May 15, 2018 | 9:24 am
মোসতাকিম হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
কথা বলতে বলতে বার বার থেমে যাচ্ছিলেন। আবেগটা সংবরণ করতেও একটু যেন কষ্ট হচ্ছিল। বয়সে শীর্ণ চোখেমুখে খেলা করছিল অনেক দিন পর পুরনো সুহৃদদের ফিরে পাওয়ার আনন্দ। পরে যখন সাংবাদিকদের সময় দিচ্ছিলেন, তখনও গর্ডন হেসে উত্তর দিলেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেট না দেখে কী আর থাকা যায়?’ স্মৃতির সেই বাংলাদেশে আবার এলেন গ্রিনিজ, তাঁকে দেওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার (১৪ মে) রাতে হোটেল সোনারগাঁও যেন হয়ে উঠেছিল ক্রিকেট-পরিবারের অন্তরঙ্গ একটা পুনর্মিলনী।
গ্রিনিজ বাংলাদেশে আসছেন, জানা হিয়ে গিয়েছিল দিন কয়েক আগেই। নিজ থেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন, বিসিবিও এই সুযোগে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনা করে ফেলে। ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জয়ী সেই দলের অনেকেই ছিলেন আজ। ছিলেন ১৯৯৯ সালের প্রথম বিশ্বকাপে খেলা অনেকেই। আকরাম খান, মিনহাজুল আবেদীন, আতাহার আলি খান, মোহাম্মদ রফিক… গ্রিনিজ একেকজনের সঙ্গে দেখা হতেই আপ্লুত হয়ে জড়িয়ে ধরছিলেন। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন থেকে শুরু করে ছিলেন বোর্ড পরিচালকদের অনেকেই। জাতীয় দলের সৌম্য, রুবেল, অপুসহ অনেকে শুরু থেকেই ছিলেন। পরে তাঁদের সঙ্গে যোগ দিলেন মুশফিকুর রহিম। গ্রিনিজের সঙ্গে দেখা হতেই জড়িয়ে ধরলেন সহাস্যে।
এর মধ্যেই গ্রিনিজ ছিলেন মধ্যমণি হয়ে। পরিচিত খেলোয়াড়, কর্মকর্তা থেকে সাংবাদিক… সবার সঙ্গে করছিলেন রোমন্থন। স্ত্রী সঙ্গে ছিলেন তাঁর, স্বামীর সম্মানে যখন গোটা বলরুম উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান জানাল, হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে তিনি সেই মুহুর্ত ধারণ করছিলেন নিজের ট্যাবের ক্যামেরায়। তিন বছর বাংলাদেশে ছিলেন গ্রিনিজ, আইসিসি ট্রফি জয়ের পর সম্মানসূচক নাগরিকত্বও পেয়েছিলেন। চমকে দিয়ে বললেন, ‘বাংলাদেশের ওই পাসপোর্ট আবারও নবায়ন করতে চান, ‘হ্যাঁ, পাসপোর্ট নবায়ন করলাম। নতুনটা এখনো হাতে পাইনি, তবে শিগগির পেয়ে যাব। অনেক বড় সম্মানের ব্যাপার এটা।’
বাংলাদেশে এসে গ্রিনিজ পেয়েছেন পাঁচ লাখ টাকার চেক। তাঁর হাতে জাতীয় দলের জার্সি তুলে দিয়েছেন প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয়। উপহার পেয়েছেন টাই ও ঘড়িও। তবে ভালোবাসার চেয়ে বড় উপহার তো হয় না! সেটা গ্রিনিজ পেয়েছেন দু হাত ভরেই। আরও একটা উদ্দেশ্যও ছিল, বার্বাডোসে নিজের স্কুলের জন্য তহবিল। সেই কাজও হয়েছে কাল।
ক্রিকেটবিশ্বে বাংলাদেশকে হাঁটি হাঁটি পা পা করার সময়ই গ্রিনিজের সঙ্গে সম্পর্কটা টুটে যায়। সেই বাংলাদেশ হাঁটতে শুরু করে এখন জোর কদমে দৌড়াচ্ছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে নিজের আবেগের বাঁধটাও খুলে গেল গ্রিনিজের, ‘আমি বিশ্বাস করতাম বাংলাদেশ একদিন শীর্ষ পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে। সেই বিশ্বাস তাদের ছিলই। একটা সময় বাংলাদেশ শুধু ওয়ানডে খেলত। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভালো করাটা কখনোই সহজ ছিল না। আমি খুশি খুব ভালোমতোই সেটা তারা করতে পেরেছে। সব সময় সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখাও সহজ নয়। আমি দেখেছি বাংলাদেশ মাথা উঁচু করেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে।’
প্রসঙ্গক্রমে কথা উঠল বাংলাদেশ ক্রিকেটে তাঁর প্রিয় খেলোয়াড় নিয়ে। তবে গ্রিনিজ এবার একটু ‘কূটনৈতিক’ হলেন, অনেক অনুরোধের পরও আলাদা করে কারও নাম বললেন না। স্বীকার করলেন, আগের মতো সেভাবে আর অনুসরণ করা হয় না। তবে মনে করিয়ে দিলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই যুগে না চাইতেই অনেক কিছু জেনে যাওয়া যায়।
যেমন জানা গেল, বাংলাদেশের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর নিয়ে তাঁর ভাবনাও। ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তো এখন যে কেউ হারাতে পারে’, কথাটা বললেন সোজাসুজিই। তবে এবার তো ক্রিকেট নিয়ে কথা বলতে আসেননি, এসেছেন পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে। ওই সময়ের ম্যানেজার গাজী আশরাফ হোসেন লিপু ও তানজীব আহসান সাদের সঙ্গে অন্তরঙ্গতা একটু বেশিই ছিল। এই দুজনের নামই বললেন আলাদা করে।
অপ্রিয় একটা প্রসঙ্গও উঠল। ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপ চলার সময়ই যেভাবে বিদায় নিতে হয়েছিল, সেটা ভুলে যাওয়ার কথা নয়। তবে অতীত ভুলিয়ে দেয় অনেক কিছুই। গ্রিনিজ যেমন বললেন, এসব ক্রিকেটে হয়ই। ‘আরও কিছুদিন থাকতে পারলে ভালো হতো, তবে সেটা নিয়ে আমার কোনো ক্ষোভ নেই’- মনে করিয়ে দিলেন। বললেন, আবার ফিরতে চান বাংলাদেশে।
এমন ফেরার দিন অবশ্য গ্রিনিজ কোনো অতৃপ্তি নিশ্চয় রাখতে চাইবেন না!
সারাবাংলা/এএম/এসএন