বিজ্ঞাপন

প্রধান বিরোধী দল সরকারের জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ: টিআইবি

May 17, 2018 | 8:50 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: জাতীয় সংসদে সরকারের জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে প্রধান বিরোধী দলের ব্যর্থতা লক্ষণীয় বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইন প্রণয়নে জনমত গ্রহণের প্রচলিত পদ্ধতিগুলোর প্রয়োগ সীমিত; সংসদীয় উন্মুক্ততা চর্চার রয়েছে ঘাটতি; আইন প্রণয়নের পেছনেও সময় ব্যয় হওয়ার হার কমে গেছে। এসব কারণে সংসদ প্রত্যাশিত মাত্রায় কার্যকর নয়।

বৃহস্পতিবার (১৭ মে) দশম জাতীয় সংসদের চতুর্দশ থেকে অষ্টাদশ অধিবেশনের কার্যক্রমের ওপর টিআইবি’র পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণভিত্তিক গবেষণা প্রতিবেদন ‘পার্লামেন্টওয়াচ’ প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সংসদকে কার্যকর করতে ১৪ দফা সুপারিশ উত্থাপন করা হয়।

টিআইবি’র গবেষণা প্রতিবেদন তৈরিতে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত দশম সংসদের চতুর্দশ থেকে অষ্টাদশ অধিবেশনের বিভিন্ন পরিমাণবাচক ও গুণবাচক তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই পাঁচটি অধিবেশনে নবম সংসদের একই অধিবেশনগুলোর তুলনায় সংসদ নেতা ও বিরোধী দলীয় নেতাসহ সাধারণ সদস্যদের উপস্থিতি বেড়েছে। এছাড়া অধিবেশনের গড় সময়ও বেড়েছে। এসব ইতিবাচক পরিবর্তন সত্ত্বেও অধিবেশনগুলোতে মন্ত্রীদের উপস্থিতি কমে গেছে বলে পাওয়া গেছে টিআইবির গবেষণায়।

বিজ্ঞাপন

টিআইবির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, পাঁচটি অধিবেশনের প্রতি কার্যদিবসের গড় কোরাম সংকট ৩০ মিনিট, নবম জাতীয় সংসদে যা ছিল ৩২ মিনিট। এছাড়া, কার্যপ্রণালী বিধি ২৭০-এর ৬ উপবিধি লঙ্ঘন করে সরকার ও বিরোধী দলীয় সদস্যদের অসংসদীয় আচরণ ও ভাষার ব্যবহার অব্যাহত রয়েছে। আবার, আইন প্রণয়নে বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যদের তুলনামূলক বেশি অংশগ্রহণ থাকলেও তাদের মতামত ও প্রস্তাব যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে অধিবেশনে উপস্থাপিত না হওয়ার চর্চা অব্যাহত রয়েছে। নারী সদস্যদের উপস্থিতি পুরুষ সদস্যের তুলনায় বেশি হলেও অধিকাংশ পর্বেই আলোচনায় নারীদের অংশ নেওয়ার হার তুলনামূলক কম ছিল।

টিআইবি’র গবেষণায় দেখা যায়, দশম সংসদের পাঁচটি অধিবেশনের সময়ে ৫০টি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির মধ্যে ৪৬টির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে চারটি কমিটির কোনো সভা এ সময় অনুষ্ঠিত হয়নি। বিধি অনুযায়ী, প্রতিমাসে ন্যূনতম একটি করে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে ৪২টি কমিটির। এর মধ্যে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সর্বোচ্চ ৫২টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

পার্লামেন্টওয়াচ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গবেষণার আওতায় থাকা দশম সংসদের পাঁচ অধিবেশনের মোট সময়ের ১৩ শতাংশ ব্যয় হয়েছে কোরাম সংকটের কারণে। দিনে গড়ে ৩০ মিনিট হিসাবে এর মোট সময় ৩৮ ঘণ্টা তিন মিনিট, এর অর্থমূল্য ৩৭ কোটি ৩৬ লাখ ৯৫ হাজার ২৩৮ টাকা। তবে পাঁচটি অধিবেশনের কোনোটিতেই প্রধান বা অন্য বিরোধী দলের সদস্যরা ওয়াকআউট ও সংসদ বর্জন করেননি।

পাঁচটি অধিবেশনে পাস হওয়া ২৪টি সরকারি বিলের ২১টির ওপর জনমত যাচাইয়ের সব প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। প্রতিটি বিল পাস হতে গড়ে সময় ব্যয় হয় মাত্র ৩৫ মিনিট, যেখানে ভারতের লোকসভায় প্রতিটি বিল পাসের গড় সময় ২ ঘণ্টা ২৩ মিনিট।

সংসদ অধিবেশনে অসংসদীয় ভাষার ব্যবহার ও কোরাম সংকট অব্যাহত থাকার বিষয়কে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সুশাসন ও জাবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি প্রতিরোধে সংসদের প্রত্যাশিত ভূমিকা পালনে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। সরকারি ও বিরোধী উভয় দলই এ ব্যর্থতার জন্য দায়ী।’

টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রধান প্রতিষ্ঠান সংসদ। মূল কাজ আইন প্রণয়ন হলেও প্রশংসা, নিন্দা ও কটূবাক্য ব্যবহারে এই সংসদের বেশিরভাগ সময় ব্যয়িত হচ্ছে।’ আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সংসদে নিয়মিত উপস্থাপিত না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশ ও দেশের সব সম্পদের মালিক জনগণ। দেশ পরিচালনার দায়িত্ব জনগণ যাদের ওপর অর্পণ করেন, তাদের উচিত সততা ও দক্ষতার সাথে দেশ পরিচালনা করা।’

বিজ্ঞাপন

অসংসদীয় ভাষার ব্যবহার বন্ধ করতে বিধি অনুযায়ী স্পিকারের আরো জোরালো ভূমিকা নেওয়া; সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন; রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চুক্তিসমূহ সংসদে উপস্থাপন; সংরক্ষিত আসনসহ সব নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের হলফনামা সংসদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ ও নিয়মিত হালনাগাদসহ প্রতিবেদনে মোট ১৪ দফা সুপারিশ করে টিআইবি।

সংস্থার ধানমন্ডি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি’র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং রিসার্চ ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন