বিজ্ঞাপন

‘প্রথম ৩ বছর নতুন উদ্যোক্তাদের কর মওকুফ করা উচিত’

May 16, 2018 | 8:54 am

সৈয়দ আলমাস কবীর। বাংলাদেশ অ্যসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক মেট্রোনেটের প্রধান নির্বাহী। কাজ করেছেন দেশের বড় বড় আইটি কোম্পানিতে। তৈরি পোশাকের পরই আইটি খাতকে দেশের দ্বিতীয় বড় রপ্তানি পণ্য হিসেবে এগিয়ে নিতে বেসিসকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। সেই সঙ্গে আর কয়েকদিন পরই আসছে নতুন অর্থবছরের বাজেট। এসব নিয়ে কথা বলেছেন সারাবাংলা ডট নেটের সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, সারাবাংলার জয়েন্ট নিউজ এডিটর জিমি আমির।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: ২০২১ সালের মধ্যে আইটি সেক্টর থেকে সরকার ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় করতে চায়। এক্ষেত্রে কী কী করা দরকার বলে আপনি মনে করেন?

আলমাস কবীর: এজন্য প্রথমেই আমাদের দরকার দক্ষ জনশক্তি। সরকারের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। যদি দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে পারি, তাহলে এই রফতানি বাজার আমাদের জন্য কোনো চ্যালেঞ্জ হবে না। আরেকটা ভালো খবর হচ্ছে, রফতানির বাজারে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর একটা প্রভাব পড়বে। আমি মনে করি, আমরা যখন বিদেশিদের কাছে গিয়ে বাংলাদেশের আইটি সেক্টর নিয়ে মার্কেটিং করি, তখন ওদের মনে প্রশ্ন থাকে বা সরাসরি জিজ্ঞেস করে যে তোমাদের ইন্টারনেট ফেইলিওর রেট কেমন? বা তোমাদের কানেকটিভিটি রিডানডেন্সি কেমন? এখন আমরা জোর গলায় বলতে পারব, আমাদের যদি কোনো কারণে সাবমেরিন ক্যাবল বা টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবল কেটে যায় তাহলেও এক মিনিটের জন্য পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হবো না। কারণ আমাদের স্যাটেলাইট রয়েছে। এর কারণে বাংলাদেশের প্রতি তাদের আস্থা আরো বাড়বে। তারা বাংলাদেশে আরো বেশি বেশি কাজ দিতে পারবে। এটা রাতারাতি হয়তো হবে না, তবে রপ্তানি বাড়াতে এটা সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।

সারাবাংলা: কাঙ্ক্ষিত রফতানি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে মূল চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?

বিজ্ঞাপন

আলমাস কবীর: সঠিকভাবে অবকাঠামোটা তৈরি করাও এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা থাকা দরকার। বিশেষ করে মানসম্মত ইন্টারনেট। তবে, ইন্টারনেটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট কেটে রাখাটা খুব দুঃখজনক। গত ছয়-সাত বছর ধরেই সরকারকে বলা হচ্ছে, ইন্টারনেট এখন শুধু আইটি সেক্টরের জন্য নয় সব সেক্টরের জন্যই দরকার। এখানে ১৫ শতাংশ ভ্যাট রাখার যৌক্তিকতা দেখি না। কারণ, সরকারকে সুদুরপ্রসারী চিন্তা করা উচিত। এই ১৫ শতাংশ ভ্যাট থেকে কতই বা রাজস্ব আসে! এবার বাজেটে এ বিষয়টি ছাড় দিতে বলেছি সরকারকে।

তাছাড়া, এই ইন্ডস্ট্রি অনেক ভালো করছে। তবে নীতিমালার স্পষ্টতা দরকার। আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অর্থায়ন। সব জায়গা থেকেই আমাদের কাছে জামানত চাওয়া হয়। জামানতবিহীন ঋণের ব্যবস্থা করা গেলে ভালো হয়। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে একটা থোক বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব দিয়েছিলাম, যেখান থেকে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া যাবে। তবে, মৌখিকভাবে অর্থমন্ত্রী রাজিও হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: সরকার আইটি খাতের অগ্রগতি নিয়ে ভাবছে। সেক্ষেত্রে সরকারের কাছে নতুন বাজেট প্রস্তাবনায় আপনারা কী প্রস্তাব দিয়েছেন?

আলমাস কবীর: ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা ট্যাক্স হলিডে পাচ্ছি। এজন্য সরকারের কাছে আমরা খুবই কৃতজ্ঞ। কিছু জটিলতা বা নীতিমালার অস্বচ্ছতার কারণে এই সুযোগ অনেক কোম্পানি নিতে পারছে না। আমাদের প্রতিটি কোম্পানিকে প্রতিবছর ট্যাক্স এক্সাম্পশন সাটিফিকেট দিতে হয়। প্রতিবছর এই সার্টিফিকেট নতুন করে পেতে অনেক সময় চলে যায়। আমরা এনবিআরকে একবারই এই সার্টিফিকেট দিয়ে দিতে বলেছি। বেসিসের পক্ষ থেকেই এনবিআরকে সেই কোম্পানি সম্পর্কে জানানো হবে। তাছাড়া, সরকার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের কাছ থেকে অগ্রিম ট্যাক্স কেটে নিচ্ছে। সরকারকে এটা স্পষ্ট করতে হবে, সফটওয়্যার বা আইটি ব্যবসায়ীদের জন্য এসব প্রযোজ্য হবে না। তাই, ২০২৪ সাল পর্যন্ত করের আওতামুক্ত হলেও এটার কোনো সুযোগ আমরা নিতে পারছি না।

সময়মতো ট্যাক্স না দিলে পেনাল্টি দিতে হয়, এটা সবাই জানে। কিন্তু এর পাশাপাশি ওই বছরের সঙ্গে আগের বছরের ফাইল নিয়েও এনবিআর হয়রানি করে। এসব হয়রানি বন্ধ করতে হবে। আমাদের সেক্টরের নতুন উদ্যোক্তাদের কর আদায়ের ক্ষেত্রে অন্তত তিন বছরের গ্রেস পিরিয়ড দেওয়া হোক। নতুন উদ্যোক্তাদের একটু গুছিয়ে ওঠার সময় দেওয়ার পর কর কেটে নেওয়া হোক।

সারাবাংলা: এই সেক্টরকে ডেভেলপ করতে নগদ প্রণোদনা কী চেয়েছেন?

বিজ্ঞাপন

আলমাস কবীর: এই সেক্টরের উন্নতির জন্য দরকার অবকাঠামো উন্নয়ন। দরকার গোটা দেশে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক চালু করা। ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ফাইবার অপটিক ক্যাবল নিয়ে যাওয়া দরকার। অবকাঠামো তৈরির সময় যদি এখনই ডিউটি বা ট্যাক্স বাড়িয়ে দেওয়া হয় তাহলে বিষয়টি বিপরীতমুখী হয়ে যাবে। গত দুই বাজেটে এমনটাই ঘটেছে। ফাইবার অপটিক ক্যাবলের ওপর ডিউটি বসানো হয়েছে। রাউটার বা নেটওয়ার্ক বাড়ানোর কাজে ব্যবহার হয়— এমন পণ্যের ওপর ডিউটি বসানো হয়েছে। ফায়ারওয়াল বা সিকিউরিটি পণ্যেও ৬৯ শতাংশ ডিউটি বসানো হয়েছে। তাই, এসব পণ্যের ওপর ট্যাক্স মওকুফ বা একেবারে নামিয়ে না আনলে অবকাঠামো ঠিকভাবে তৈরি হবে না। সুতরাং এই বিষয়গুলোর সুরাহা হলেই অনেক উন্নয়ন সম্ভব।

সারাবাংলা: গুগল বা ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দাতাদের কাছ থেকেই ট্যাক্স কাটার নির্দেশনা দিয়েছে। এটি আসলে কিভাবে সম্ভব?

আলমাস কবীর: আপনি সরাসরি ফেসবুক বা গুগলকে ধরতে পারছেন না। সেক্ষেত্রে তাদের কাছে যারা বিজ্ঞাপন দিচ্ছে বা বাংলাদেশের যে মার্কেটিং এজেন্সিগুলো আছে, তাদেরকে বলা হচ্ছে ফেসবুক-গুগলকে টাকা দিলে সরকারকেও দিতে হবে। যদি সরকার ট্যাক্স কাটতে চায় তাহলে দেশের এজেন্সিগুলোকে ধরা ছাড়া উপায় নাই। যদি ভবিষ্যতে গুগল বা ফেসবুক বাংলাদেশে অফিস করে, তখন তাদের ধরা যাবে। যেসব মার্কেটিং এজেন্সির মাধ্যমে বিজ্ঞাপনগুলো যায়, সেসব এজেন্সিগুলোর কাছ থেকে হিসাব নেওয়া যেতে পারে কিংবা সেলফ ডিক্লারেশন বা নিজস্ব স্বীকারোক্তিতেও তা হতে পারে। সরকারের কাছে হিসাব নাই, এসব বিজ্ঞাপনে কত টাকা যাচ্ছে। যদি সরল বিশ্বাসে কেউ বলে যে সে বছরে ১০ হাজার ডলার পাঠিয়েছে, তাহলে সেটার ওপর যে ট্যাক্স সেটা সে দিয়ে দেবে। এসব জায়গা থেকে তো কোনো ট্যাক্সই আসছে না। কিন্তু কেউ ২০ হাজার ডলার পাঠিয়ে যদি বলে সে ৫ হাজার ডলার পাঠিয়েছে, তাহলে তার কাছ থেকে পাওয়া যাবে ৫ হাজার ডলারের ওপর আরোপ করা ট্যাক্স। তাতেও অন্তত কিছু ট্যাক্স তো পাওয়া যাবে।

সারাবাংলা: নেটফ্লিক্সের মতো কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা করে দিব্যি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে আপনাদের বা সরকারের কোনো করণীয় নেই?

আলমাস কবীর: নেটফ্লিক্সের মতো প্রতিষ্ঠান যখন টাকা নিয়ে যাচ্ছে, তখন সরকারকে তা বন্ধ করে দিতে হবে। তবে, এটা বন্ধ করা না করা সরকারের বিষয়। ইন্ড্রাস্ট্রি থেকে কোনো কিছুকে বন্ধ বা রেস্ট্রিক্ট করার পক্ষে আমরা কখনোই না। আমাদের কথা হচ্ছে সবই থাকবে। কিন্তু তা বৈধ উপায়ে হতে হবে। আমরা যখন নেটফ্লিক্সকে টাকা দিচ্ছি তখন তো ক্রেডিট কার্ড থেকে দিচ্ছি, যেটা আমার ট্রাভেল কোটার ক্রেডিট কার্ড। এই কার্ড দিয়ে তো টাকা দেওয়ার কথা না। এই কার্ড দেওয়া হয়েছে দেশের বাইরে ভ্রমণের সময় ব্যবহার করার জন্য। সরকার এটাকে মনিটর করতে পারে। সরকার বলতে পারে, নেটফ্লিক্সকে দিয়েছ, তাহলে সরকারকেও দিতে হবে। আবার আপনি ফেসবুককে রেস্ট্রিক্ট করলেন যে বাংলাদেশে তাদের অফিসও থাকতে হবে, টাকাও দিতে হবে। অনেক দেশই এটা করে থাকে। আমি এটার বিপক্ষে। কেউ টাকা দেওয়া শুরু না করলে নেটফ্লিক্স এখানে কেউ দেখতেই পারবে না। বিশ্বের অনেক দেশই এটা করে। কিন্তু আমরা এটা করতে চাই না।

সারাবাংলা: বেসিস আইটি সেক্টরে একটি নামি সংগঠন। অথচ এখানেও অনিয়মের অভিযোগ শোনা যায়। অনেকেই বলেন, যারা নেতৃত্বে থাকেন তারা তাদের পছন্দমতো লোকজনকে সদস্যপদ দেন। এসব কি সত্য?

আলমাস কবীর: কেউ কোনো কমিটিতে থাকতে চান আর সেটা হয়নি— এমন কিছু আমার জানা নেই। আমাদের স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলোতে ১০ থেকে ১২ বা ৩০ জন পর্যন্ত আছে। কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই যে ৫ বা ১০ জনের বেশি থাকতে পারবে না। কেউ চাইলে সে একাধিক কমিটিতে থাকতে পারে। স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান বা কো-চেয়ারম্যান হিসেবে রিলেভেন্ট কাউকে রাখা হয়। এক্ষেত্রে অনেকের মধ্যেই অসন্তোষ থাকতে পারে যে তার সমর্থিত ব্যক্তিকে চেয়ারম্যানকে না করে অন্য কাউকে করা হয়েছে। ১০ জনকে তো আর চেয়ারম্যান করা যাবে না। আগের কোনো বিষয় নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাইনা। এবার যে স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠন করা হয়েছে, এটা আমরা স্বচ্ছভাবে করতে চাই। অনেকেই তাদের ইন্টারেস্ট জানিয়েছেন। যারা যে কমিটিতে যেতে চান তারা সেখানেই যাবেন। এ নিয়ে কোনো বাধা নেই। কেউ যদি মনে করেন, তিন মাস পর অন্য কমিটিতে যাবেন, সেখানেও যেতে পারেন। সবার জন্যই উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। চাইলে যে কেউ যেতে পারবেন। সুতরাং পরে যদি কেউ যুক্ত হতে চান তাহলে আসতে পারেন।

সারাবাংলা: দিন দিন অনলাইন পোর্টালের সংখ্যা বাড়ছে। আইটি-বেজড প্রতিষ্ঠান হিসেবে এসব পোর্টাল বেসিসের সদস্য হতে পারবে কিনা?

আলমাস কবীর: বেসিস একটি ট্রেড বডি। যে কোম্পানি আইটি নিয়ে ব্যবসা করে বা আইটি সেবা দেয় এবং যদি লাইসেন্সে এই কথাগুলো লেখা থাকে, তাহলে এই কোম্পানির মেম্বার হওয়ার জন্য আপনি যোগ্য।
সারাবাংলার সঙ্গে কথা বলার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
আলমাস কবীর: আপনাকেও ধন্যবাদ

সারাবাংলা/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন