বিজ্ঞাপন

টানা বর্ষণে চট্টগ্রামে পানিবন্দি লাখো মানুষ, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

June 12, 2018 | 12:57 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দুইদিন ধরে টানা বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলায় নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানিতে গত দুইদিনের বেশিরভাগ সময়ই প্লাবিত হয়ে আছে চট্টগ্রাম নগরীর নিচু এলাকাগুলোও। সড়কে পানি উঠে যাওয়ায় চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ও বান্দরবানের যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে, বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ঈদের ছুটি বাতিল করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি-সার্বিক) মো.হাবিবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, প্রবল বর্ষণের কারণে উত্তর চট্টগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রাউজান, রাঙ্গুনিয়া এবং ফটিকছড়িতে মূলত মানুষ বেশি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া এবং বাঁশখালীতেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে গত (সোমবার) রাত থেকে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়ক এবং চট্টগ্রাম-বান্দরবান সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে।

এডিসি হাবিবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, রাউজান পৌরসভার বেশ কয়েকটি স্থানে গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে সড়কে পানি জমে গেছে। এজন্য ছোট-বড় যান্ত্রিক যানবাহন চলতে পারছে না। রিকশা, ভ্যান চললেও একপ্রকার রাঙামাটির সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ আছে।

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোবারক হোসেন সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, উপজেলার বাজালিয়া এলাকায় পাহাড়ি ঢলের কারণে প্রবল বেগে পানি প্রবাহিত হচ্ছে সড়কের উপর দিয়ে। এজন্য চট্টগ্রাম-বান্দরবান সড়কে যানবাহন চলাচল গত (সোমবার) রাত থেকে বন্ধ আছে। সাতকানিয়ার কেরাণীগঞ্জ থেকে কোন গাড়ি বান্দরবানের দিকে যাচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

তিনি জানান, সাতকানিয়া উপজেলার চরতি ইউনিয়নে ১০টি বসতঘর সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। একটি সড়ক ভেঙে গেছে। আমিলাইষ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামও পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাঙ্গু নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ ন ম বদরুদ্দোজা। এর ফলে উপজেলার হাশিমপুর, দোহাজারী, ধোপাছড়ি, কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে বলে তিনি জানান।

এদিকে প্রবল বর্ষণের কারণে ফটিকছড়ি উপজেলায় হালদা নদী এবং কয়েকটি খালের বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে। উপজেলার নারায়ণহাট, ভূজপুর, হারুয়ালছড়ি, সুয়াবিল, পাইন্দং, লেলাং, রোসাংগিরি, নানুপুর, বক্তপুর, ধর্মপুর, জাফতনগর, সমিতিরহাট, আবদুল্লাপুর, ফটিকছড়ি ও নাজিরহাট পৌর এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় কয়েক হাজার মানুষ পুরোপুরি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

এডিসি হাবিবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, মূলত রাউজান ও ফটিকছড়িতেই সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখানে সবচেয়ে বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

বিজ্ঞাপন

রাউজান উপজেলায় জরুরিভাবে ত্রাণ সহায়তা পাঠানো হয়েছে। অন্যান্য উপজেলার জন্য ত্রাণ ও নগদ টাকা চেয়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন এডিসি।

এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এসময়ের মধ্যে ভারি বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা আছে বলেও জানিয়েছে সরকারী এই সংস্থা।

চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ডিউটি অ্যাসিস্ট্যান্ট মাহমুদুল আলম সারাবাংলাকে জানান, স্থল নিম্নচাপের প্রভাবে সঞ্চালনশীল মেঘমালার জন্য বৃষ্টি আরও বাড়বে। সন্ধ্যার পর থেকে আরও ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা আছে। এজন্য পাহাড় ধসের ঝুঁকি প্রবল। চট্টগ্রাম বন্দরসহ বিভিন্ন সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে স্থল নিম্নচাপটি বাংলাদেশের কুমিল্লা অতিক্রম করে ভারতের ত্রিপুরা থেকে আরও উত্তরদিকে অগ্রসর হচ্ছে।

পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের ১১টি টিম চট্টগ্রাম নগরীর ১১টি পাহাড়ে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছেন এডিসি হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকা প্রায় ৫০০ পরিবারকে সরিয়ে নিয়েছি। আরও যারা এখনও সরেনি তাদের সরে যাবার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।

এদিকে প্রবল বর্ষণের কারণে সোমবার আরও একটি দুর্ভোগের রাত কাটিয়েছেন চট্টগ্রাম নগরীর নিচু এলাকায় বসবাসরত জনসাধারণ। বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানিতে নগরীর হালিশহর, আগ্রাবাদ, প্রবর্তক মোড়, ষোলশহর দুই নম্বর গেইট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, শুলকবহর, চকবাজার, বাকলিয়া এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ভোরের দিকে অধিকাংশ এলাকায় পানি নেমে গেলেও আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় দুপুর পর্যন্ত পানি ছিল।

সারাবাংলা/আরডি/এমএইচ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন