বিজ্ঞাপন

ভ্যাটেই ভরসা সরকারের

May 29, 2018 | 9:05 am

।। জিমি আমির, জয়েন্ট নিউজ এডিটর।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: আসছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটেও রাজস্ব বোর্ডের অধীনে আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে ধরা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটকেই। ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে নতুন অর্থবছরের বাজেট পরিকল্পনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে আয়কর। আয়কর থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, ৯৮ হাজার কোটি টাকা। আর কাস্টমস ডিউটি বা আমদানি-রপ্তানি শুল্ক থেকে সরকার আয় করতে চায় ৮৩ হাজার কোটি টাকা।

সব মিলিয়ে রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, ২ লাখ ৯১ হাজার কোটি টাকা। আর নতুন বাজেটের জন্য সরকার মোট রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা।

রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে আমদানি শুল্কই ছিল এক সময় রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাত। নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে রাজস্ব আদায়ের নতুন হাতিয়ার হিসাবে রাজস্ব বোর্ড চালু করে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট। ধীরে ধীরে এই পরোক্ষ করটিই দেশের রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাতে পরিণত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

যদিও পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই রাজস্ব আদায়ের প্রধান উৎস হচ্ছে প্রত্যক্ষ কর বা আয়কর। কিন্তু বাংলাদেশে গত চার পাঁচ বছর ধরেই ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায় হচ্ছে বেশি। সেই বাস্তবতা থেকেই গত দুই বছরে সরকারও ভ্যাট থেকেই রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বেশি ধরছে। নতুন নতুন পণ্য বাছাই করে তাতে বসানো হচ্ছে ভ্যাট।

২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত আয়কর খাতের লক্ষ্যমাত্রা বেশি ছিল। ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকেই সরকার লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়েছে ভ্যাটে।

সেই ধারাবাহিকতায় আগামী বাজেটেও ভ্যাটের ওপরই বড় আয়ের ভরসা করতে চায় সরকার। তবে, আদায় পরিস্থিতি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের নানা সমালোচনা আছে বরাবরই।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিশ্চয়ই কোনো একটি ভিত্তি ধরে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। অর্থাৎ, বাস্তবতার আলোকেই আদায়ের সঠিক পথ বিবেচনা করেই সরকার এটি নির্ধারণ করেছে। তবে, গত কয়েকবছর ধরে আদায়ের যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, তাতে এই লক্ষ্যমাত্রা বেশি। ধারাবাহিকভাবে দেখা যাচ্ছে বছর শেষে ১৮, ১৯ বা ২০ শতাংশের বেশি রাজস্ব আদায় হচ্ছে না কিন্তু সার্বিক লক্ষ্যমাত্রা যখন ধরা হচ্ছে ৩৫ শতাংশ তখনই তা অবাস্তব হয়ে যায়। তাছাড়া, লক্ষ্যমাত্রা সঠিকভাবে নির্ধারণ করলে কর্মকর্তাদের মধ্যেও আত্মবিশ্বাস থাকে।

তিনি বলেন, সরকার আগে খরচ হিসেব করে পরে আয় নির্ধারণ করে। তখন বাজেট বাস্তবায়ন সঠিকভাবে না হলে তা সংশোধন করতে হয়। অথচ বাজেট পাশের আগেই সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে পরে আর সংশোধন করার দরকার হয় না। সমালোচনাও এড়ানো সম্ভব হয়।

এনবিআরের সাবেক সদস্য (করনীতি) আমিনুর রহমান বলেন, বেশিরভাগ সময়ই সরকার একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সেখানে পৌঁছাতে চায়। পৌছাতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। তবে, প্রবৃদ্ধি বাড়ছে আগের তুলনায়। তার মানে হচ্ছে, সরকার ধীরে ধীরে টার্গেট পূরণে এগুচ্ছে। এ বছরটা নির্বাচনের, তাই বরাদ্দ দেওয়া অনেক প্রকল্প থেকেও সরকারের ট্যাক্স আসবে। তবে, নিশ্চয়ই সরকার আদায়ের ব্যবস্থা করেই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। তা যদি বাস্তবসম্মত হয় তাহলে এই লক্ষ্যমাত্রা ঠিকই আছে।

এনবিআরের হিসাবে, গত পাঁচ অর্থবছরে গড়ে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১৪ দশমিক ২৮ শতাংশ। গত তিন অর্থবছরে ১৫ দশমিক ২৯ শতাংশ, আর সর্বশেষ গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়েছিল প্রায় ১৯ শতাংশ। এই বাস্তবতার পরও গত তিন চার অর্থবছর জুড়েই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশের মধ্যে ধরা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

গত বাজেটে প্রায় ৩৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি ধরে সরকার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। টাকার অংকে যার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯শ ৯১ কোটি টাকা। এরই মধ্যে গত আট মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে ৪৯ শতাংশ। গত বছর একই সময়ে তা ছিল প্রায় ৫২ শতাংশ।

নতুন অর্থবছরের বাজেটের আয় ব্যয়ের হিসাব নিয়ে চলছে সরকারের শেষ মুহুর্তের ঘষামাজা। সরকারের আয়ের প্রধান উৎস রাজস্ব বোর্ড তাদের হিসেব শেষ করে তা তুলে দেবেন অর্থমন্ত্রীর কাছে। এরপর অর্থমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সাথে প্রয়োজনীয় আলোচনা শেষ করেই তা চূড়ান্ত করবেন।

সারাবাংলা/জেএএম/এমএইচ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন