বিজ্ঞাপন

ক্রিকেটারদের টাকা-পয়সা নিয়ে দু’কথা

June 11, 2018 | 7:59 pm

সালমাদের এশিয়া কাপ জয়ের ঘোর কাটতেই চাইছে না। অবিশ্বাস্য এ জয়। যে আনন্দ তারা আমার জন্য নিয়ে এসেছেন, তার প্রতিদান কিসে দেবো? আদৌ কি এসবের প্রতিদান হয়? এমন বিপুল আনন্দ আমাদের ছেলে ক্রিকেটাররাও অনেকবার বয়ে এনেছেন। সে কথা স্মরণ করেও আপ্লুত হচ্ছি। পাশাপাশি মেয়েদের সাফল্যের কথা তুলে ছেলেদের প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে খোটা দেওয়ার বিষয়টিও নজর এড়াচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

আমাদের ক্রিকেটারদের টাকা-পয়সা ইত্যাদি প্রাপ্তি নিয়ে আমার জানাটা ঠিক স্পষ্ট না। যেমন— আমি জানি, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) বাংলাদেশের জনগণ কোনো টাকা-পয়সাই দেয় না। দেশের মানুষের করের টাকায়ও ক্রিকেটাররা ভাগ বসান না। তারা জিতলে যে বোনাস বা উপহার বিসিবি দেয়, তা ক্রিকেটারদের নিজেদের আয় থেকেই দেয়।

তাত্ত্বিকভাবে বিসিবির আয় বলে কিছু নেই। ক্রিকেটাররা আছে বলেই বিসিবি আছে। ক্রিকেটাররা খেললে, ভালো খেললে বিসিবির আয় হয়— ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) বা এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) থেকে বরাদ্দ বেশি পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়, স্পন্সর-টেলিভিশন সম্প্রচার স্বত্বের সাথে টিম স্পন্সরশিপ স্বত্ব ইত্যাদিও বিক্রি হয়।

আমি মাঝে মাঝে মাথায় হাত রেখে চিন্তা করি, সাকিব-তামিমদের কল্যাণে এত আয় করে বিসিবি তথা বাংলাদেশ!

বিজ্ঞাপন

আইসিসির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ২০১৬ থেকে ২০২৩— এই আট বছরে সংস্থাটির টেস্ট ক্রিকেটের তহবিল থেকে বিসিবির তহবিলে যোগ হওয়ার কথা ১২৮ মিলিয়ন ডলার, মানে এক হাজার ২৪ কোটি টাকা। এরই মধ্যে টেস্ট ফান্ড থেকে কয়েক কিস্তির টাকা বিসিবি পেয়েও গেছে। এটি একটি উদাহরণ মাত্র।

আইসিসি বা এসিসির থোক বরাদ্দ ছাড়া গত আট বছরে বিসিবি’র নিজস্ব আয় দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি। এই আয় ক্রিকেটারদের খেলায় অংশগ্রহণ থেকে, মেগা ইভেন্টের আয়োজক হিসেবে বা ক্রিকেটারদের ভালো খেলা ইত্যাদি থেকে। টাকার অঙ্কটা খেয়াল করুন— দেড় হাজার কোটি টাকা!

আগেই বলেছি, বিসিবি’র আয়-ব্যয় সম্পর্কে আমি অজ্ঞ। কিন্তু এটুকু জানি, আমাদের ক্রিকেটারদের কল্যাণেই বিপুল আয় করে বিসিবি। তারা না খেললে বা ভালো না খেললে এই আয়ের প্রশ্নই উঠত না। এটি যেমন সত্য, তেমনই আরেকটি সত্য হলো— দেশের মানুষের পকেট থেকে একটি ফুটো পয়সাও ক্রিকেটাররা নেন না। তাদের নিতেই হয় না। আমি কি ঠিক বলছি?

বিজ্ঞাপন

আরেকটা দিকের কথাও ভাবি। সাকিবরা যে আয় করেন, তা কি করমুক্ত? এমন তো শুনিনি। তার মানে, তাদের আয় থেকে উল্টো বিপুল কর তারা বাংলাদেশকে দেন। আমার স্বল্প জানাশোনা থেকে বলতে পারি, যে টাকা-পয়সা তারা রোজগার করেন, বিদেশে পাচার না করে দেশেই তারা বিনিয়োগ করেন। এমন উদাহরণ এ দেশে বিরল।

বিসিবির টাকায় অন্য কারো হক আছে বলে আমার মন সায় দেয় না। আমাদের নারী ক্রিকেটাররাও যেদিন এমন আয় করবেন, তাদেরও সেদিন তেমন হক জন্মাবে। বিসিবি তাদের জন্য বিনিয়োগ করলে নিশ্চয়ই তারা তার প্রতিদান বিসিবি তথা দেশকে দেবেন।

আবার সরকারও মাঝে-মাঝে ক্রিকেটারদের গাড়ি-বাড়ি-টাকা দেয়। তবে ক্রিকেটাররা তাদের আয়ের মাধ্যমে দেশকে যা দেন, তার তুলনায় এসব উপহার নস্যি।

সারাজীবন তো কোনো ক্রিকেটার খেলতে পারেন না। এক প্রজন্মের ক্রিকেটার তার পরের প্রজন্মের আয়ের ভিত্তি তৈরি করেন। রিলে ব্যাটনের মতো আয়ের চাবি-কাঠি তারা উত্তরসূরীদের হাতেই তুলে দেন। বিসিবি সমৃদ্ধ হয়। অথচ সাবেক ক্রিকেটাররা বিসিবিকে যা কিছু এনে দিয়েছেন, তারা কি সেই অনুপাতে ভালো জীবনযাপন করেন?

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গের সূত্রপাতের উদ্দেশ্য আছে। তা হলো— এ দেশের ক্রিকেটাররা নিজেরা আয় করেন, তারপর সেই আয় থেকেই টাকা নেন। দেশের মানুষের কাছ থেকে এক পয়সাও তারা নেন না। ফলে কথায় কথায় তাদের পাওয়া টাকা-পয়সা নিয়ে প্রশ্ন তোলা সম্ভবত আমাদের মানায় না।

বিসিবি আইন-কানুন মেনে গঠিত ও পরিচালিত হচ্ছে কি না, সে নিয়ে এ দেশের মানুষ কথা বলতে পারে। কিন্তু বিসিবির সিদ্ধান্ত নিয়ে কথায় কথায় সমালোচনার তীর ছোটানোও সম্ভবত ঠিক না। এই প্রতিষ্ঠানটি তার যোগ্যতা দিয়েই বিপুল টাকা-পয়সার মালিক। আপনার আমার দয়া-করুণা বা জনগণের করের টাকায় না। টাকা-পয়সা নিয়ে যদি বলার মতো কিছু থাকে, তাহলে সবার আগে সাবেক ক্রিকেটারদের বলার সুযোগ করে দিন। তাদের হক আছে কথা বলার।

মন খারাপ হলো আমার কথায়? কিন্তু এটিই সত্য। যে টাকা আয়ে আপনার ভূমিকা অতি নগণ্য, যে টাকা তারাই নিয়ে আসছেন, কথায় কথায় সেই টাকা নিয়ে কথা বলা কতটুকু শোভন?

এ দেশের ক্রিকেটাররা যে বিপুল আনন্দ আর মর্যাদা আমাদের দেন, তার জন্য আমার হৃদয় তাদের মঙ্গল কামনায় যেমন ভরে থাকে, তেমনি তাদের কথা উঠলে আপনাতেই মাথা নত হয়ে আসে। কিন্তু দেশবাসী অনেকেই যে ভাষায় তাদের প্রাপ্ত টাকা-পয়সা নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা বলেন, তাতে লজ্জায় আমার মাথা কাটা যায়। যারা এমন দুর্মুখ, তাদের কেন লজ্জা লাগে না অমন করে বলতে? তারা কি আমার চেয়েও বেশি অজ্ঞ?

লেখক: আর রাজী, সহকারী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন