বিজ্ঞাপন

দেশে স্বাস্থ্যসেবা পায়নি রোহিঙ্গা শিশুরা, নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত

December 22, 2017 | 9:30 am

জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: যেসব প্রতিষেধক টিকা পাঁচ বছর বয়সের আগেই পাওয়ার কথা নিজ দেশে সেগুলো পায়নি রোহিঙ্গা শিশুরা। ফলে তারা ধনুষ্টংকার, ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, পোলিও, হাম, যক্ষ্মা, হেপাটাইটিস -বি, হেমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো রোগগুলোর চরম ঝুঁকিতে পড়েছে।

বিশ্বব্যাপী শিশুদের পাঁচ বছর বয়সের আগেই এসব রোগের প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এমন স্বাস্থ্য সেবা এর আগে সামান্যই পৌঁছাতে পেরেছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের কাছে।

তারই ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে এই শিশুরা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে।

বিজ্ঞাপন

ইউনিসেফ বলছে, রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে ৬০ শতাংশের বেশি শিশু এখন মারাত্মক রোগে আক্রান্ত কিংবা রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে।  সংস্থাটি মনে করে,  ওই প্রতিষেধক টিকাগুলো নেওয়া থাকলে এসব রোগ এড়ানো যেতো।

ইউনিসেফ তথ্য দিচ্ছে, দুই সপ্তাহে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কেবল ডিফথেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েই মারা গেছে ১১টি শিশু। আক্রান্ত হয়েছে অন্তত ১ হাজার ১শত ৩৮ টি শিশু।

বিজ্ঞাপন

আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা আইএমও’র হিসাবে এই সংখ্যা আরও বেশি। আইএমও বলছে মোট ডিপথেরিয়া আক্রান্ত ১৩২৬টি শিশু। যার মধ্যে মারা গেছে ১৯ টি।

এসবের পাশাপাশি চরম অপুষ্টি, চর্মরোগসহ নানা রোগ-বালাইয়ে ভুগছে শিশুরা।

ইউনিসেফের মতে, ক্যাম্পের ২৫ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে আক্রান্ত, যা তাদের মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

গত ২৫ আগস্ট থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৬ লাখ ৫৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ শিশু। যার বেশিরভাগ শিশুই স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব তাদের এইসব রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টরা বলেন, কলেরার ঝুঁকি আগে থেকেই ছিলো। এবার ডিফথেরিয়ার প্রার্দুভাব দেখা দিয়েছে।

ডিপথেরিয়াই এখন মেজর ইস্যু হিসেবে দেখা দিয়েছে, মন্তব্য করেন ইউনিসেফের কমিউনেকশন্স স্পেশালিস্ট এএম শাকিল ফয়জুল্লাহ।

শাকিল বলেন, এসব রোহিঙ্গারা যখন নিজ দেশ মিয়ানমারে ছিল তখন তারা এ স্বাস্থ্যসেবা, টিকা, কিংবা ওষুধ পায়নি। বাংলাদেশে এসেই জীবনে প্রথমবারের মতো ওরা এসব স্বাস্থ্য সুবিধা পাচ্ছে।

এই শিশুদের অপুষ্টির দিকটিও দেখা হচ্ছে গুরুত্বের সাথে। শরণার্থী শিবিরের মোট শিশুর অর্ধেকেরও বেশি অপুষ্টিতে ভুগছে, ৭ ভাগ রয়েছে মারাত্মক ঝুকিতে, এ তথ্যও ইউনিসেফের।

সংস্থাটির  কান্ট্রি হেড এডওয়ার্ড বেগবেডার মনে করেন, এই শিশুরা অপুষ্টির কারণেই মারা যেতে পারে। এদের চিকিৎসা প্রয়োজন।

ইয়াঙ্গুনে জাতিসংঘের একটি সংস্থায় এক সময় নিযুক্ত ছিলেন এমন একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, ইয়াঙ্গুনে নিযুক্ত থাকা কালে এক দুইবার তিনি ওই এলাকায় যেতে পেরেছেন তবে তা স্রেফ দেখার জন্য।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবন যাপন দেখে বিশ্বাস হয়নি – এত দুর্দশা, অধিকারবিহীন কোন জনগোষ্ঠী হতে পারে। তারা এলাকার বাইরেও যেতে পারতোনা অনুমতি ছাড়া। এমনকি বিয়েও করতে পারতোনা অনুমতি না নিয়ে। ওদের জাতীয় পরিচয়পত্র ছিলোনা বা থাকলেও সেটা ছিলো নিম্নমানের বা অর্থহীন।

ইউনিসেফ আর ইউএনএইচসিআর ঐ এলাকায় কিছু কাজ করতো এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, এ কাজে প্রতিকূলতার অন্ত ছিলোনা। এত অবিশ্বাস, এত অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের মধ্যে দিয়ে এগুনো সম্ভব ছিলো না।

ইউনিসেফের চাপে টিকাদান কর্মসূচি চলতো তবে তাও ছিলো দায়সারা। স্থানীয়রাও বাচ্চাদের টিকা দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলোনা, জানান ওই কর্মকর্তা।

কক্সবাজার জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এমরান খান বলেন, মিয়ানমারে থাকা অবস্থায় চিকিৎসাহীনতা, অপুষ্টিসহ নানা কিছুতে ভুগছিল এসব শিশু। সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে শীতের প্রকোপ। আর ক্যাম্পগুলোতে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব হয় না বলেই শিশুরা এ ধরণের রোগে বেশি ভুগছে।

তবে সরকারসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা, দেশি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এখানে শিশুদের নিয়ে কাজ করছে, ফলে পরিস্থিতি পাল্টাবে, এমনটাই মত দেন এই সমাজসেবা কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, পানিবাহিত রোগসহ অনেক ঝুঁকি আমরা মোকাবেলা করেছি, আশা করি এক্ষেত্রেও অধিদপ্তর ভূমিকা রাখতে পারবে।

ইতোমধ্যেই কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার প্রায় ২ লাখ ৫৫ হাজার শিশুকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে, গত ১২ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ সরকার, ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ভ্যাকসিন অ্যালয়েন্সের সহযোগিতায় ডিফথেরিয়া ও অন্যান্য প্রতিরোধযোগ্য রোগের জন্য টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেছে। উখিয়া ও টেকনাফের ১২ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৬ সপ্তাহ থেকে ৬ বছর বয়সীরা এ কর্মসূচির আওতায় আসবে।

টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে ইউনিসেফ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর এডওয়ার্ড বেগবেডার বলেন, ডিফথেরিয়াসহ অন্যান্য রোগগুলোর প্রাদুর্ভাবের ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে শিশুদের চরম ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। তাই এসব রোগ থেকে তাদেরকে রক্ষা করতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতেই টিকা দেওয়ার উদ্যোগ।

আর স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলিতে ডিফথেরিয়ার  প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ডিফথেরিয়া মোকাবিলায় সহায়তা করার জন্য বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ এবং অন্যান্য সহযোগী সংস্থাকে ধন্যবাদ জানান অধ্যাপক আজাদ।

সারাবাংলা/জেএ/জেডএফ/এমএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন