বিজ্ঞাপন

মিয়ানমার সীমান্তে ইয়াবা কারখানা: পাচারে জড়িত প্রভাবশালীরা

May 29, 2018 | 11:44 am

।। ওমর ফারুক হিরু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

কক্সবাজার: চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে গত ৫ দিনে কক্সবাজারে চারজন মাদক ব্যবসায়ী মারা গেছেন। মাদকের বিরুদ্ধে প্রশাসন জিরো টলারেন্সে নীতি গ্রহণ করলেও, মাদক দ্রব্য বন্ধে আদৌ তা কতটুকু ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ অনেকেই । তারা বলছেন, যতদিন পর্যন্ত মিয়ানমারের কারখানা থেকে ইয়াবা আসা বন্ধ না হবে, ততদিন চাঙ্গা থাকবে মাদক ব্যবসা।

এ ব্যাপারে কক্সবাজারের র‌্যাব- ৭ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন সারাবাংলােকে জানান, গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে, মিয়ানমার সীমান্তে বেশ কয়েকটি ইয়াবা কারখানা রয়েছে। ওইসব কারখানা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত খুবই কঠিন হয়ে পড়বে ইয়াবা পাচার বন্ধ করা। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও জানানো হয়েছে।

টেননাফস্থ ২ বিজিবি অধিনায়ক ল্যাফটেনেন্ট কর্নেল আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমরা নিশ্চিত ওই পারে বেশকিছু ইয়াবা কারখানা রয়েছে। এসব ইয়াবা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ঢুকছে। এই ইয়াবা চালানের সাথে জড়িত রয়েছে অনেক বড় মাপের লোকজন। যারা দুই পারেই অবস্থান করছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও জানান, নদীর ওই পারে অর্থাৎ মিয়ানমারে যে ইয়াবা ১৫ থেকে ২০ টাকায় পাওয়া যায় তা এই পারে বিক্রি হয় ১০০ টাকা বা তারও বেশি। তাই লোভে পড়ে লোকজন অনায়াসে এ অপকর্ম করছে।

এসব কীভাবে বন্ধ করা যায় এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইয়াবা বন্ধ করতে হলে অবশ্যই মিয়ানমারের সহযোগিতা প্রয়োজন। তবে কিছু দিন আগে বিজিপি’র সঙ্গে পতাকা বৈঠকের সময় তারা আশ্বস্ত করেছেন, ইয়াবা পাচার বন্ধে তারা যৌথভাবে কাজ করবে।

সংশ্লিষ্টরা বোলছেন, মিয়ানমার সীমান্ত থেকে শুরু করে কক্সবাজার শহরসহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিদিন কোথাও না কোথায় ঘটছে মাদক পাচারের ঘটনা। হয় প্রশাসনের হাতে মাদকসহ পাচারকারী আটক হচ্ছে; নয়ত জব্দ হচ্ছে মাদক। মাদকের এই আগ্রাসনে চাপের মুখে রয়েছে পুরো দেশ। মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী লোকজন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা তালিকায় মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে এই জেলার রাজনীতিবিদ, প্রশাসনের লোকজন, এমনকি গণমাধ্যমকর্মীও ।

বিজ্ঞাপন

এদিকে ,বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে দায়িত্বরত  বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর একজন কর্মকর্তা জানান, মিয়ানমারের বিশাল সীমান্তের কোনো না কোনো পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা ঢুকছে এটা ঠিক। তবে এ ব্যাপারে প্রশাসনও সক্রিয় রয়েছে। এই কারখানাগুলো মিয়ানমারের বন্ধ করা উচিত। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে দু’দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে বৈঠক হলেও, মিয়ানমার দৃশ্যমান তেমন কিছুই করেনি।

টেকনাফ সীমান্তের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের যুব সমাজকে ধ্বংস করার জন্য মিয়ানমার সীমান্তে ৪০টি ইয়াবার কারখানা গড়ে তুলেছে। আর প্রতিদিন টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির দুর্গম সীমান্তের ৩৮টি পয়েন্টে দিয়ে ঢুকছে ইয়াবার চালান। অথচ মিয়ানমারে এই মাদকের কোনো বিস্তার নেই। টাকার লোভ এবং বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য মিয়ানমার এ কাজ করছে।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী জনান, তার জানা মতে মিয়ানমার সীমান্তে থাকা ইয়াবা কারখানা থেকে ইয়াবা আসা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এ দেশে ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ হবে না। তিনি আরও জানান, সীমান্তের ৭০ কিলোমিটার পথের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা ঢুকছে। তাই ওসব পথ বন্ধ করতে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, মাদকবিরোধী অভিযানে বন্দুকযুদ্ধের মাধ্যমে যে অভিযান চলছে তা আদৌ কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এই কৌশল আগেও নেওয়া হয়েছে কিন্তু ফলাফল বেশি ভাল হয়নি। তাই আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করে হোক অথবা দুই দেশের সীমান্তবাহিনীর মধ্য আলোচনার মাধ্যমে হোক- মিয়ানমারকে এ ধরনের মাদক দ্রব্য তৈরি থেকে বিরত থাকতে হবে । ইয়াবা পাচার বন্ধ করতে হবে।

স্থানীয়ে কলেজ শিক্ষক সাইফুর রহমান বলেন, মূল যে জায়গা  থেকে ইয়াবা আসছে ওই জায়গা বন্ধ করতে হবে। সীমান্ত পেরিয়ে কোনো মাদকদ্রব্য বাংলাদেশে পৌঁছালে তা কোনো অভিযানের মাধ্যমে বন্ধ করা যাবে না। তাই স্থায়ী সমাধান হল ওই পথ দিয়ে মাদক আসা বন্ধ করতে হবে। মাদকের জন্য সীমান্তকে শতভাগ নিশ্ছিদ্র করতে হবে। আর এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা যত প্রভাবশালীই হোক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

সারাবাংলা/আইএ/জেডএফ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন