June 5, 2018 | 7:47 pm
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: দুবছর আগে সন্তানহারা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর মা জাহেদা আমিন চৌধুরী ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনির জন্য ডাকা একটি মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন। এ সময় তিনি রনিকে তার ‘হারানো সন্তানের’ সঙ্গে তুলনা করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার জীবনের নিরাপত্তা দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘শুনেছি রনিকে মারার জন্য এক কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে।’
মঙ্গলবার (৫ জুন) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে নগরীর বিভিন্ন কলেজ ছাত্রলীগের উদ্যোগে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
মানববন্ধনে এসে জাহেদা আমিন চৌধুরী কান্নাজড়িত কন্ঠে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার সন্তান দিয়াজকে যেভাবে হারাতে হয়েছে, সেভাবে রনিকেও হারানোর চক্রান্ত চলছে। আমাদের সন্তানদের এক এক করে হারাতে হচ্ছে। পঁচাত্তরের আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আস্থাভাজন কর্মীদের যেভাবে তার কাছ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, একই চক্রান্ত আবারও হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘একটি মাফিয়া চক্রের ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে আমার দিয়াজকে প্রাণ দিতে হয়েছে। সেই মাফিয়া চক্রের ষড়যন্ত্রের জন্য রনিকে কারাগারে যেতে হয়েছে। রনি, দিয়াজ এরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী। এদের রক্তে আওয়ামী লীগ। দিয়াজকে হারাতে হয়েছে। আমরা রনিকে হারাতে চাই না। শুনেছি রনিকে মারার জন্য এক কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার সন্তান রনিকে আপনি রক্ষা করবেন।’
জাহেদা আমিন চৌধুরীর এই বক্তব্যের সময় উপস্থিত আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েন। দিয়াজের ‘খুনীদের’ বিচারের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের পদত্যাগী সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিতে তিনি মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী ছিলেন।
২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিজ বাসা থেকে দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দিয়াজের পরিবারের দাবি, তাকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে দিয়েছে ছাত্রলীগের ভেতরকার একটি অংশ। প্রথম দফা ময়নাতদন্তে হত্যার প্রমাণ পাওয়া না গেলেও আদালতের নির্দেশে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত রিপোর্টে তার মৃত্যুকে শ্বাসরোধজনিত হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করা হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি আলমগীর টিপুসহ ১০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলাও দায়ের করেছিলেন দিয়াজের মা।
মানববন্ধনে আসার আগে জাহেদা আমিন চৌধুরী নুরুল আজিম রনির বাসায় গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তিনি রনির মাকে সান্ত্বনা দেন।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপঅর্থ বিষয়ক সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান মনসুর, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গাজী জাফর উল্লাহ, আসহাব রসূল জাহেদ, প্রশান্ত চৌধুরী যীশু, খোরশেদ আহমেদ জুয়েল, শিবু প্রসাদ চৌধুরী, হাবিবুর রহমান তারেক, নগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি একরামুল হক রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সামদানি জনি, উপদপ্তর সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন টিটু, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মিজানুর রহমান মিজান, আবু হানিফ রিয়াদ, সালাউদ্দিন বাবু এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য আমিনুল করিম।
চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল করিমের সভাপতিত্বে মানববন্ধন পরিচালনা করেন জাবেদুল ইসলাম জিতু ও মহসিন কলেজ ছাত্রলীগ নেতা মায়মুন উদ্দিন মামুন।
মানববন্ধনে ওমর গণি এমইএস কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, সরকারি সিটি কলেজ, আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজ, ইসলামিয়া কলেজ এবং বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যোগ দেন।
গত ৩১ মার্চ চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে বর্ধিত ফি আদায়ের প্রতিবাদে একটি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েন রনি। বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ জাহেদ খানকে মারধরের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়। পরে জাহেদ খান নগরীর চকবাজার থানায় রনির বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন।
এরপর গত এপ্রিলে নগরীর একটি কোচিং সেন্টারের মালিককে মারধরের আরেকটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেন রনি।
ছাত্রলীগের পদে থেকেও চট্টগ্রামের মেয়র এবং নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে সমালোচনায় সোচ্চার ছিলেন রনি। এ ছাড়া দলের প্রভাবশালী নেতাদের বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেও রোষানলে পড়েছিলেন রনি।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই