বিজ্ঞাপন

‘জ্বালানি কেনার পয়সা না থাকলেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে’

June 5, 2023 | 5:37 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

সিরাজগঞ্জ: গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা জোনায়েদ সাকি বলেছেন, দেশ প্রেমিক ও বিশেষজ্ঞরা যেভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলেছিলেন সরকার সে পথে না হেঁটে বৃহৎ এই সেক্টরে আত্মীয়-স্বজন নিয়ে লুটপাটের জন্য ভিন্ন পথে হাঁটলো। তার ফলেই আজ দেশে বিদ্যুৎ সংকট। এখন আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা অনেক কিন্তু সেইটা চালানোর মতো সামর্থ্য নাই। এখন জ্বালানি কেনার পয়সা নেই, কিন্তু ক্যাপাসিটি চার্জ ঠিকই দেওয়া হচ্ছে। এমনকি বিদেশি ডলারেও দেওয়া হচ্ছে ক্যাপাসিটি চার্জ।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৫ জুন) সকালে ঢাকা থেকে রংপুরগামী রোড মার্চের দ্বিতীয় দিনে সিরাজগঞ্জ শহরের কুটুমবাড়ি হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তবর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা থেকে রংপুরগামী রোড মার্চ ৪ জুন শুরু হয়ে আগামী ৭ জুন রংপুরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে জোনায়েদ সাকি বলেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) এমন একটা ব্যবস্থা চালু করলেন যে, কয়লা কেনার পয়সা নেই কিন্তু বসিয়ে রেখে অনেককে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হচ্ছে। টাকা যেখানে ব্যয় করা দরকার সেখানে ব্যয় না করে অন্য জায়গায় ব্যয় করা হচ্ছে। তাই আমরা মনে করি এই বিদ্যুৎ সংকটের সব দায় সরকারের, তার বিদ্যুৎ নীতির ও তাদের লুটপাটের।আজ বিশ্ব পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে, দেশের মানুষ বিদ্যুৎ ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে কষ্টে আছে, এই কষ্ট লাঘবের চিন্তা কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নেই। তিনি ডলার সংকটের কথা বলেন কিন্তু বড় বড় প্রকল্পের ব্যয় বন্ধ হচ্ছে না। বড় প্রকল্পে ব্যয় করার জন্য ২ লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট এর মধ্যে কিন্তু ২ লাখ ৭১ হাজার টাকাই তারা ঋণ নেবেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে বাজারে ঢোকাচ্ছেন, এর ফলাফল হচ্ছে দ্রব্যমূল্য আবারও বেড়ে যাচ্ছে, মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) মানুষের কষ্টের কথা বললেও মানুষের কষ্টের মূল কারণ যে তিনি, তার নীতি সেটার দিকে তিনি তাকাচ্ছেন না। তারা মিথ্যা কথা বলে, মানুষকে বিভ্রান্তি করে।

বিজ্ঞাপন

গণতন্ত্র মঞ্চের মূল দাবি সম্পর্কে সাকি বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের সাংবিধানিক কাঠামো লাগবে, সংবিধানের ক্ষমতা কাঠামো সংস্কার করে সংসদ, বিচার বিভাগ, সরকার ব্যবস্থা ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠা। সবগুলো আইন মতে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করে এমন জায়গা দিতে হবে যাতে আর কেও নিজের জমিদারি বানিয়ে সবকিছু নিজের পকেটে না রাখতে পারে।

তিনি বলেন, এই ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে একটা আন্দোলন চলছে, বিএনপির মতো বড় রাজনৈতিক দল আন্দোলন করছে। আমাদের লক্ষ্য এমন সরকার ব্যবস্থা হবে যে, সরকারের জবাবদিহিতা থাকবে, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হবে, ন্যায় বিচার নিশ্চিত হবে, মানুষের ন্যায্যতা নিশ্চিত হবে।

সাকি পুলিশের কৌশলী ভূমিকা নিয়ে বলেন, তারা আমাদের বুঝাচ্ছে আপনারা সব কার্যক্রম চালান সমস্যা নেই, কিন্তু এটাও বুঝাচ্ছে চাপ থাকার কারণে তারা কিছু করতে পারছে না। তারা বাধা কিন্তু আমাদের ঠিকই দিচ্ছে। আমরা সমাবেশের জন্য রংপুর টাউন হল চাইলাম কিন্তু টাউন হল ফাঁকা থাকার পরেও তারা আমাদেরকে দিলেন না। পরে বলছেন সেখানে আওয়ামী লীগের প্রোগ্রাম আছে। এটাও তাদের একটা কৌশলী ভূমিকা। আমরা টাঙ্গাইলে মওলানা ভাসানীর সমাধিতে প্রোগ্রাম করতে যাব। সেখানেও তাদের পক্ষ থেকে নানান রকম কথা বলা হলো। তারা বাধা না দিলেও বলা হচ্ছিল, ছাত্রলীগ-যুবলীগ মহড়া দিচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। আমরা সিরাজগঞ্জ শহরে প্রোগ্রাম করার জন্য অনুমতি চাইলেও পুলিশ আমাদের সেটাও দিলেন না।

বিজ্ঞাপন

গণতন্ত্র মঞ্চের প্রধান সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক অভিযোগ করে বলেন, আমরা রোড মার্চে বিভিন্ন জায়গায় বাধার সম্মুখীন হয়েছি। গতকাল টাঙ্গাইলেও হয়েছি, সিরাজগঞ্জেও হলাম। তারা আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে দিচ্ছে না, তারা বাধা তৈরি করছে। সরকার এতটাই জনবিচ্ছিন্ন, বেসামাল ও এতটাই অস্থির, এতটাই তারা আতংকের মধ্যে আছেন যে, কোন গণতন্ত্র মঞ্চের মতো সবারই একটা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, শান্তিপূর্ণ রোডমার্চ, শান্তিপূর্ণ অবস্থান তারা করতে দিতে চান না।

সরকার এখন শেষ দিনগুলো পার করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ছোট্ট একটা সমাবেশ দেখলেই মনে করেন এই বুঝি বোমা পড়ল, ছোট্ট একটা মিছিল দেখে মনে করেন, লক্ষ লক্ষ মানুষ বুঝি বেরিয়ে গেল। এতটাই তাদের আতংক। তারা আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চ সরকারের পরিবর্তন চায়, শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন চায়। পাশাপাশি আইন ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সকল কিছুর সংস্কার করতে হবে।

মতবিনিময় সভায় নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সার, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডির) ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, সিরাজগঞ্জ জেলা নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক নুর হোসেন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক রফিকুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এনইউ

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন