ঢাকা: রাজধানীর বনশ্রীতে সাড়ে সাত বছর আগে পড়ালেখায় অমনোযোগী ও প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো না করায় ক্ষুব্ধ হয়ে মায়ের হাতে খুন হয় দুই শিশু। ওই ছেলে-মেয়েকে হত্যার পর পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, বিষাক্ত খাবারে তাদের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ময়নাতদন্তে জানা যায়, শিশু দু’টিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় মা মাহফুজা মালেক জেসমিনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলাটি দায়ের করেন তাদের বাবা।
মামলা দায়েরের পর সাড়ে সাত বছর পার হলেও এখনও বিচার শেষ হয়নি। রাষ্টপক্ষ বলছেন, সাক্ষীরা যদি নিয়মিত আদালতে আসেন তাহলে মামলার বিচার দ্রুত শেষ হবে।
বর্তমানে মামলাটি ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ লুৎফুল মজীদ নয়নের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। সর্বশেষ গত ১২ সেস্টেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিন কোনো সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হননি। এজন্য আদালত আগামী ১২ অক্টোবর সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হেলাল জানান, মামলাটিতে এখন পর্যন্ত ২০ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক এবং চার্জশিট জমা দেওয়া তদন্ত কর্মকর্তা এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। আদালত আদেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে সমন পাঠাতে। সমন কার্যকরের দায়িত্ব পুলিশের। তারা সাক্ষী হাজির করতে পারছে না। সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে না আসায় তাদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আদালতকে জানিয়ে আমরা চেষ্টা করব দুই সাক্ষীকে আদালতে হাজির করার। চিকিৎসককে যদি হাজির করতে না পারি, তদন্ত কর্মকর্তাকে করবো। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করছি, তার সর্বোচ্চ সাজা হবে।’
তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী মাজহারুল ইসলাম হারুন বলেন, ‘পৃথিবীতে এমন কোনো মা নেই সজ্ঞানে তার নিজের সন্তানদের হত্যা করতে পারে। ঘটনার সময় তার হিতাহিত জ্ঞান ছিলো না। মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে আছে। কিন্তু দীর্ঘদিন সাক্ষী না আসায় বিচার ঝুলে আছে। আমরাও চাই আসামি ন্যায়বিচার পাক। আমাদের তো নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। এতে করে আমাদেরও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।’
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর রামপুরা থানাধীন বনশ্রীর বি ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর সাততলা বাড়ির চতুর্থ তলা থেকে ইশরাত জাহান অরণী (১২) ও তার ভাই আলভী আমানকে (৭) অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত পৌনে ৮টার দিকে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর দুই শিশুর বাবা-মাসহ পরিবারের অনেকেই খাদ্যে বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন।
পরে ওই ঘটনায় দুই সন্তানকে হত্যার অভিযোগ এনে মাহফুজা মালেকের বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় মামলা করেন তার স্বামী আমান উল্লাহ। পরে তাকে জিজ্ঞেসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেয় পুলিশ। পরবর্তীতে আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন আসামি মাহফুজা মালেক।
হত্যার অভিযোগে একমাত্র আসামি মাহফুজা মালেকের বিরুদ্ধে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা খিলগাঁও জোনাল টিমের পরিদর্শক লোকমান হেকিম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ছেলে-মেয়ে পড়ালেখায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো না করায় ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের হত্যা করেন মাহফুজা মালেক জেসমিন। প্রথমে তিনি তার মেয়ে নুসরাত জাহান অরণীকে গলা চেপে ও ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে ছেলে আলভী আমানকেও একই ওড়না দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় নাক ও মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।
গ্রেফতার হওয়ার তিন বছর পরে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি জামিন পান মাহফুজা মালেক। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন।