বিজ্ঞাপন

প্রিয় নবীর দেশে রমজান

May 21, 2018 | 5:08 pm

।। জহির উদ্দিন বাবর।।

বিজ্ঞাপন

রমজানে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে সর্বত্র। আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, সামাজিকতা ও ব্যক্তিগত জীবনে রমজান নিয়ে আসে অনেক পরিবর্তন। এই মাসের আবহ আমাদের সবাইকে ছুঁয়ে যায়। মুসলিম বিশ্বের সবখানেই রমজানে কমবেশি পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে। তবে ইসলামের সুতিকাগার, রাসুল সা.-এর স্মৃতিবিজড়িত পূণ্যভূমি মক্কা-মদিনায় রমজানের আবহটা অন্যরকম।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা, বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর এবং হারামাইনের চিত্র ২৪ ঘণ্টা সম্প্রচারের কারণে আমরা দূর থেকেও সহজেই সেই আবহটা অনুভব করি।

নবীর সময়ে পবিত্র রমজান মাসে মক্কা-মদিনার অলিতে-গলিতে যে জান্নাতী সুবাস বইত, অপার্থিব যে আবহ ছুঁয়ে যেত প্রতিটি মুমিনের অন্তর; সেই সুবাস ও আবহ আজও মক্কা-মদিনায় অনুভব করা যায়। মুসলিম বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে মক্কা-মদিনার রমজান উদযাপনের চিত্রটা ভিন্নরকম। এ মাসের জন্য তারা দীর্ঘ প্রতীক্ষায় থাকেন। রমজানের বাঁকা চাঁদ উদয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুতেই যেন ফুটে ওঠে পরিবর্তনের স্পষ্ট ছাপ। রাষ্ট্রীয়ভাবেও এ মাসটি উদযাপনের জন্য থাকে নানা আয়োজন। রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় সবার আন্তরিকতা চোখে পড়ার মতো।

বিজ্ঞাপন

মসজিদুল হারাম, পবিত্র বায়তুল্লাহর রমজানের চিত্রটা কতই না মোহনীয় ও উপভোগ্য!

রমজান উপলক্ষে লাখ লাখ মুমিন বান্দা ভিড় জমায় আল্লাহর ঘরে। আল্লাহকে পাওয়ার ব্যাকুলতায় কাতর প্রতিটি মুমিন সর্বসত্তা বিলীন করে দেন। রমজানে পবিত্র ওমরা পালনের উদ্দেশে ছুটে যাওয়া বান্দারা তাদের একটি মুহূর্তও অনর্থক কাটতে দেন না। পুরো রমজান মসজিদে হারামে ইতেকাফের জন্য বিশ্বের আনাচে-কানাচে থেকে অগণিত মুমিন বান্দা এখানে আসেন। কেউ তাওয়াফ করছেন, কেউ কোরআন তেলাওয়াতে নিমগ্ন, কেউ লুটিয়ে পড়ছেন স্রষ্টার কুদরতি পায়ে।

নামাজের ওয়াক্ত হওয়ার আগেই মসজিদে হারাম কানায় কানায় ভরে যায়। নামাজের জন্য অপেক্ষারত মুসল্লিদের সেই মোহনীয় দৃশ্যটি দেখে যেন ফেরেশতারাও ঈর্ষা করে!

বিজ্ঞাপন

তারাবির নামাজের জন্য মুসল্লিদের ভিড় আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বহু দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা ছুটে আসেন মসজিদে হারামে তারাবি আদায়ের জন্য। আর মসজিদে হারামের তারাবি মানেই অপূর্ব স্বাদ আর অবর্ণনীয় অভিব্যক্তির। সুমিষ্ট তেলাওয়াত শুনলে মনে হয়, পুণ্যভূমিতে এখনই যেন নাজিল হচ্ছে পবিত্র কোরআন! স্রষ্টার রহমতের অবারিত স্রোতধারা যেন বর্ষিত হচ্ছে প্রতিটি মুসল্লির ওপর! এজন্য তিন ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে থেকেও কারও মধ্যে নেই ক্লান্তি বা অস্বস্তির ছিটেফোঁটা। মসজিদে নববীতেও একই দৃশ্য। রাসুলুল্লাহ সা.-এর রওজা মোবারকে হাজিরা দিতে আল্লাহপ্রেমিক বান্দারা এখানেও ছুটে আসেন। রাসুলের আধ্যাত্মিক পরশে স্নাত হতে আকুল হয়ে উঠেন তারা।

রমজানে মক্কা-মদিনার ইফতারের মুহূর্তের দৃশ্যটা আরও চমৎকার, আরও মনোমুগ্ধকর! প্রতিটি মসজিদে রোজাদারদের জন্য রাজকীয় ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়। মরুভূমির নির্জন রাস্তায় পর্যন্ত ইফতার নিয়ে বসে থাকে লোকেরা। বিভিন্ন কোম্পানি ও ধনকুবের স্ব-উদ্যোগে আঞ্জাম দেন এই ধরনের ব্যবস্থাপনা। রাস্তা থেকে ধরে ধরে এনে লোকজনকে ইফতার করিয়ে তারা পরম তৃপ্তি ভোগ করেন। ইফতারের সময় হারাম শরিফে একজন অন্যজনকে প্রাধান্য দেওয়া কিংবা জোর করে ইফতারে শরিক করানো দেখে মনে হয় যেন হাজার হাজার বছর ধরে বংশ পরম্পরায় ধারণ করে আসা আতিথেয়তার গুণটি আরবরা এখনও ধরে রেখেছে। এই মাসে আরবরা অকৃপণভাবে দুই হাত ভরে দান-সদকা করে থাকেন। কিন্তু কখনও মাইকে ঘোষণা দিয়ে প্রদর্শনীমূলকভাবে লাইন ধরিয়ে দান সামগ্রী বিতরণ করতে দেখা যায় না তাদের। সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণে আল্লাহর পথে গোপন দানের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেন তারা।

প্রিয়নবীর দেশের মানুষগুলো রমজানের ঐতিহ্যময় আবহ ধরে রেখেছে শত শত বছরজুড়ে। সেই আবহ থেকে সহজেই টের পাওয়া যায় প্রায় দেড় হাজার বছর আগে কেমন কাটতো মক্কা-মদিনার রমজান। রাসুল সা. ও সাহাবায়ে কেরাম কীভাবে উদযাপন করতেন পবিত্র এই মাস। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই মাস উদযাপনের ধরন পাল্টেছে। তবে প্রিয়নবীর নুরানি সেই আবহও আজও টের পাওয়া যায় মক্কা-মদিনার অলিতে-গলিতে। সেই আবহে সিক্ত করুক প্রতিটি মুমিনের অন্তর সেটাই প্রভুর দরবারে প্রার্থনা আমাদের।

সারাবাংলা/একে

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন