বিজ্ঞাপন

‘পরিচালকের উপর প্রযোজকদের আস্থা রাখতে হবে’

May 31, 2018 | 8:16 pm

বুয়েটে পড়ার সময়েই আশিকুর রহমানের মাথায় ঢুকে পড়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের পোকা। পড়াশোনা শেষ করে একদমই সময় নষ্ট করেননি তিনি, হাত দেন সিনেমার কাজে। তার নির্মিত প্রথম ছবিটির নাম কিস্তিমাত। শুভ-আঁচল জুটির এ ছবি সে-সময় পায় দারুণ ব্যবসায়িক সফলতা। এরপর আশিক নির্মাণ করেন গ্যাংস্টার রিটার্ণমুসাফির। ছবি দুটি নির্মাণে পরিচালকের মুন্সিয়ানার প্রশংসা করেন সবাই। সুন্দর গল্প, চোখ ধাঁধানো শট এবং হলিউডি ধাঁচের অ্যাকশনের সঙ্গে বাংলা সিনেমাকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য তিনি রাতারাতি পেয়ে যান তারকার তকমা।

আসছে ঈদে মুক্তি পেতে যাচ্ছে আশিকুর রহমানের ছবি সুপার হিরো। তবে এই আলোচনায় সুপার হিরোএসেছে বেশ অল্প করেই। গত ফেব্রুয়ারিতে নেয়া এ সাক্ষাৎকারটিতে আশিক আলো ফেলেছেন তার আটকে থাকা সিনেমা অপারেশন অগ্নিপথএবং বাংলা চলচ্চিত্রের ভেতরকার গলিপথে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সারাবাংলার স্টাফ করেসপন্ডেন্ট তুহিন সাইফুল


  • অপারেশন অগ্নিপথ আটকে আছে কেন?

‘অপারেশন অগ্নিপথ’ আসলে আটকে আছে এমন না। মাঝখানে আমাদের অস্ট্রেলিয়া পার্টের শুটিং করে বাংলাদেশ পার্টের প্রস্তুতি নেই। ওই সময় দেখা যায় ইন্ডাস্ট্রির কিছু সমস্যার কারণে শাকিব খান নিষিদ্ধ হন। আর ওই সময়টায় শুটিং করার শিডিউল ছিলো আমাদের। কিন্তু শাকিব ভাই নিষিদ্ধ থাকায় যেটা হয়েছে যেমন আমি পরিচালক সমিতির মেম্বার বা আমি যাদেরকে নিয়ে কাজ করবো তারা বিভিন্ন সমিতির মেম্বার, তো সিদ্ধান্ত ছিল যে কেউ শাকিব ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করবে না, একারণে আমরা তখন কাজ করতে পারিনি। কিন্তু আমরা পরিচালক সমিতি বরাবর আবেদন করেছিলাম, চলচ্চিত্র পরিবারের কাছেও আবেদন করে বলেছিলাম যে আমরা শুট করতে চাই কারণ আমাদের মুভি বা পরিচালকের তো কোন দোষ নেই। মুভিটা শুরু করা হয়েছিল অনেক আগে। এটা পিওর দেশি একটা মুভি, এখানে বিদেশি কিছু নাই, যৌথ প্রযোজনাও না, তো আমরা মুভিটা শুট করতে চেয়েছিলাম যেহেতু আমাদের ফিফটি পারসেন্ট অলরেডি শুট হয়ে আছে। কিন্তু সেই সময় আসলে যেকারণেই হোক যারা ছিলেন তারা সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন যে না শাকিবের সঙ্গে শুটিং করা যাবে না। এটা হচ্ছে মূল ব্যাপার। শুটিং না করার কারণে যেটা হয়েছে, যেহেতু আমাদের দুটো ক্রুশিয়াল শিডিউল মেলানোর দরকার পড়ে একটা হচ্ছে শাকিব ভাইয়ের শিডিউল আরেকটা হচ্ছে আমার শিডিউল। আমি যেহেতু এখন দেশের বাইরে থাকি আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকি তো আমার আসা যাওয়ার একটা শিডিউল মেলাতে হয়। তো পরবর্তীতে প্রবলেম যেটা হয়েছে দুইটা জিনিশ মেলানোটা ডিফিকাল্ট ছিলো কারণ আমার মাস্টার্স চলছিলো তখন। শিডিউল না মেলায় ব্যাসিক্যালি ছবিটা লম্বা সময়ের জন আটকে যায়।

বিজ্ঞাপন
  • এই যে একজন আর্টিস্টকে নিষিদ্ধ করা হলো পরিচালক সমিতি বলেন আর যাই বলেন তাদের সিদ্ধান্ত তো আপনাদের বিপদে ফেললো বিশেষ করে টাকা লগ্নিকারীকে একজন পরিচালক হিসেবে এই ব্যাপারটা নিয়ে আপনার মতামত কি? এটা কি সিনেমার জন্য ভালো নাকি খারাপ?

ফিল্মের জন্য এটা মোটেই ভালো না। আমার মনে হয় কোনভাবেই এটা এপ্রিশিয়েট করার মতো কাজ না, ব্যান করে দেয়াটা। যেকোনও সমাধানের আরও অনেক রকম উপায় থাকতে পারে। যেহেতু সবাই মিলেই চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্র হচ্ছে একটা কোলাবরেট আর্ট, এটা ওয়ানম্যান শো না। সো, আমার মনে হয় যে সবাই মিলে আরও অনেক বেটার সলুশন বের করা যেত। অনেক ইনভেস্টমেন্ট থাকে একটা মুভিতে, পরিশ্রম থাকে, সময় দেয়া থাকে, অনেক ব্যাপার থাকে। দিন শেষে ওনার ব্যান কিন্তু উঠে গেল, মাঝখানে আরও কয়েকটা ছবি, যৌথ প্রযোজনার ছবির শুটিং হয়েও গেল, লাভ বা ক্ষতি যেটা হলো একটা পিওর বাংলাদেশি সিনেমা আটকে গেল। এই ঘটনাটাই প্রমাণ করে ব্যান কালচারটা কখনো সমাধান হতে পারে না। যেখানে আমরা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি।

  • এই কথাটা কি পরিচালক সমিতির কোন মিটিংয়ে বা কোন পরিচালক নেতাকে বলেছেন?

আমরা যখন এফডিসিতে গিয়েছিলাম, তাদেরকে বলেছিলাম ব্যাপারটা, যে ব্যান করাটা তো কোন সলিউশন হতে পারে না। আমরা তো আসলে কোন দোষ করি নাই। এখানে প্রডিউসার যারা আছেন তারা তো কোন দোষ করেন নাই। যৌথ প্রযোজনার নামে যেখানে নিয়ম ভাঙ্গা হচ্ছে, সেগুলো তো দেখা যাচ্ছে ঠিকই সেন্সর হয়ে যাচ্ছে, মুক্তি পাচ্ছে, আর পিওর দেশি একটা সিনেমা আটকে গেল। বিষয়টা আসলে, কি জানি, আমার চেয়েও অনেক অভিজ্ঞ মানুষ আছে তারা হয়তো ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন। বাট আমি আসলে কি বলবো ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না। দিন শেষ যেটা হলো একটা দেশি সিনেমা সাফার করলো।

বিজ্ঞাপন
  • এই ঘটনায় একটা দেশি সিনেমা সাফার করলো বলতে পারি লস করলো পরিচালক সমিতি, প্রযোজক সমিতি বসে আছে আপনাদের স্বার্থ দেখার জন্য, এই ঘটনাটা প্রমাণ করে যে তারা আপনাদের স্বার্থটা দেখছে না এর পেছনে কি কোনও কারণ থাকতে পারে?

‘ওরা আমাদের স্বার্থ দেখছে না’ এমনটা বলা যাবে না। আসলে কি বলবো ওই সময়টায় আমার সাপোর্ট দরকার ছিলো। আমি খুব করে রিকোয়েস্ট করেছিলাম, দেখেন আমার আসলে চলে যেতে হবে, মাস্টার্সের ফাইনাল আছে, এই সময়ের মধ্যে আমাকে অস্ট্রেলিয়া ঢুকতে হবে। আর শাকিব ভাইয়েরও শিডিউল নেয়া আছে, আপনারা পারমিশন দিলে আমরা শুটিং করবো। আমি এক্সপেক্ট করছিলাম পরিচালক সমিতি, আমি সমিতির মেম্বার, তারা আমার সমস্যাটার সমাধান করবেন। কিন্তু চলচ্চিত্র পরিবার থেকে আমাকে জানিয়ে দেয়া হলো আপনারা শুটিং করতে পারবেন না। ওই সময় যদি সাহায্যটা পেতাম তাহলে হয়তো ছবিটা এতোদিনে শেষে করে মুক্তি দিয়ে দিতে পারতাম।

  • ছবিটা কবে নাগাদ আসতে পারে?

আমরা সুপার হিরোর কাজ শেষ করার পর শাকিব ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে একটা সিদ্ধান্ত নেবো। ছবির বাকি শুটিং কবে করবো বা কিভাবে শুট করবো বা যদি দেখা যায় যে পারছি না তাহলে হয়তো আমি সরে দাঁড়াবো। অন্য কেউ হয়তো ছবিটা করবে। কিন্তু এটার একটা ডিসিশন আমরা নেবো। কারণ আমি আসলে বিব্রত। ছবিটা নিয়ে সবাই জানতে চায়। তারা জানতে চায় কারণ তারা ভালবেসেই জানতে চায়। ট্রেইলারটা তাদের ভাল লেগেছে, মনে হয়েছে এটা একটা ভাল মুভি হবে।

  • কত শতাংশ কাজ বাকি?

এখনো পঞ্চাশ শতাংশের মতো কাজ বাকী আছে। কিন্তু আমরা যদি দিন হিসেবে চিন্তা করি তাহলে হয়তো শাকিব ভাইয়ের দশ থেকে বার দিন লাগবে। আর অন্যান্যদের সব মিলিয়ে পনের থেকে ষোল দিন শুট করলেই কাজটা হয়ে যাবে।

বিজ্ঞাপন

  • আপনি তো অস্ট্রেলিয়াতেও কাজ করেছেন বলে শুনেছি ওদের সঙ্গে বাংলাদেশের পার্থক্যটা কোথায়?

ক্রুদের ক্ষেত্রে আমি যেটা বলবো, বাংলাদেশের ক্রুরা যথেষ্ট এক্সপার্ট। অনেকে বলে যে আমাদের টেকনিশিয়ান নাই বা ক্রু নাই কিন্তু এটা আসলে সত্যি না। বাংলাদেশে যথেষ্ট পরিমাণ এক্সপার্ট ক্রু আছে কিন্তু সম্মানীর ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি অস্ট্রেলিয়ায় একজন ক্রু ভাড়া নিলে তার পেছনে প্রতিদিন আঠারো হাজার টাকা খরচ হয়। বাংলাদেশে আমরা হয়তো আঠারোশ টাকাও দেই না বা দিতে পারি না। এটা হচ্ছে প্রথম বিষয়। দ্বিতীয়ত হচ্ছে ওদের একটা স্ট্রাকচার আছে, যে আমরা সকালে এতোটার সময় শুটিং শুরু করবো, এতোটার সময় শেষ করবো, এভাবে আমারা কাজটা শেষ করবো। আমাদের এখানে এই জিনিসের বড় অভাব। কোনও সিস্টেম নাই। শুধু ডিরেক্টর সিস্টেম মানলে কিন্তু হবে না। ইউনিটকে মানতে হবে, আর্টিস্টকে মানতে হবে, সবাইকে মানতে হবে। না হলে দিন শেষে একটা কম্প্রোমাইজের প্রোডাকশন পাওয়া যাবে। এই জায়গাটায় আমার কাছে সবচেয়ে বড় পার্থক্য মনে হয়েছে। এরা ওয়েল ডিফাইনড। ফাইট ডিরেক্টর যখন কাজ করে পুরো ফাইটটা মোবাইলে রিহার্স করে নেয়। ডিরেক্টরের কাছ থেকে অ্যাপ্রুভাল নেয় যে আমরা এখানে এটা করবো, আর্টিস্টের সঙ্গে রিহার্সেল করে। করার পর তাদের সঙ্গে একটা কন্ট্রাক্ট হয়, সেইফটি অ্যান্ড সিকিউরিটির একটা কন্ট্রাক্ট হয় তাদের সঙ্গে, অনেকগুলো প্রসিডিউর থাকে। এই ব্যাপারগুলো আমাদের এখানে নাই। ফলে হয়কি আমাদের এখানে জিনিসগুলো একটু অগোছালো হয়।

  • এখানে প্রডিউসারদের মানসিকতার কথা খুব বলা হয়

হ্যাঁ, হ্যাঁ এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা (অস্ট্রেলিয়ায়) ডিরেক্টরের থিংকিংটাকে সবচেয়ে বেশি রেসপেক্ট করে, যে ডিরেক্টর কি চিন্তা করছে। যেটা হয় আরকি, একজন ডিরেক্টরই কিন্তু পুরো প্রোডাকশনটাকে কল্পনার চোখে দেখেন। এইভাবে করলে এটা এই হবে। এখন প্রডিউসার যদি, ওইখানকার প্রডিউসার, আমি অল্প কিছু জায়গায় কাজ করেছি, আমি তাদেরকে যখন যে আইডিয়াটা দিয়েছি, তারা বিষয়টাকে খুব রেসপেক্ট করেছে, যদি তাদের কোন অপিনিয়ন থাকে তারা অপিনয়নটা যুক্ত করেছে কিন্তু আইডিয়াটাকে একেবারে রিমুভ করে ফেলেনি। যে প্রবলেমটা আমি বাংলাদেশে দেখেছি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে যেয়ে। আমি কাজ করতে যাবো তখন দেখা যাচ্ছে আমি একটা আইডিয়া দিলাম আর আমার আইডিয়াটা একেবারে উড়িয়ে দেয়া হলো, ‘না এভাবে বাংলা সিনেমা হয়না, বাংলা সিনেমার নিয়ম এভাবে না।’

আমিতো কিছু হলেও বুঝি। কারণ আমি বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছি, ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছি, বাংলাদেশের অলমোস্ট সব সামরিক বাহিনীর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার আছে। তো আমার অভিজ্ঞতা বা চিন্তার একটা গুরুত্ব আছে। আমি অনেক সময় দেখেছি বাংলাদেশে এটা একটু অবহেলিত হয়। যেটা হয় আরকি আমি এতে খুব বিরক্ত হই। কাজ করতে গেলে আমার বিরক্ত লাগে। যখন এই টাইপ কথাবার্তা বলা হয়। অস্ট্রেলিয়ায় এই প্রবলেমটা আমি দেখি নাই।

বিজ্ঞাপন
  • তো এখানে আপনার মতে বদলের উপায় কি?

বদলের ওয়ে হচ্ছে, প্রডিউসারদের ভরসা রাখতে হবে ডিরেক্টরের ওপর। প্রোডিউসার যদি মনে করে আমি টাকা দিচ্ছি, আমি যেটা বলবো সেটাই হবে, তাহলে দিন শেষে একটা বাজে প্রোডাকশন হবে। সত্যিকথা। কারণ প্রোডিউসার যদি নিজে পারতেন তাহলে কিন্তু নিজেই ডিরেকশন দিতেন, শুধু টাকা লগ্নি করতেন না। এদিক থেকে ডিরেক্টরের ওপর একটু ভরসা রাখতে হবে। যাকে আমি টাকা দিচ্ছি, যাকে আমি হায়ার করছি, তার মেধার একটু মূল্যায়ন করি, সে যেটা বলছে জিনিসটা সেভাবে করে দেখি কি হয়। এটা যদি হয় তখন হয়কি একটা ডিরেক্টর তখন কাজটা করে, এটা তো তার ব্রেইন চাইল্ড সে তার শতভাগ দিয়ে দেয়, যেভাবেই হোক আমি যেটা কল্পনায় দেখেছি আমি সেটাকে স্ক্রীনে নিয়ে আসবো। তখন আল্টিমেটলি একটা ভালো জিনিস দাঁড়ায়। কিন্তু প্রোডিউসার যদি সব জায়গায় খবরদারি করতে থাকে, তখন হয়কি ডিরেক্টর একটা সময় কাজটা ছেড়ে দেয়। ধুর ‘লেট ইট গো’ বা এমন একটা ফিল চলে আসে। তখন কাজটা শুধু টাকার জন্য হয়ে যায়। আমার মনে হয় প্রথম ব্যাপার যেটা হয় যে, মেন্টালিটিটা আনতে হবে যে আমি যদি একটা পরিচালককে হায়ার করি তার মেধার উপর আমাকে বিশ্বাস রাখতে হবে। বিশ্বাস না থাকলে ডিরেক্টরকে হায়ার করার দরকার নাই। নাহলে দিনশেষে একটা খারাপ প্রোডাকশন হবে।

  • একটা কথা প্রচলিত আছে, পরিচালকরা নায়িকা নির্বাচন করতে পারেন না, এটা ঠিক করে দেয় প্রোডিউসার আপনার সঙ্গে কি এটা কখনো হয়েছে?

কি বলবো, বিষয়টা আমি প্রায়ই ফেস করছি। মানে আমার যখন মনে হয় একটা ক্যারেক্টারে এই আর্টিস্ট আসলে যায় না, ওই আর্টিস্ট যায়, তখন দেখা যায় যে বাইরে থেকে একটা এক্সটার্নাল প্রেসার থাকে। প্রযোজক অনেক সময়, অথবা তার আশে পাশে যারা থাকেন, যারা প্রযোজককে অনেকরকম সাজেশন দেন, তাদের দিক থেকে একটা প্রেসার থাকে, ‘এই নায়িকা বাংলা সিনেমা চলবে না, এই নায়িকার এটায় চলবে না, এই নায়িকার সেটায় চলবে না’ এই সমস্যাটা থাকে। এটাই, যেটা হয়কি আগে যেরকম ছিলো, আমি যেটা শুনেছি, যাকে যখন দরকার হতো সেরকম রিক্রুট করা হতো। এখন যেটা হয় দেখা যায়, বেশিরভাগ নায়িকাই কোথাও না কোথাও লিংকড। দেখা যাবে যে কোন কোন প্রডাকশন হাউজের নায়িকা বা নির্দিষ্ট কোনও প্রডাকশন হাউজের হয়ে কাজ করে বা নির্দিষ্ট কোন ডিরেক্টরের হয়ে কাজ করে, বাইরে কাজ করে না। এর ফলে আমাদের অপশন অনেক লিমিটেড হয়ে গেছে। ‘আহা, অমুক নায়িকাকে নিবো, উনি তো ওই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ছাড়া কোথাও কাজ করেন না।’ দেখা যাচ্ছে, ওমুক নায়িকাকে নিবো আরে ও তো ওই ডিরেক্টর ছাড়া কারো সঙ্গে কাজ করে না বা ওই নায়ক ছাড়া কারো সঙ্গে কাজ করে না। আমার মনে হয় আমার এখানে এই আর্টিস্টটা ছিলো কিন্তু তাকে নিতে পারি না। পরিস্থিতি বা অন্য যেকোন কারণে আমাকে অনিচ্ছা সত্বেও একটা নায়িকা নিতে হচ্ছে। আমি অল্প কয়টা সিনেমা বানিয়েছি, তাতেই মানুষ ভালোবাসা দিয়েছে। আমার মুভির সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারতো। আরও অনেক বেশি। দশটা-পনেরটা হয়ে যেতে পারতো এই কয়েক বছরে, কিন্তু আমি আসলে সব জায়গায় কম্প্রোমাইজ করতে পারি না। এই নায়িকাকে নিয়ে মুভি করেন বা ওই নায়ককে নিয়ে মুভি করেন, আমার আসলে মন সায় দেয়না, এগুলা আমি করি নাই।

  • আপনার মুসাফির সিনেমার কথা বলতে পারি ছবিতে শুভকে যেরকম সাবলীল দেখা গেছে, টাইগার রবিসহ আরও যারা ছিলেন, তারা যেমন অসাধারণ অভিনয় করেছেন, কিন্তু আপনার নায়িকা কিন্তু সেই তুলনায় ফ্লপ ছিলেন, তার এক্সপ্রেশন সাবলীল ছিলনা ওই ছবিতে নায়িকা নির্বাচন কি আপনি করেছিলেন?

এটা আসলে অস্বীকার করার কোন উপায় নাই। মারজান একজন নতুন আর্টিস্ট ছিল। সে তার সাধ্য মতো চেষ্টা করেছে যতোটুকু ভালো করা যায়। আমরাও চেষ্টা করেছি… মারজান আসলে প্রোডাকশন হাউজেরই, প্রথমে যেটা বললাম সব প্রোডাকশন হাউজেরই নায়িকা থাকে, পারসেপচুয়ালের নায়িকা হচ্ছে মারজান। ওই ব্যানার থেকে অনেকগুলো কাজ সে করেছে। পরবর্তীতে দেখা গেছে জোবায়ের ভাইয়ের সঙ্গে সে বিয়েও করেছে। এখানে এরকম একটা ব্যাপার ছিলো, প্রেসার ছিলো না ঠিক, বাট মারজানের ফেবারে ছিল।

  • এই অংশ কি প্রকাশ করবো সাক্ষাৎকারে

(কিছুটা ভেবে) রাখতে পারেন। আপনি এটা লিখতে পারেন যে প্রোডাকশন হাউজ থেকে প্রেফারেন্স ছিলো মারজানের জন্য। মারজান চেষ্টাও করেছে ভালো করার জন্য।

  • অন্য প্রশ্নে যাই, শাকিবকে নিয়ে অনেক আলোচনা আছে ইন্ডাস্ট্রিতে, অনেক প্রশংসাও আছে তাকে নিয়ে আপনি শাকিব খানকে নিয়ে দুটো সিনেমা করছেন, তার সঙ্গে আপনার অভিজ্ঞতাটা কেমন?

শাকিব ভাই সম্পর্কে মূল্যায়ন যেটা হচ্ছে, ডেফিনিটলি হিরো বলতে যেটা বোঝায় সেটা। উনি হচ্ছেন সবদিক থেকে একজন হিরো। অনেকে বলেন শাকিব এই করে, সেই করে, আমি এই জায়গা থেকে এমন কিছু দেখি নাই। আমি অনেক সময় বলেছি, ভাই এটা আমার মন মতো হয়নি, আমি শটটা এভাবে নিতে চাই। শাকিব ভাই দেখা গেছে আমার মতো করে সেই শটটা আবার দিচ্ছেন। আবার শাকিব ভাই মাঝে মাঝে কিছু আইডিয়া দেন যেটা সিনেমাকে হেল্প করে। যেমন ল্যাম্বরগিনি হায়ার করার প্ল্যানটা (অপারেশন অগ্নিপথ) আসলে শাকিব ভাইয়ের ছিল। আমার মনে হয় দিন শেষে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা যেটা থাকে যে শাকিব ভাই আসলে একটা ভালো প্রোডাকশন করতে চান। এটা উনার মেইন টার্গেট থাকে। এটার জন্য যতটুকু প্রেসার দেয়ার বা যা করার সেটা তিনি করেন। এটা অনেক ডিরেক্টর ইতিবাচকভাবে নেন। অনেক ডিরেক্টর নেগেটিভভাবে নেন। বাট এটা ট্রু ফ্যাক্ট শাকিব ভাই প্রোডাকশন ভালো করার জন্য অনেক সময় প্রেসার দেন। তবে এটা শুধুমাত্র কাজটা ভালো করার জন্যই করেন, এর পেছনে অন্য কোনও কারণ নাই। যে উনি একটা দামি ব্র্যান্ড পরলেন, পরে এটা বাসায় নিয়ে গেলেন তা না। দামি ব্র্যান্ডটা উনি পরেন শুধুমাত্র স্ক্রীণে যেন ওনাকে ভালো দেখায়, লোকে যেন প্রডাকশনটা ভালো বলে এজন্য।

  • শাকিব খান সম্পর্কে একটা অভিযোগ আছে, সেটে দেরিতে আসেন, শিডিউল ফাঁসান

আমি যেই কয়দিন শুট করেছি, বিশেষ করে অগ্নিপথে, অলমোস্ট একটু এদিক-ওদিক হয়েছে আরকি, কারণ সিডনি শহরটা অনেক বড়, এক মাথা থেকে আরেক মাথায় যেতে দেড় ঘণ্টার মতো লাগে, এই রিজন ছাড়া আমি কখনো তাকে সেটে লেট করে আসতে দেখি নাই। শিডিউল ফাঁসানোর ব্যাপারটা আমি দেখি নাই কখনো। অন্যরা হয়তো তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলতে পারবেন। আমার অভিজ্ঞতায় এমন কিছু নাই আসলে, দেখি নাই এমন কিছু।

  • প্রসঙ্গ সুপার হিরো

সুপার হিরোতে অভিনয় করেছে শাকিব খান, বুবলি, তারিক আনাম খান, টাইগার রবি, সিন্ডি রোলিংসহ আরও অনেকে। ছবিটার শুটিং হয়েছে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ায়। আমার সবসময় নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা থাকে, চেষ্টা করি গতবারের ভুলগুলো এবার যেন না হয়। সুপার হিরোতে আমি নতুন কিছু দেয়ার চেষ্টা করেছি যা দর্শকদের মুগ্ধ করবে। আপনাদের একটা তথ্য জানিয়ে রাখি, সুপার হিরোতে আমাদের ফাইট ডিরেক্টর ছিলেন ম্যাট্রিক্স (পরিচালক: ওয়াচিভস্কি কাজিন) সিনেমার স্টান্ট কোরিওগ্রাফার, ‘পাইরেটস অফ দ্যা ক্যারিবিয়ান’ ছবিতে তিনি ছিলেন। এরকম ক্রুরা বাংলা সিনেমায় এখন কাজ করছে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দর্শকরা চমৎকার একটা সিনেমা পেতে যাচ্ছে এবারের ঈদে।

সারাবাংলা/টিএস/পিএ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন