিয়ার উপর একের পর এক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব। এতে ইউরোপ ও আমেরিকায় রুশ তেলের বাণিজ্য কমে যায়। ভোক্তা হিসেবে জ্বালানি চাহিদা মেটানোর চাপে পড়ে ইউরোপের দেশগুলো। পশ্চিমা দেশগুলো আশা করেছিল, এ পরিস্থিতিতে বাড়তি উৎপাদন করে বিশ্ববাজারে তেলের যোগান ও দাম স্থিতিশীল রাখবে সৌদি আরব। কিন্তু রিয়াদ নেতৃত্বাধীন ওপেক রাশিয়ার সঙ্গে মিলে ওপেক প্লাস জোট তেলের উৎপাদন কমাতে থাকে। এতে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যায়।

উৎপাদন কমিয়ে তেলের দাম বাড়তি রাখার এমন প্রচেষ্টাকে কারসাজি বলে অভিহিত করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। ওপেকের বিরুদ্ধে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে বৈশ্বিক অর্থনীতি চাপে ফেলার অভিযোগ আনে পশ্চিমা বিশ্ব। তবে ওপেকের দাবি, বিশ্ব অর্থনীতিকে দুর্বল করে আসছে পশ্চিমা বিশ্বের আগ্রাসী টাকা ছাপানোর নীতি। এর ফলে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে তেলের বাজারে দর ধরে রাখতে উৎপাদন হ্রাস করতে বাধ্য হচ্ছে ওপেক ও ওপেক প্লাস।

সারাবাংলা/আইই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন