বিজ্ঞাপন

আর কত হাত-পা গেলে টনক নড়বে

June 2, 2018 | 8:45 am

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: রাজীব আর হৃদয়ের হাত গেল, রোজিনা, রাসেলের পা গেল, গতকাল কেটে ফেলতে হয়েছে আমার স্বামীর পা। রাজীব আর রোজিনা তো মারাই গেল। আর যারা হাত কিংবা পা হারিয়ে বেঁচে থাকছে, তারা কি আসলে বেঁচে আছে? তারা বেঁচে থাকবে-প্রচণ্ড কষ্ট আর ক্ষোভ নিয়ে কথাগুলে বলেন, নুরুল আমিন চৌধুরীর স্ত্রী সেলিনা আক্তার বীনা। তিনি বলেন, ‘মানুষটার পা চলে গিয়েছে, কিন্তু সুস্থ যেন ফিরে আসেন- সে দোয়া চাই সবার কাছে।’

গত ১৭ মে প্রকাশনা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত নুরুল আমিন চৌধুরী খিলগাঁও থেকে মহাখালী ডিওএইচএসে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনার শিকার হন। মহাখালীতে ৬ নম্বর রুটের একটি বাস তার পায়ের ওপর রেখেই চাকা রেখেই পালিয়ে যান বাস চালক। পরে সেখানে থাকা লোকজন বাস সরিয়ে তার পা বের করেন এবং তারা তাকে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যান।

সেলিনা আক্তার বীনা বলেন, ‘সেদিন একটা ছেলে ফোন করে জানায়, আঙ্কেল অ্যাক্সিডেন্ট করেছে, আপনি কথা বলেন একটু। তিনি কেবল ফোনে বলেন, ‘আমাকে পঙ্গুতে নিয়ে যাচ্ছে-তোমরা আসো। ওই ছেলেটাই নিজের গায়ের টি শার্ট খুলে পায়ে ব্যান্ডেজ করেছিল।’

বিজ্ঞাপন

তবে পঙ্গু হাসপাতালে গত ২৭ মে তার অস্ত্রোপচার হবার কথা ছিল, অস্ত্রোপচার কক্ষেও নেওয়া হয় তাকে। কিন্তু ওটিতে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা জানান, তার অবস্থা খুব খারাপ, আইসিইউতে নিতে হবে।

তিনি বলেন, ‘পঙ্গু হাসপাতালে সেদিন চিকিৎসকরা বলেন, তার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ-তাকে এখন অপারেশন করা যাবে না, আইসিইউতে নিতে হবে। কিন্তু পঙ্গু হাসপাতালে আইসিইউ না থাকাতে তাকে মিরপুর রোডের ট্রমা সেন্টারে নিয়ে আসি আমর—‘ বলেন নুরুল আমিন চৌধুরীর মেয়ে ফারহানা আমিন।

বিজ্ঞাপন

‘এখানে আনার পর গত ২৮ মে তার ডান পা হাঁটুর ওপর থেকে কেটে ফেলা হয়। তবে সংক্রমণের কারণে পা কেটে ফেলে রক্ষা পাওয়া গেলেও এখন আর বড় চিন্তা তার সুস্থ হওয়া নিয়ে। কারণ চিকিৎসকরা বলছেন, তার পুরো শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে।’

পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সে রাতেই একটি অস্ত্রোপচার হয় জানিয়ে ফারহানা আমিন বলেন, ‘প্রথম অপারেশনের সময় পা জোড়া দেওয়া সম্ভব হয়নি। সেখানে কয়েকদিন থাকলাম।’

তবে পঙ্গু হাসপাতালের বিস্তর অভিযোগ এ পরিবারের। ফারহানা আমিন বলেন, ‘আমার বাবা হার্টের রোগী, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত- কিন্তু পঙ্গু হাসপাতালে সেদিকে কোনো নজরই দেওয়া হয়নি’-পঙ্গু হাসপাতালের বিরুদ্ধে এভাবেই অভিযোগ করেন তিনি।

ফারহানা আমিন বলেন, ‘ওখানে পুরোটাই অব্যবস্থাপনা-সরকারি এই হাসপাতালটির বেহাল দশা। শিক্ষিত মানুষরাই সেখানে এতটা অসহায় অবস্থাতে থাকতে হয়, যারা শিক্ষিত না তাদের কী অবস্থা হয় হাসপাতালটিতে সেটা সহজেই বোঝা যায়।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘ওখানকার (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসকদের আমরা বারবার জিজ্ঞেস করেছি, আব্বুকে অন্য কোথাও নিয়ে যাব কি না-কিন্তু তারা আমাদের কখনোই কিছু বলেননি। তারা যদি বলতেন তাহলে আরও আগে অন্য কোথাও নিয়ে গেলে হয়তো পুরো শরীরে ইনফেকশনটা হতো না অথবা হতো। কিন্তু এখনও তো আমাদের অনেক কিছুই মনে হতে পারে। তবে এটুকু বলব, পঙ্গু হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেক কিছু বলার আছে রোগীদের। অন্যান্য শারীরিক অসুবিধার দিকে তারা নজর দেয়নি।’

মায়ের পাশে মাকে জড়িয়ে ধরে ফারহানা বলেন, ‘আব্বুর অবস্থা শংকটাপন্ন, পাতো কেটে ফেলতে হয়েছেই গতকাল রাতে। চিকিৎসকরা বলেই দিয়েছেন পুরোপুরি সুস্থ হবার চান্স খুব কম। আজ সকালে চিকিৎসকরা জানান, পুরো শরীরে ইনফেকশন ছড়িয়ে গেছে। ওষুধ দিয়ে এ সংক্রমন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চলছে-বাকিটা আল্লাহ ভরসা।’

এ সময় সেলিনা আক্তার বলেন, ‘আমাদের দেশে এখন রাস্তার যে অবস্থা তাতে কেউ নিরাপদ না, একটা মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে সুস্থভাবে ঘরে ফিরবেন কি না সে নিশ্চয়তা এখন এই দেশে কেউ দিতে পারবেন না। দেশটা এমন হয়ে গেল, যাচ্ছে-সেদিকে কারও নজর নেই।’

আমার ছেলেটা আহসান উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ে, তার পরীক্ষা চলছে। অথচ পুরো পরিবারটি হাসপাতালে বসে রয়েছি, ছেলেটা উদ্ভান্তের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। কী হবে আমাদের বলে চোখের কোন মোছেন সেলিনা আক্তার।

এ সময় পাশ থেকে ফারহান বলেন, ‘আমরা মামলায় যাব-এর একটা বিহীত হতেই হবে। আব্বু একটু ভালো হলেই আমরা এ বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করব। তবে পরক্ষণেই হতাশায় ছেয়ে যায় ফারহানার মুখ।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সংসার আব্বুই চালাত, এখন কী হবে-সবইতো শেষ হয়ে গেছে আমাদের’ বলে মাকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন তিনি।

সারাবাংলা/জেএ/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন