বিজ্ঞাপন

‘রোজার মাসে গাড়ির দিকে চোখ তুলে তাকাবে না ট্রাফিক পুলিশ’

May 15, 2018 | 7:50 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রতিবছরের মতো এবারও রমজানে যানজটকেই সবচেয়ে বড় সমস্যা ভাবছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি)। এ জন্য রমজান শুরুর পর সড়কে গাড়ি থামিয়ে পুলিশের তল্লাশি ও চাঁদা আদায় বন্ধ, ফুটপাতে ইফতার বিক্রি বন্ধ এবং ভারী যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপসহ বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে সিএমপি।

মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেলে রমজান উপলক্ষে পরিবহন মালিক-শ্রমিকসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সিএমপির ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মাসুদ উল হাসান বলেন, রোজার মাস নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের অনেক বদনাম থাকে। ক্রাইমে যারা দায়িত্ব পালন করেন তাদেরও অনেক বদনাম থাকে। কিন্তু অফিসিয়ালি বলছি, রোজার মাসে কোনো গাড়ির দিকে কোনো ট্রাফিক পুলিশ চোখ তুলে তাকাবে না। যদি সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকে, সিনিয়র অফিসারদের জ্ঞাতসারে সেই গাড়িতে তল্লাশি করা যাবে।

তিনি বলেন, একটা গাড়িকে ৫ টাকা জরিমানা করে দিন শেষে সরকারকে ৫০০ টাকা দেওয়ার ইচ্ছা আমার নেই। সড়কে শুধুমাত্র গাড়ি চলবে, কোথাও থামবে না-এটা আমরা নিশ্চিত করব। কিন্তু রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি কিংবা মামলা দেওয়ার ইচ্ছা আমার নেই। কিন্তু এই সুযোগে যদি লক্করঝক্কর গাড়ি রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হয়, তখন বাধ্য হয়ে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। সুতরাং সুযোগ দেবেন না কেউ। নিয়ত ভালো রেখে গাড়ি চালাতে হবে।

বিজ্ঞাপন

রমজান উপলক্ষে পরিবহন মালিক-শ্রমিক, মার্কেট-শপিংমল, বাজারসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার পর প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয় নগরীর দামপাড়ায় নগর পুলিশ লাইনে।

এতে যানজট নিরসনে নেওয়ার পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে মাসুদ উল হাসান বলেন, যানজটের জন্য আমরা পুলিশ পুরোপুরি দায়ী নয়। আমাদের দায় হয়তো ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। রাস্তা ঠিক না থাকলে আমরা কীভাবে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করব। তবে এবার চট্টগ্রাম নগরীর সড়কের পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, নগরীতে যেসব চৌরাস্তার মোড় বা টার্নিং পয়েন্ট আছে সেখানে আমরা কোনো গাড়ি দাঁড়াতে দেবো না। এতে আমাদের যানজট ৫০ শতাংশ কমে যাবে। আর ফুটপাতে কেউ ইফতার বিক্রি করতে পারবে না। ফুটপাতগুলো সম্পূর্ণভাবে মানুষের হাঁটাচলার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। স্কুল-কলেজ যদি বন্ধ ঘোষণা করা হয়, তাহলেও পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। আশা করি, কাউকে রাস্তায় ইফতার করতে হবে না।

বিজ্ঞাপন

ভারী যানবাহনের চলাচলের বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপের তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, আমদানি-রফতানি এবং জরুরি খাদ্য ছাড়া অন্য কোনো পণ্যবাহী ভারী যানবাহন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত নগরীতে প্রবেশ করতে পারবে না। আন্তঃজেলার যেসব বাস আছে অর্থাৎ আমাদের জেলার উপর দিয়ে অন্য জেলায় যাচ্ছে, তারা সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নগরীতে প্রবেশ করতে পারবে না। খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ে পণ্য নিয়ে যেসব ট্রাক আসবে সেগুলো রাত ১০টার পর ঢুকবে এবং সকাল ৮টার মধ্যে পণ্য খালাস করে চলে যাবে।

যানজট এড়াতে ইপিজেডের কারখানাগুলো নির্ধারিত সময়ের একঘন্টা আগে থেকে ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বেপজাকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

তিনি জানান, যেসব মার্কেট-শপিংমলের নিজস্ব গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই তাদের কাছাকাছি বিকল্প জায়গায় পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। প্রত্যেক মার্কেট কর্তৃপক্ষকে নিজস্ব উদ্যোগে দুই শিফটে কমিউনিটি পুলিশ নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া সড়কের যানজট নিরসনে পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে ৫০০ স্বেচ্ছাসেবী ট্রাফিক।

রমজানজুড়ে চট্টগ্রাম নগরীর নিরাপত্তায় সাত হাজার পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে বলেও জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার মাসুদ উল হাসান।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, প্রথম রোজা থেকে দশম রোজা পর্যন্ত পুলিশ দুই শিফটে দায়িত্ব পালন করবে। ট্রাফিক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় রাস্তায় যেমন থাকবে তেমনি মার্কেটের সামনেও থাকবে। টহল টিম-ফুট পেট্রলও থাকবে। একাদশ রোজা থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত আমরা ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করব। ঈদুল ফিতরের দিন ঈদ জামাত এবং বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। ঈদের পরদিন থেকে বন্ধ থাকা মার্কেট বাণিজ্যিক এলাকা এবং খালি হয়ে যাওয়া বাসাবাড়ি-আবাসিক এলাকার দিকে নজর রেখে দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ।

প্রেস ব্রিফিংয়ে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) কুসুম দেওয়ান, অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম, উপকমিশনার (সদর) শ্যামল কান্তি নাথ, উপকমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মোস্তাইন হোসেন, উপকমিশনার (উত্তর) মো. আবদুল ওয়ারিশ খানসহ জেষ্ঠ্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/আরডি/এমআই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন