বিজ্ঞাপন

বিরূপ প্রকৃতি সঙ্গী করেই চট্টগ্রাম ছাড়ছে লাখ লাখ মানুষ

June 14, 2018 | 8:58 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিরূপ প্রকৃতি, ট্রেন-বাস ধরার তাড়া, হুড়োহুড়িসহ নানা ভোগান্তি নিয়ে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ছাড়ছে লাখ লাখ মানুষ। ঈদুল ফিতরের আগের শেষ কর্মদিবসটি পার করে এখন আস্তে আস্তে ফাঁকা হতে শুরু করেছে বন্দরনগরী। সঠিক কোন হিসাব না থাকলেও পুলিশ-রেলসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার হিসেবে, ঈদ উদযাপনের জন্য চট্টগ্রাম থেকে শুধুমাত্র ১০ লাখ মানুষ বাইরের জেলায় যান।

তবে ঈদযাত্রায় এবার চট্টগ্রাম থেকে যাবার সময় সাধারণ মানুষকে খুব বেশি দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে না। এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে সব ট্রেন নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী ছেড়ে গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও যানজট নেই। তবে প্রবল বর্ষণের কারণে পার্বত্য জেলাগুলোতে যেতে মানুষকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ জুন) বিকেলে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, টিকেট কেটে যারা ট্রেনে সিট পেয়েছেন তাদের বাইরে আরও শত, শত যাত্রী উঠছেন ছাড়ে। ট্রেনের ইঞ্জিন রুমেও বসে আছে যাত্রী। হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে ঠাসা রেলস্টেশন।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের প্রকৌশলী রাকিবুল আহসান পরিবার নিয়ে ঈদ করতে যাচ্ছেন ঢাকার উত্তরায়। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণত স্টেশনে লোকজনের ভিড় থাকে। তবে ঈদের কারণে এই ভিড় এখন অস্বাভাবিক হয়ে গেছে। ভিড় ঠেলে টিকেট অনুযায়ী ট্রেনের নির্দিষ্ট বগি খুঁজে নেওয়ার মধ্যে কিছুটা বিড়ম্বনা আছে। এর মধ্যে আবার ব্যাগ-লাগেজ, মোবাইল ঠিকমতো থাকছে কি-না সেটাও দেখতে হচ্ছে।’

বেসরকারি ব্যাংক এশিয়ার কর্মকর্তা ফিরোজা আক্তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে ঈদ করতে যাচ্ছেন টাঙ্গাইলে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ট্রেন তো ঠিকমতোই ছাড়ছে বলে শুনেছি। এমনিতে লোকজনের ভিড় ছাড়া অন্যকোনো সমস্য নেই। তবে বাসা থেকে বের হয়েই বৃষ্টির মধ্যে পড়তে হয়েছে।’

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ ফারুক আহমেদ সারাবাংলাকে জানান, গত ১০ জুন থেকে ঈদের অগ্রিম টিকেট বিক্রি করা ট্রেনগুলোর যাত্রা শুরুর পর এখনও একটি ট্রেনও ছাড়তে দেরি হয়নি। শুক্রবার পর্যন্ত ট্রেনে করে কমপক্ষে দেড় থেকে দুই লাখ যাত্রী চট্টগ্রাম ছাড়বে।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন ঢাকাগামী ৭টি ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে মেইল নামে একটি ট্রেন থাকলেও সেটির টিকেট অগ্রিম বিক্রি করা হয় না। সুবর্ণ এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা, চট্টলা এক্সপ্রেস, মহানগর, মহানগর গোধূলী এবং তূর্ণা নিশীথার টিকেট অগ্রিম বিক্রি করা হয়।

চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুরগামী সাগরিকা ও মেঘনা ছাড়াও দুটি বিশেষ ট্রেন যুক্ত হয়েছে ঈদ উপলক্ষে। ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেস এবং সিলেটগামী উদয়ন ও পাহাড়িকা এক্সপ্রেসেরও অগ্রিম টিকেট বিক্রি হয়েছে। সিলেটগামী জালালাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি হয় না। এছাড়া কুমিল্লার লাকসাম, ফেনীগামী ডেমু ট্রেন ও চট্টগ্রামের অভ্যন্তরীণ রুটের ট্রেনে করেও ঈদের যাত্রী পরিবহন করে রেলওয়ে।

ঈদুল ফিতর উদযাপনে চট্টগ্রাম ছাড়তে ইচ্ছুক যাত্রীদের জন্য গত ১ জুন থেকে অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু করেছিল রেল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে নগরীর দামপাড়া, বিআরটিসি, অলঙ্কার মোড়, কদমতলীসহ বাস স্টেশনগুলোতেও ঘরমুখো যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে। এস আলম কাউন্টারে চালক সাহাব উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, গত তিন-চারদিন ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েতে কোন জ্যাম নেই। পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকায় আসা-যাওয়া করতে পারছি।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামসহ আশপাশের এলাকায় গত শনিবার থেকে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে যা পরে অঝোর বর্ষণে রূপ নিয়েছে। থেমে থেমে বৃষ্টিপাত বৃহস্পতিবারও অব্যাহত আছে। প্রকৃতির এই বিরূপতার মধ্যেও ট্রেনে-বাসে সাধারণ মানুষের মধ্যে বাড়ি ফেরার অন্যরকম উচ্ছ্বাস দেখা গেছে।

দামপাড়ায় সোহাগ কাউন্টারে নগরীর মেহেদিবাগ এলাকার বাসিন্দা এক চিকিৎসকের স্ত্রী শামীমা আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাবার বাড়ি ঢাকার রামপুরায়। শ্বশুরবাড়ি উত্তরা। স্বামীর কর্মস্থল চট্টগ্রামে, ছেলেমেয়েরা এখানকার স্কুলে পড়ছে। ইচ্ছে থাকলেও বছরে ‍দুই ঈদের বাইরে সময় বের করা কঠিন হয়ে পড়ে। এজন্য ঈদের অপেক্ষায় থাকি সারাবছর। ঈদে ঢাকায় গিয়ে মা-বাবা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ি সবাইকে দেখে আসি।’

শুক্রবার চাঁদ দেখা গেলে শনিবার ঈদুল ফিতর উদযাপন হবে। তবে রোববারও ঈদুল ফিতরের সম্ভাবনা আছে। ঈদ যেদিনই হোক, শুক্রবার আরও মানুষ চট্টগ্রাম ছেড়ে যাবে। চট্টগ্রামের বাইরের জেলার মানুষগুলো শুক্রবার সকালেই বন্দরনগরী ছাড়বেন। আর যাদের বাড়ি চট্টগ্রাম শহরের আশপাশের উপজেলায় তাদের অনেকে শুক্রবার বিকেল থেকে রাতের মধ্যে, আবার কেউ কেউ চাঁদ দেখা যাবার পর নগরী ছাড়বেন। অনেকে নগরীতে ঈদের নামাজ আদায় করে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেবেন।

এদিকে ট্রেনে-বাসে ঘরমুখো মানুষকে নিরাপত্তা দিতে নগরীর অলঙ্কার মোড় এবং বহদ্দারহাটে দুটি পুলিশ কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুটি কন্ট্রোল রুমে সার্বক্ষণিক পুলিশ থাকছে। কেউ কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হলে কিংবা বিপদে পড়লে আমরা তাদের সহযোগিতা করছি।’

সারাবাংলা/আরডি/এমও

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন