বিজ্ঞাপন

সার্বজনীন পেনশন শুরু হচ্ছে এ বছরই

June 7, 2018 | 3:15 pm

।। জিমি আমির ও আসাদ জামান ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: পরীক্ষামূলক উদ্যোগ হিসেবে কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে চায় সরকার। প্রস্তাবিত বাজেটে এ বিষয়ে একটি রূপরেখা তুলে ধরেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বৃহস্পতিবার (৭ জুন) জাতীয় সংসদে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় তিনি এ রূপরেখা তুলে ধরেন।

সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা কেমন হবে— তার একটি রূপরেখা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এই ব্যবস্থার আওতায় একজন কর্মজীবী মাসিক ভিত্তিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দেবেন। একইভাবে তার নিয়োগকর্তা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্মজীবীর জন্য পেনশন আকারে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা করবেন। সরকারও একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ওই স্কিমে জমা করবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘এই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গঠিত তহবিল বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত অর্থ সার্বজনীন পেনশন তহবিলে জমা হতে থাকবে। জমানো সেই চাঁদা ও আয়ের পরিমাণের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অবসর সময়ে মাসিক পেনশন হিসেবে পাবেন।’

‘তবে, এই ব্যবস্থার জন্য যে মৌলিক কাঠামোর দরকার, তা সময়সাপেক্ষ বিষয়’— বাজেট বক্তৃতায় বলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।

তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে সরকারি কর্মচারী ও জনগণের মধ্যে সমান সুযোগ দিয়ে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা, ধারাবাহিক কৌশলগত পরিবর্তন, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সৃষ্টি, কারিগরি সক্ষমতা ও যথাযথ নীতি-কৌশল প্রণয়ন করা দরকার। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বেসরকারি পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত সব কর্মজীবীর জন্য একটি টেকসই সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের কাজ এই অর্থবছরেই শুরুর আশা রাখি।’ শুরুতে অন্তত কয়েকটি নির্দিষ্ট এলাকায় হলেও পরীক্ষামূলক উদ্যোগ হিসেবে সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করার ইচ্ছা সরকারের আছে বলেও জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের মোট বয়স্ক জনসংখ্যার মধ্যে পেনশনভোগীর সংখ্যা খুবই কম। বর্তমানে শুধু সরকারি কর্মচারী এবং অল্প কিছু বেসরকারি সংস্থার কর্মচারীরা এই সুবিধা পান। সব মিলিয়ে পেনশন সুবিধার আওতায় থাকা পরিবারের সংখ্যা ৭ থেকে ৮ লাখ। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের বাইরে হতদরিদ্র ৩৫ লাখ ব্যক্তি মাসিক ৪০০ টাকা হারে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন, যা মোট বয়স্ক জনসংখ্যার মাত্র এক-চতুর্থাংশ।

বয়স্ক ভাতার পরিমাণ মানসম্মত জীবনধারণের জন্য যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, জনমিতির স্বাভাবিক ধারায় একসময় উন্নত দেশের মতো আমাদের দেশেও বয়স্ক জনগোষ্ঠীর অনুপাত বাড়বে। তখন স্বাভাবিক বাজেট বরাদ্দের আওতায় তাদেরকে সহায়তা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। অথচ আমরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সবার কাছে পৌঁছাতে চাই, কমাতে চাই বৈষম্য।

এ কারণেই, বর্তমান সরকারি পেনশন কার্যক্রমের বাইরে বেসরকারি পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত সব কর্মজীবী মানুষের জন্য সার্বজনীন পেনশন চালু করতে চাই— বলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত।

দেশের ইতিহাসে ৪৭তম বাজেট প্রস্তাবনা সংসদের সামনে উপস্থাপন করছেন অর্থমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার (৭ জুন) দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে কালো ব্রিফকেস হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাথে নিয়ে সংসদে আসেন অর্থমন্ত্রী। পরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর অনুমতি নিয়ে ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে ১০৩ পৃষ্ঠা বাজেট বক্তৃতা উপস্থাপনা শুরু করেন অর্থমন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবনায় আসন্ন অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫শ ৭৩ কোটি টাকা। পুরো বাজেটে খরচের চাহিদা মেটাতে অর্থমন্ত্রী তিন লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে চান, যা মোট জিডিপি’র ১৩.৪ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর নিয়ন্ত্রিত কর থেকে দুই লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা, এনবিআর-বহির্ভূত করব্যবস্থা থেকে ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা এবং কর ছাড়া অন্যান্য উৎস থেকে আয় ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা।

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন