বিজ্ঞাপন

‘ঢাকার ভেতরে বাইক অ্যাক্সিডেন্ট, বাইরে হেড ইনজুরির রোগী’

June 19, 2018 | 12:10 pm

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে তিনটি বাইক থামিয়ে দু’জন দাঁড়িয়ে আছেন। আরও দুইজন অন্য দু’জনকে ধরে জরুরি বিভাগের ভেতরে নিয়ে গেলেন, আহত দু’জন খুঁড়িয়ে হাঁটছেন। তাদের এক্স-রে পরীক্ষা শেষে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের সঙ্গে অন্তত এক মাস পূর্ণ বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক।

জরুরি বিভাগের বিছানায় কাতরাচ্ছেন অটোরিকশা চালক আমানুল্লাহ মিয়া। মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে এসেছেন হাসাতালে। পুরো শরীর রক্তে ভেজা আমানুল্লাহর, স্যালাইন চলছে- এক্স-রে পরীক্ষা করা হয়েছে। আমানুল্লাহ মিয়ার স্ত্রী রাশীদা বেগম জানালেন, সকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের লোকশিল্প জাদুঘরের কাছে চৌরাস্তার মাথায় দুর্ঘটনার কবলে পড়েন আমানুল্লাহ। অটোরিকশাটিকে পেছন থেকে একটি বাস ধাক্কা দিলে আমানুল্লাহ এবং কয়েকজন যাত্রী আহত হন, তবে তারা কোথায় কী অবস্থায় আছেন জানেন না রাশীদা বেগম।

তিনি আরও বলেন, এক্স-রে পরীক্ষা করানোর পর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার ডান পা ভেঙে গেছে, মাথার আঘাত গুরুতর। আর প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে, অনেক রক্তের প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

কারওয়ান বাজার থেকে মালাপত্র কিনে বাসায় ফেরার পথে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বশীর হোসেনকে ধাক্কা দেয় একটি মোটরসাইকেল। এসময় বশীর মিয়ার সঙ্গে ছিলেন আবুল হোসেন। তিনি বলেন, সকাল বেলায় রাস্তা ফাঁকা পেয়ে শো শো শব্দ করে একটি মোটরসাইকেল পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে বশীরকে মেরে দিয়ে যায়। বশীর হোসেনের ডান হাতের কনুই থেকে কবজির মাঝের অংশটা পুরোটা থেতলে গিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন. “গত কয়েক বছর ধরেই দুই ঈদে ছুটির সময় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে। রাস্তা ফাঁকা পেলেই চালকদের বেপরোয়া মনোভাব, উচ্চগতি সড়ক দুর্ঘটনার কারণ। আর বর্তমান সময়ে তরুণ প্রজন্মের হাতে মোটরসাইকেল খুব ভয়ংকর।”

বিজ্ঞাপন

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) সোমবার (১৮ জুন) দেখা যায়, জরুরি বিভাগের প্রতিটি বিছানায় রোগী। ডাক্তার-নার্সরা তাদের চিকিৎসা দিতে ব্যস্ত। হাসপাতালের রেজিস্ট্রার খাতা থেকে জানা যায়, ঈদের তৃতীয় দিনে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৮১ জন, এর মধ্যে ভর্তি হয়েছেন ৪০ জন। ১৭ জুন এসেছিলেন ১৮৬ জন, ভর্তি হয়েছেন ৭১ জন, ১৬ জুন এসেছিলেন ১৭৩ জন, ভর্তি হয়েছেন ৫৯ জন এবং গত ১৫ জুন এসেছিলেন ১৩৮ জন, যার মধ্যে ভর্তি হয়েছেন ৫৮ জন।

জরুরি বিভাগ ছাড়াও বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় একই সংখ্যক রোগী।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত সিনিয়র স্টাফ নার্স বিউটি বিশ্বাস সারাবাংলাকে বলেন, প্রতিবছর ঈদের সময় অপ্রত্যাশিত হাতে দুর্ঘটনায় আহত রোগী আসতে থাকে। বিউটি বিশ্বাসের ভাষায়, ‘অনেক রোগী, প্রচুর রোগী।’

বিউটি বিশ্বাস বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শতকরা ৮০ ভাগই সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী, এর মধ্যে ৮০ শতাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা, বাকি ২০ শতাংশও সড়ক দুর্ঘটনায় আহত।

বিজ্ঞাপন

বিউটি বিশ্বাস আরও বলেন, পাঁচ-ছয় বছর আগেও প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনার রোগী আসতো ২০ থেকে ৩০ জন আর এখন আসে এর তিনগুণ। ঈদে এই সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়।

ঢাকার ভেতরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা আর ঢাকার বাইরে থেকে মাথায় আঘাত পেয়ে আসা রোগীর সংখ্যা বেশি, জানালেন বিউটি বিশ্বাস।

পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. শুভ প্রসাদ দাস সারাবাংলাকে বলেন, গত কয়েকবছর ধরেই ছুটির এই সময়ে সড়ক দুর্ঘটনার হার বেড়ে যায়। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার রোগী বেশি আসছে।

পঙ্গু হাসপাতাল ছাড়াও রেকর্ডসংখ্যক সড়ক দুর্ঘটনার রোগী আসছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। ঢামেক হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. কিশোর সাহা সারাবাংলাকে বলেন, প্রতিবছরই ঈদের সময়ে ঢাকার রাস্তা ফাঁকা হওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। আর এর মধ্যে বেশি থাকে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। ঢাকার ভেতরে বাইক আর বাইরে থেকে যেসব রোগীরা আসছেন তাদের মধ্যে হেড ইনজুরি নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যাই বেশি।

তিনি বলেন, রাস্তা ফাঁকা পেয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে তরুণ প্রজন্মের এক ধরনের প্রতিযোগিতা গত কয়েক বছর ধরেই দেখছি। ছুটি শুরু হওয়ার পর থেকেই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার রোগী আসছে প্রতিদিন। অসংখ্য দুর্ঘটনায় মৃত্যুও হচ্ছে, কিন্তু এ নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।

সারাবাংলা/এটি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন