বিজ্ঞাপন

অবসরে যাওয়া জ্বালানি সচিবের দুর্নীতি ফাঁস, দুদকে তলব

May 29, 2018 | 9:52 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: জ্বালানি খাতের বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সদ্য অবসরে যাওয়া জ্বালানি সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরীকে তলব করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একইসাথে ডাকা হয়েছে বাপেক্সের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তাকেও।

অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি সান্তোসের সঙ্গে বাপেক্স যৌথভাবে সমুদ্রে একটি ব্লকে গ্যাস উত্তোলনের কাজ করবে— এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে নাজিম উদ্দিন চৌধুরীর ভূমিকা ছিল বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে। জানা গেছে, এই সচিব ও তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন বাপেক্স কর্মকর্তার অনিয়ম ও দুর্নীতির ফলে দেশ এখন ২৬২ কোটি টাকা দেনার দায়ে পড়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (৩০ মে) দুর্নীতি দমন কমিশনে হাজির হতে বলা হয়েছে বাপেক্সের ওই কর্মকর্তাদের। যেকোনো দিন হাজির হতে বলা হবে সদ্য সাবেক জ্বালানি সচিবকেও।

দুর্নীতি দমন কমিশনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, গ্যাস পাওয়া যাবে না জেনেও গ্যাস অনুসন্ধানের নামে ২৩০ কোটি টাকা লুটপাটের ঘটনা একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশের সূত্র ধরেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে ওই কর্মকর্তাদের।

বিজ্ঞাপন

দুদকের ওই কর্মকর্তা জানান, দেশের সমুদ্রের ১৬ নম্বর ব্লকে মগনামা-২-এ গ্যাস পাওয়া যাবে না জেনেও গ্যাস উত্তোলনের জন্য অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি সান্তোসের সঙ্গে যৌথভাবে বাপেক্সকে এই কাজ দেয় সরকারের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। কাজ শুরুর অর্থাৎ কূপ খননের ১৩ দিনের মাথায় সান্তোস জানায়, এই ক্ষেত্রে কোনো গ্যাস নেই। তবে ততদিনে বহুজাতিক এই কোম্পানিটি সরকারের ১২৯ কোটি টাকা নিয়ে নেয়।

সাগরের ১৬ নম্বর ব্লকে সান্তোসের সঙ্গে উৎপাদন বণ্টন চুক্তির (পিএসসি) মেয়াদ ২০১৪ সালে শেষ হলেও দুই বছর পর ২০১৬ সালে বাপেক্সের সঙ্গে যৌথভাবে মগনামা-২ গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য প্রস্তাব দেয় সান্তোস। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো কোম্পানির সঙ্গে একবার পিএসসি হয়ে গেলে সেই পিএসপি সংশোধন করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু সান্তোসের ক্ষেত্রে এ শর্ত মানা হয়নি। ওই সময় সদ্য অবসরে যাওয়া বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি বিভাগের সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী বাপেক্সেরও চেয়ারম্যান ছিলেন।

এদিকে, এই কাজের জন্য সান্তোসকে অর্থ দিতে ২ শতাংশ সুদে ১২ বছর মেয়াদি ঋণ নেয় বাপেক্স। সুদে-আসলে দেনার পরিমাণ এখন ২৬২ কোটি টাকা। সূত্র জানায়, এই ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রেও ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। পেট্রোবাংলা, তিতাস গ্যাস, কর্ণফুলী গ্যাস, বাখরাবাদ গ্যাস ও বাপেক্স নিজস্ব তহবিল থেকে ঋণ আকারে অর্থ দেয় বাপেক্সকে, যা নিয়ম বহির্ভূত। কূপ খননের জন্য বাপেক্সকে ঋণ আকারে অর্থ দেওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠান প্রধানরাও এ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত।

বিজ্ঞাপন

বিষয়টি নিয়ে ভোক্তা অধিকার সংগঠন বাংলাদেশ কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ‘বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের অনিয়ম উদ্ঘাটন’ নামে গঠিত একটি কমিশনের খসড়া প্রতিবেদনেও এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ছয় সদস্যের এই কমিশনের সভাপতি লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, সদস্য অধ্যাপক এম শামসুল আলম, পদার্থবিদ অধ্যাপক সুশান্ত কুমার দাস, অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন ও ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক বদরূল ইমাম।

কমিশনের খসড়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নাইকো চুক্তির মতো সান্তোস চুক্তিতে দুর্নীতি হয়েছে। নাইকো চুক্তিতে সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বিএনপি নেতা এ কে এম মোশাররফ হোসেনের মুখ্য ভূমিকা ছিল। একই রকমভাবে সান্তোস চুক্তিতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন সাবেক জ্বালানি সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে সান্তোসের দেওয়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ১৬ নম্বর ব্লকের মগনামা-২-এ মোট ১০টি স্তরে সম্ভাব্য গ্যাস রয়েছে ১ হাজার ৬০ দশমিক ৮ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ)। এ মজুতে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের পরিমাণ ৭৩৬ দশমিক ২ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। প্রস্তাবে আরো বলা হয়, এর আগে সান্তোস মগনামা-১ কূপ খনন করে গ্যাস পায়নি। সেই কূপ খননের অর্থও বাপেক্সকে দিতে হবে। এর পরিমাণ ১২৯ কোটি টাকা।

সান্তোসের এ প্রস্তাব বিবেচনা করতে ৭ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে বাপেক্স। ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সান্তোস মগনামা-২ গ্যাসের মজুতের যে হিসাব দিয়েছে, তা ঠিক নয়। সেখানে বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য গ্যাস নেই। এর আগে সান্তোস যেখানে কূপ খনন করে গ্যাস পায়নি, সেখান থেকে মাত্র ২ হাজার ২০০ মিটার উত্তর-পশ্চিমে মগনামা-২ কূপের অবস্থান। এখানে গ্যাস থাকার বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত নেই। বাপেক্স যদি সেখানে কূপ খনন করতে যায়, তাহলে সুদে-আসলে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক ক্ষতি হবে ২৬২ কোটি টাকা।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জিএস/এইচএ/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন