বিজ্ঞাপন

দিনভর ঝড়-বৃষ্টিতে রাজধানীতে বিদ্যুৎ বিভ্রাট

May 27, 2024 | 11:42 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রবল ঘুর্ণিঝড় রেমাল উপকূল অতিক্রম করে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে বেশ আগে। কিন্তু এর প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। লাগাতার বৃষ্টি আর দমকা হাওয়া রাজধানীর বেশকিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় দীর্ঘ লোডশেডিং দেখা গেছে। আবার কোনো কোনো এলাকায় সকাল থেকেই বিদ্যুৎ নেই। রাজধানীর বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃষ্টি কমলে বিতরণ ব্যবস্থা ফের স্বাভাবিক হবে।

বিজ্ঞাপন

আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী রোববার (২৬ মে) মধ্যরাতে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল। সকালে ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। কিন্তু এর প্রভাবে সোমবার (২৭ মে) ভোর থেকে লাগাতার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে রয়েছে দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় ১৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। এই পরিস্থিতির মধ্যে রাজধানীর বেশকিছু এলাকায় লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে।

বাড্ডার বাসিন্দা মোহাম্মদ আশিকুর রহমান জানান, চার ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ নেই তার এলাকায়। হঠাৎ করে লোডশেডিংয়ে একরকম বিপাকে পড়েছেন। উত্তরা থেকে কাজী জাহান আরা জানান, সকাল থেকে ১২ থেকে ১৩ বার বিদ্যুৎ গেছে। শেখ সিরাজুম মুনিরা নীরা জানিয়েছেন, সকাল থেকে আদাবরে ব্যাপক লোডশেডিং হয়েছে। যদিও দুপুরের পর থেকে স্বাভাবিক।

এদিকে, পুরান ঢাকার ফাল্গুনি রশীদ জানিয়েছেন, ৩০ থেকে ৪০ মিনিট বিদ্যুৎ ছিল না। একই ঘটনা ঘটেছে বারিধারাতে তার অফিসেও। আর মলয় সাহা জানিয়েছেন, তার বাসা তেজকুনি পাড়ায় তিন থেকে চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ নেই। লোডশেডিংয়ের কথা জানিয়েছেন উন্নয়নকর্মী তানবীর সিদ্দিকীও। মহানগর হাউজিংয়ে লোডশেডিংয়ের খবর দিয়েছেন মোহসীন আশরাফ।

বিজ্ঞাপন

আর রাজনীন ফারজানা বলেন, ‘সকাল থেকে বাসাবো এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। দুপুরের পর থেকে যাওয়া-আসার মধ্যে রয়েছে।’ একই কথা জানিয়েছেন অ্যালিফ্যান্ট রোডের সাইফুল জুয়েল। খিঁলগাও এলাকায়ও ব্যাপক লোডশেডিং ছিলো বলে জানিয়েছেন মোমিনুল ইসলাম লিটন। মুগদাতে বিদ্যুৎ না থাকার কথা জানিয়েছেন হাসান শান্তনু। হাসিবুর রহমান জানিয়েছেন মিরপুর ১৪ নম্বরে লোডশেডিংয়ের কথা।

এ ছাড়াও, রাজধানীর মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, শেওড়াপাড়া, গোপীবাগ, মানিকনগর, টিকাটুলি, পুরান ঢাকার কিছু স্থানে ব্যাপক লোডশেডিং ছিল সারাদিন।

বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, ঝড়ে কোনো কোনো এলাকায় গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বৃষ্টি কমলে লাইন মেরামতের কাজ শুরু হবে। তখন বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে আসবে। যদিও কোনো কোনো জায়গায় ইতোমধ্যে কাজ শুরুর তথ্য দিয়েছেন তারা। যেসব এলাকায় মেরামতের কাজ চলছে সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, ঢাকার দুই বিতরণ কোম্পানির মধ্যে ডিপিডিসির অধীনে থাকা এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ১ হাজার ৫৭ মেগাওয়াট। ওই এলাকায় তুলনামূলক লোডশেডিং নেই। বিদ্যুৎ বন্ধ রয়েছে মূলত সরবরাহ লাইন মেরামতের জন্য। ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) সূত্র জানিয়েছে, এই কোম্পানির অধীনে তাদের এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৭৯৫ মেগাওয়াট। চাহিদার সমান বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ডিপিডিসি) পরিচালক (অপারেশন) শফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ রয়েছে। যে লোডশেডিংয়ের কথা বলা হচ্ছে তা মূলত ঝড়ের কারণে সরবরাহ লাইন ছিঁড়ে যাওয়ার কারণে। সেগুলো মেরামতের কাজ চলছে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে মেরামতে সময় লাগছে। ঝড়-বৃষ্টি কমলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা করছি।’

একই কথা জানিয়েছেন ডেসকোর চিফ ইঞ্জিনিয়ার মফিজুল ইসলাম ভুইয়া। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বহু এলাকায় ঝড়ে গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে গেছে, বহু এলাকায় ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে। আমাদের মোট ফিডারের সংখ্যা ৫৮৭টি। এরমধ্যে মেরামতের জন্য বন্ধ আছে প্রায় ২০-২৫টি ফিডার। ঝড় কমলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় দুর্গত এলাকার প্রায় দেড় কোটি মানুষ এখনো বিদ্যুৎহীন। ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ওইসব এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখেছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, কোনো কোনো এলাকা ১৫ থেকে ২০ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে। ঝড়ের কারণে এখন পর্যন্ত ৮৫ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন