বিজ্ঞাপন

একটি প্রেস কনফারেন্স ও কয়েকটি প্রশ্নের নমুনা…

June 17, 2018 | 5:55 pm

“ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) এই অবস্থা এবং মামলার এই অবস্থা— সব কিছু মিলে যখন রাজনীতি একেবারে নাই হয়ে গেছে বাংলাদেশে… ” সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করার জন্য ফ্লোর নিয়ে একজন সাংবাদিক এভাবেই এগুচ্ছিলেন। তবে তিনি শেষ করতে পারলেন না।

বিজ্ঞাপন

‘আমি বুঝি নাই, আমি বুঝি নাই, প্রশ্নটাই আমি বুঝি নাই। রাজনীতি নাই হয়ে গেছে বলতে…? এভাবে বলতে বলতে রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে প্রশ্নকর্তার দিকে তাকালেন বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা।

রোববার (১৭ জুন) সকাল সাড়ে ১১টা। বাংলদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদ সম্মেলন চলছিল। সেখানেই এই দৃশ্যের অবতারণা হয়।

প্রশ্নটি করছিলেন একজন সিনিয়র রিপোর্টার। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আর কিছুটা বিরক্তি নিয়ে পাল্টা প্রশ্নটি করছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

বিজ্ঞাপন

কী দারুণ প্রশ্নের ধরন! যেন সাংবাদিকদের মধ্যে নিজেদের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছেন বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা।

এবার প্রশ্নের বাকি অংশ শেষ করার সুযোগ পেলেন ওই সাংবাদিক! প্রশ্নের ভূমিকা অংশে তিনি বললেন, “রাজনীতি পুলিশের ওপর নির্ভর করছে! রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতে নেই এখন, পুলিশের হাতে চলে গেছে।”

এবার বিস্ময় আর ধরে রাখতে পারলেন না মির্জা আব্বাস। যদিও সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিন্তু নেতার ভূমিকা সাংবাদিককে পালন করতে দেখে পোড়খাওয়া রাজনীতিক মির্জা আব্বাস জবাব দেওয়ার দায়িত্ব নিজের কাঁধেই তুলে নিলেন।

বিজ্ঞাপন

প্রশ্নকর্তা সাংবাদিককে পাল্টা প্রশ্ন করে বসলেন তিনি, “এটা সাংবাদিকের বক্তব্য? ভালোই! বলেন, বলেন…”।

সহকর্মীর প্রশ্নের ধরন দেখে সাংবাদিকদের মধ্যেও উঠল মৃদু গুঞ্জন। কমিউনিটিতে কোনো একজনের ‘দলকানা’ অবস্থান বাকিদেরকে বিব্রত করে বৈকি! যদিও এই ধরনের ঘটনা কেবল নয়াপল্টন কার্যালয়েই ঘটে না, গণভবনেও হরহামেশা ঘটে!

প্রশ্নকর্তা প্রশ্ন শেষ করলেন এভাবে— “হ্যাঁ, পুলিশের হাতে চলে গেছে— এটা সাংবাদিকরা দেখছে। সেই অবস্থায় গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে বার বার প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দিচ্ছেন এবং গতকাল ঈদের দিনও বলছেন সবার সামনে!”

হ্যাঁ, শেষ পর্যন্ত সাংবাদিক যা বললেন, তা আর প্রশ্ন হলো না, নাতিদীর্ঘ একটা বক্তব্যই হয়ে রইলো! রীতিমতো রাজনৈতিক বক্তব্য! কিন্তু সাংবাদিক হিসেবে তার এই ‘রাজনৈতিক’ বক্তব্য বিএনপি নেতাদের কাছ থেকে বাহবা কুড়িয়েছে- তা নয়! পাশে বসা দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে মির্জা আব্বাসের নিচুস্বরে কথাপোকথন দেখে অন্তত তাই মনে হলো!

বিজ্ঞাপন

অবশ্য সাংবাদিকের নাতিদীর্ঘ ‘রাজনৈতিক’ বক্তব্যকে প্রশ্ন হিসেবে ধরে নিয়ে শ্লেষের সঙ্গে উত্তর দিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তো সব সময় গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত দেখছেন। তিনি প্রথম থেকেই গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য একে একে নির্বাচন পদ্ধতিকে ধ্বংস করেছেন, বিচার বিভাগকে ধ্বংস করেছেন, প্রশাসনকে ধ্বংস করেছেন। ওনার গণতন্ত্র হচ্ছে উনি এবং তার পার্টি ছাড়া আর কেউ থাকবে না— সেটাই হচ্ছে তার গণতন্ত্র। এই গণতন্ত্র কখনই টিকে থাকতে পারবে না, টিকবে না।’

বিস্ময় তখনো শেষ হয়নি! আরো ছিল বাকি! মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উত্তর শেষ হওয়ার আগেই বিএনপি বিটের ওই সিনিয়র সাংবাদিকের প্রশ্ন— “তাহলে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত না করে তার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) একার শাসন, এক ব্যক্তির শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত করছেন?”

জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সেটাই আমরা বলছি। বরাবরই তা বলে আসছি। আমরা বার বার বলছি, উনি এক ব্যক্তির শাসন, এক দলের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্যই নীল নকশা শুরু করেছেন বহু আগে থেকেই। ত্রয়োদশ সংশোধনী থেকে শুরু করেছেন। পঞ্চদশ সংশোধনী করেছেন। করে দিয়ে এক ব্যক্তির শাসন কায়েম করেছেন।’

এভাবেই শেষ হলো অসম্ভব ‘সুন্দর’ একটা ‘যৌথ’ সংবাদ সম্মেলন। যেখানে রাজনীতিক আর সাংবাদিকরা কথা বললেন একই সুরে। অবশ্য সংবাদ সম্মেলন শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বিএনপির এক নেতা রসিকতা করে বললেন, ‘পরের সংবাদ সম্মেলনে ওই সাংবাদিককে মাইকের সামনে বসিয়ে দেবো’।

লেখক: আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, সারাবাংলা ডটনেট

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন