বিজ্ঞাপন

আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ ‘ইতেকাফ’

June 8, 2018 | 5:01 pm

।। জহির উদ্দিন বাবর।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : পবিত্র রমজানের শেষ দশকের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ইতেকাফ। এটি আরবি শব্দ। এর অর্থ অবস্থান করা, বসা, বিশ্রাম করা, ইবাদত করা ইত্যাদি। রমজান মাসের শেষ দশকে পুরুষরা মসজিদে, নারীরা নিজেদের ঘরে অবস্থান করাকে ইতেকাফ বলে। ইতেকাফ যে কোনো সময় করা যায়। তবে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করা সুন্নত। ইতেকাফের মাধ্যমে রোজাদার ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ পেয়ে থাকেন। ইতেকাফের মূল উদ্দেশ্য, দুনিয়ার সব সম্পর্ক ছিন্ন করে আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ করা। মসজিদ এলাকার কিছুসংখ্যক লোক ইতেকাফ করলে সবার পক্ষ থেকেই আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু কেউই যদি আদায় না করে তবে সবাই গোনাহগার হবে। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) সব সময় রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করতেন।

ইতেকাফ আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুবর্ণ সুযোগ। লাইলাতুল কদরের পূর্ণ ফজিলত পাওয়ার উদ্দেশে মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করা হয়। যিনি যত বেশি গভীরভাবে আল্লাহকে ভালোবাসার জন্য আত্মনিয়োগ করবেন, তিনি তত বেশি আল্লাহর নৈকট্য লাভে সক্ষম হবেন। ইতেকাফ মানুষের ওপর এমন আধ্যাত্মিক প্রভাব সৃষ্টি করে, যার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন হয়। ইতেকাফ মুমিন মুত্তাকিনদের জীবনের মুক্তির বিশেষ পাথেয়। হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করতেন। এক বছর কোনো বিশেষ কারণে ইতেকাফ করতে পারেননি, তাই পরবর্তী বছর শেষ ও মধ্যবর্তী দু’দশকসহ মোট ২০ দিন ইতেকাফ করেছিলেন।

রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করবে, তাকে এক ওমরা পরিমাণে সওয়াব দেওয়া হবে। অপর হাদিসে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করবে, তার আমলনামায় দুটো হজ বা দুটো ওমরা হজের সওয়াব লিখে দেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

ইতেকাফে বসার সুযোগ যাদের হয়েছে নিঃসন্দেহে তারা সৌভাগ্যবান। তবে ইতেকাফের নিয়ম-কানুন যথার্থ অনুসরণ না করার কারণে অনেকেই ইতেকাফের পুরোপুরি ফায়দা অর্জন করতে পারেন না। এ জন্য যারা দুনিয়ার সবকিছু ছেড়ে আল্লাহকে পাওয়ার জন্য আল্লাহর ঘর মসজিদে এসে অবস্থান নিয়েছেন তাদের এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া খুবই জরুরি।

২০ রমজান সূর্যাস্তের আগে মসজিদে অবস্থান করা থেকে নিয়ে শাওয়ালের চাঁদ উদয় হওয়া পর্যন্ত পুরোটা সময়ই ইতেকাফের অন্তর্ভুক্ত। ইতেকাফকারী বা মুতাকিফ এ সময়টুকুতে ইচ্ছে করলেই নিজের মতো চলতে পারবেন না। ইতেকাফের যে বিধান ও নীতিমালা আছে সে অনুযায়ীই তাকে চলতে হবে। ইতেকাফের পুরো সময়টা ইবাদতের মধ্যে গণ্য। কেউ যদি কোনো ইবাদত না করে চুপ হয়ে বসেও থাকেন তবুও তিনি সওয়াব পেতে থাকবেন। তবে প্রত্যেকের উচিত এ সময়টুকু সুবর্ণ সুযোগ মনে করে ইবাদতে মশগুল থাকা। মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করা ইতেকাফকারীর প্রধান দায়িত্ব। প্রয়োজনীয় কথাবার্তা ছাড়া সাথীদের সঙ্গে খোশগল্পে মেতে ওঠা যাবে না। অধিক ঘুম যদিও ইতেকাফের জন্য ক্ষতিকারক নয় তবুও ইবাদতে বিঘ্ন ঘটার কারণে ঘুমিয়ে বেশি সময় নষ্ট করা উচিত নয়। জাগতিক কোনো বিষয়ে ভাবনায় ডুবে থাকাও উচিত নয়। সব সময় আল্লাহর ধ্যানে নিমগ্ন থাকার চেষ্টা করতে হবে।

ইতেকাফকারীর করণীয় হলো- ইতেকাফ অবস্থায় বেশি বেশি নফল ইবাদত করা, যেমন নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, বিভিন্ন ধরনের তাসবিহ, তাওবা, ইস্তেগফার, নবীর প্রতি দরুদ পাঠ ও দোয়া প্রভৃতি। ধর্মীয় পুস্তকাদি পাঠ ও এর তালিমও ইবাদতের মধ্যে গণ্য হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইতেকাফের পুরো সময়টা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কাটাতেন।

বিজ্ঞাপন

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘ইতেকাফকারী জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে আসতে পারবে না। তার স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হতে পারবে না। জানাজায় শরিক হওয়া এবং রোগী দেখতে যাওয়া তার জন্য জরুরি নয়।’

ইতেকাফের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো লাইলাতুল কদর প্রাপ্তি। যেহেতু মহিমান্বিত এ রাতটি নিশ্চিত নয় এজন্য ইতেকাফকারীকে প্রত্যেক রাতে তা অন্বেষণ করতে হবে।

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন