বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্তিম উপগ্রহ নির্মাণের পথ পরিক্রমা

May 11, 2018 | 1:12 am

।। সন্দীপন বসু ।।

বিজ্ঞাপন

সবকিছু ঠিক থাকলে আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মহাকাশের উদ্দেশে উড়ে যাবে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্তিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু-১’। মহাকাশ যুগে প্রবেশের এই সময়ে আনন্দে উদ্বেল দেশবাসী।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্রে জানা গেছে, মহাকাশে বাংলাদেশের একটি নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর চিন্তা প্রথম শুরু হয় ১৯৯৯ সালে। এরপর অনেক ধাপ পেরিয়ে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের কাছে আবেদন করে। একই বছরে অনুমোদন পাওয়ার পর উপগ্রহটির নির্মাণ ও উৎক্ষেপণে দরপত্র চাওয়া হয়। একইসঙ্গে গাজীপুর এবং রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়াতে উপগ্রহের দু’টির ভূ-নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র নির্মাণের দরপত্রও আহ্বান করা হয়। উপগ্রহ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা।

বিজ্ঞাপন

এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটিতে নির্মাণ পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু-১

বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ সারাবাংলাকে জানান, বঙ্গবন্ধু উপগ্রহ তৈরির পুরো কর্মযজ্ঞটি সম্পন্ন হয়েছে বিটিআরসির তত্ত্বাবধায়নে। তিনটি ধাপে নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এগুলো হলো উপগ্রহের মূল কাঠামো তৈরি, উপগ্রহ উৎক্ষেপণ ও ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণের জন্য গ্রাউন্ড স্টেশন তৈরি।

বিজ্ঞাপন

ফরাসি-ইতালিয়ান মহাকাশযান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থ্যালেস আলেনিয়া স্পেসকে এই উপগ্রহটি নির্মাণের কাজ দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ‘স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল’ ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে উপগ্রহের নকশা তৈরি করে বলে জানান তিনি।

এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটিতে নির্মাণ পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু-১

মোট দুই হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা প্রস্তাবিত বাজেটে শুরু হয় বাংলাদেশের প্রথম উপগ্রহের কাজ। যার মধ্যে এক হাজার ৩১৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা দিয়েছে সরকার। আর ১ হাজার ৬৫২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বৈদেশিক ঋণ হিসেবে বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি থেকে সংগ্রহ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

গত মার্চের শেষ দিকে থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস জানায়, উপগ্রহটি নির্মাণের কাজ শেষ এবং তা ফ্লোরিডায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চলতি মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্সের ‘ফ্যালকন-৯’ রকেটে করে উপগ্রহটি মহাকাশে পাঠানো হবে।

ড. শাহজাহান মাহমুদ

ড. শাহজাহান মাহমুদ সারাবাংলাকে আরও জানান, উপগ্রহ উৎক্ষেপণের কাজটি বিদেশে হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে বাংলাদেশ থেকেই। এজন্য গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা (গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন) তৈরির কাজ চলছে। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

বিটিআরসি সূত্রে আরও জানা গেছে, উপগ্রহটির কক্ষপথ (অরবিটাল স্লট) কেনা হয়েছে রাশিয়ার প্রতিষ্ঠান ইন্টার স্পুটনিকের কাছ থেকে।  চুক্তির মেয়াদ অনুসারে প্রাথমিকভাবে ১৫ বছরের জন্য এ কক্ষপথ কেনা হয়েছে। এছাড়া আরও ৩০ বছর বাড়ানো যাবে এই চুক্তির মেয়াদ। আর এই মোট ৪৫ বছরই বঙ্গবন্ধু উপগ্রহের মেয়াদকাল।

মহাকাশের ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমায় প্রায় ২১৯ কোটি টাকায় কেনা হয়েছে এ কক্ষপথের অবস্থান। এই ঠিকানায় অবিরত ঘুরবে বঙ্গবন্ধু-১। সেবা দিয়ে যাবে বাংলাদেশের কোটি মানুষকে।

 

সারাবাংলা/এসবি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন