বিজ্ঞাপন

মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়িই এখন ‘নতুন গাড়ি’

June 13, 2018 | 7:58 pm

।। রিপন আনসারী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

মানিকগঞ্জ: ঈদ এলেই মানিকগঞ্জের গাড়ির ওয়ার্কশপগুলোতে ব্যস্ত সময় কাটে কারিগর ও রঙমিস্ত্রিদের। পুরনো লক্কর-ঝক্কর গাড়িগুলোতে লাগে নতুন রঙের প্রলেপ, টুকটাক মেরামতের কাজও চলে গাড়িগুলোতে। তাতে ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলোই হয়ে ওঠে ‘নতুন গাড়ি’। আর ঈদযাত্রায় এসব ‘নতুন গাড়ি’ই ছুটে চলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে। আগের বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় একই চিত্র এ বছরেও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত ২৭-২৮ রোজা থেকেই ফিটনেসবিহীন এসব ‘নতুন গাড়ি’তে চড়েই নাড়ির টানে বাড়ি ফেরেন ঘরমুখী মানুষ।

স্থানীয়রা জানান, রাজধানীর সাথে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক পথে যাতায়াতের অন্যতম রুট ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক। ব্যস্ততম এই মহাসড়ককে একসময় বলা হতো মৃত্যুর ফাঁদ। গত কয়েক বছরে কিছুটা কমে এলেও দুর্ঘটনা এখনো কমেনি। আর দুর্ঘটনার অন্যতম কারণই হচ্ছে ফিটনেসবিহীন গাড়ি। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এই গাড়িগুলোর দাপট ঈদ এলেই বেড়ে যায় অনেকাংশে।

সরেজমিনে মানিকগঞ্জের গাড়ি মেরামতের কয়েকটি কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে, ফিটনেসবিহীন ভাঙাচোরা গাড়িগুলো জোড়াতালি দেওয়া হচ্ছে ওয়ার্কশপে। এই মুহুর্তে গ্যারেজের মিস্ত্রিরা পুরনো গাড়ি মেরামতে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন। কোনো গাড়ির ইঞ্জিন বা ব্রেকে সমস্যা কিংবা সিটগুলো ছেঁড়া। আবার কোনো গাড়ির বডিতে রঙ নেই। বহু বছরের পুরনো এসব গাড়ি ওয়ার্কশপ থেকে ‘নতুন’ বানিয়ে নামানো হবে ঈদযাত্রায়।

বিজ্ঞাপন

মানিকগঞ্জের উচুটিয়া এলাকায় রাব্বিা মোটরসের শ্রমিক রবিন জানালেন, ‘ঈদকে সামনে রেখে তাদের গ্যারেজে পুরাতন গাড়ির কাজ বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। গাড়িতে ইঞ্জিনের ক্রটি মেরামত করা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। রঙের কাজও হচ্ছে প্রায় সব গাড়িতেই।’ ২৭ রোজার আগেই এসব গাড়ির কাজ শেষ করে ২৮ রোজায় রাস্তায় নামানো হবে বলে জানান তিনি।

রঙমিস্ত্রি উজ্জ্বল জানালেন, পুরনো গাড়ি ঈদের সামনে রঙ করে নতুন রূপে সাজানো হচ্ছে, যেন যাত্রীরা আকৃষ্ট হয়। সময়মতো ডেলিভারি দেওয়ার জন্য দিন-রাত গাড়িতে রঙের কাজে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে আমাদের।

বিজ্ঞাপন

পাশেই সানি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের দেখা গেল, লক্কর-ঝক্কর মার্কা বেশ কয়েকটি গাড়ি মেরামতের কাজ চলছে জোরেশোরে। কেউ বাসে রঙ করছেন, কেউ ইঞ্জিন খুলে বসেছেন। আবার কেউ সিট ও বডির কাজ করছেন। এই কারখানায় মেরামত করতে আসা যাত্রী সেবা গাড়িচালক ইমরান বলেন, ‘ঈদের সময় সব যাত্রীই চায় রঙ-চঙ করা সুন্দর গাড়িতে উঠতে। তাই ভেতরের সিট ও বডিতে রঙের কাজ করাতে আনা হয়েছে বাস। ঈদের সময় গাড়ির ফিটনেস না থাকলে পুলিশ ও সার্জেন্টরা বিরক্ত করে। আর সারাবছরের চাইতে ঈদের সময় কিছু বাড়তি টাকা কামানো যায়।’

রঙমিস্ত্রি আলিম বলেন, ‘আমরা এখন পুরো ব্যস্ত সময় পার করছি। ২৭ রোজার মধ্যে গাড়িতে রঙ-চঙ শেষ করে ডেলিভারি দিতে হবে। আমাদের হাতের জাদুতে গাড়িগুলোকে একদম নতুন সাজে সাজিয়ে দিচ্ছি। দেখে বুঝার উপায় নেই কোনটা পুরাতন আর কোনটা নতুন।’

এদিকে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা বলছেন, ঈদ এলেই রোডে লক্কর-ঝক্কর গাড়ির দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। ফিটনেসবিহীন বহু বছরের পুরনো গাড়িগুলো রঙ করে রাস্তায় চলাচল করলেও তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কোনো মনিটরিং দেখা যায় না।

বিজ্ঞাপন

বাসযাত্রী রফিকুল ইসলাম বলেন, রাস্তায় দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ রঙ-চঙ মাখিয়ে পুরানো ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলোকেই রাস্তায় নামানো। আসলে এই গাড়িগুলোর অবস্থা ‘ওপরে ফিটফাট, ভেতরে সদরঘাট।’ প্রশাসনের নজরদারি থাকলে এসব গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

মানিকগঞ্জ শহরের বাসিন্দা আব্বাস আলী জানালেন, লক্কর ঝক্কর বাসের পাশাপাশি মহাসড়কে টেম্পো, সিএসজি চলাচল আবারও বেড়ে গেছে। এসব গাড়ি মহাসড়কে চলাচলে বন্ধ না হলে ঈদে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম সারাবাংলা’কে বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এবারের ঈদেও মহাসড়কে আমরা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রেখেছি। তিন দিন আগে থেকে মহাসড়কে ট্রাক উঠতে দেওয়া হবে না। পাশাপাশি ফিটনেসবিহীন গাড়ি যেন রাস্তায় নামতে না পারে, সেদিকে আমরা নজর রাখব।’

সারাবাংলা/টিএম/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন