Thursday 12 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দুদক কর্মকর্তার মৃত্যু : ওসিসহ ৪ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৬ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:৪৫ | আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:১৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে পুলিশ হেফাজতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কর্মকর্তার মৃত্যুর ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় নগরীর চান্দগাঁও থানার ওসিসহ চার পুলিশ কর্মকর্তা এবং একইসঙ্গে আরও পাঁচজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

সোমবার (১৬ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. জেবুন্নেছা বেগমের আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন মৃতের স্ত্রী ফৌজিয়া আনোয়ার।

সংশ্লিষ্ট আদালতের কর্মকর্তা দীপেন দাশ গুপ্ত সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, মামলা নথিভুক্ত করে আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্ত করে ২১ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

অভিযুক্ত নয়জন হলেন, চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ইসলাম ও পরিদর্শক (তদন্ত) মনিবুর রহমান, সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. ইউসুফ ও সোহেল রানা এবং এস এম আসাদুজ্জামান, জসিম উদ্দিন, মো. লিটন, রণি আক্তার তানিয়া ও কলি আক্তার।

আদালতে দায়ের হওয়া মামলায় পরোয়ানামূলে গত ৩ অক্টোবর রাতে নগরীর চান্দগাঁও থানা পুলিশ দুদকের অবসরপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহকে (৬৪) গ্রেফতার করে। তার বাসা নগরীর চান্দগাঁও থানার এক কিলোমিটার এলাকায়।

পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, হুমকিধমকি ও মানহানির অভিযোগে গত ২৯ আগস্ট শহীদুল্লাহসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাটি দায়ের করেছিলেন রণি আক্তার তানিয়া। পরোয়ানামূলে গ্রেফতারের পর তাকে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কক্ষে বসানো হয়। কিছুক্ষণ পর পর তিনি অসুস্থবোধ করতে থাকেন।

হৃদরোগে আক্রান্ত শহীদুল্লাহ’র মুখে এসময় ইনহেলার স্প্রে করেন তার সঙ্গে যাওয়া ছোট ভাই। কিন্তু অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে শুরু করলে ছোট ভাইয়ের চাহিদা অনুযায়ী পুলিশ শহীদুল্লাহকে বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

শহীদুল্লাহ’র স্ত্রী মামলার আরজিতে অভিযোগ করেন, জায়গা-জমি দখলের জন্য আসাদুজ্জামান, জসিম, লিটন, তানিয়া ও কলি মিলে তার স্বামীকে মিথ্যা মামলার আসামি করেন। এতে তাদের প্রত্যক্ষ সহায়তা দেন চান্দগাঁও থানার অভিযুক্ত চার পুলিশ কর্মকর্তা। এছাড়া যে আদালতে মামলা দায়ের হয়, সেই আদালতের বেঞ্চ সহকারি হারুন উর রশিদ ষড়যন্ত্র করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে শহীদুল্লাহ’র বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করায়।

তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, শহীদুল্লাহ হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন। তার বাইপাস সার্জারি হয়েছিল। এছাড়া তিনি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্টের রোগী ছিলেন। এএসআই ইউসুফ ও সোহেল রানাকে গ্রেফতারের সময় তাকে গালাগাল করেন। টেনেহিঁচড়ে তাকে থানায় নিয়ে গিয়ে জায়গা-সম্পত্তি নিয়ে বিবাদীদের সঙ্গে আপসের জন্য চাপ দেন। গ্রেফতারের সময় পরিবারের সদস্যরা প্রয়োজনীয় ওষুধ ও নাইট্রোমিন স্প্রে দিতে চাইলে সেগুলোও নিতে দেননি দুই এএসআই। মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে তার মৃত্যু ঘটানো হয়েছে।

নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন, ২০১৩ এর ১৫ (২) এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ এনেছেন মামলার বাদী।

এদিকে শহীদুল্লাহ’র মৃত্যুর পর পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে গ্রেফতারের সময় পুলিশ নির্দয় আচরণ করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছিল। পরিবারের অভিযোগমতে শহীদুল্লাহকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে বিধিবর্হিভূত কোনো কাজ করা হয়েছে কি না এবং থানায় নিয়ে যাবার পর তার সঙ্গে নিয়ম বর্হিভূত কোনো আচরণ করা হয়েছে কি না সেটা নির্ণয়ের জন্য সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর জোনের উপ কমিশনারকে প্রধান করে কমিটিতে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর) এবং বিশেষ শাখার সহকারী কমিশনারকে সদস্য করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়।

এরপর গ্রেফতার অভিযানে যাওয়া চান্দগাঁও থানার দুই এএসআই মো. ইউসুফ ও সোহেল রানাকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।

এছাড়া রণি আক্তার তানিয়ার দায়ের করা মামলায় আদালতের সমন গোপন রেখে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করানোর বিষয় তদন্তে এক সদস্যের কমিটি গঠন করেন চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম। এ অভিযোগে সংশ্লিষ্ট চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম-৬ আদালতের বেঞ্চ সহকারি হারুন উর রশিদকে বিচার সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম থেকে সরিয়ে ‘ক্যাশিয়ার’ পদে বদলি করা হয়।

সারাবাংলা/আরডি/এনইউ

টপ নিউজ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর