বিজ্ঞাপন

ফ্যাটি লিভার হবে লিভার প্রতিস্থাপনের অন্যতম কারণ!

June 25, 2018 | 8:46 am

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৩৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ মানুষ লিভারের চর্বি বা ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত। অর্থাৎ দেশে মোট সাড়ে ৪ কোটি মানুষ ফ্যাটি লিভার রোগে ভুগছে। ৪৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সীদের মধ্যে এ রোগের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। আর সঠিক সময়ে এর প্রতিরোধ না করা হলে ধীরে ধীরে লিভারের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেয়ে লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকিতে ফেলে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ ফ্যাটি লিভার বিশ্বজুড়ে লিভার প্রতিস্থাপনের অন্যতম কারণ হবে।

প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগের বাহ্যিক কোনো লক্ষণ প্রকাশ না পাওয়াতে এ রোগ সর্ম্পকে মানুষ সচেতন নয়। যার কারণে বাংলাদেশে রোগটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ফ্যাটি লিভার বা লিভাবে চর্বি জমার কারণে এর কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলমের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বারডেম হাসপাতাল ও ফ্লোরিডা ইউনির্ভাসিটির কয়েকজন গবেষকের করা এক গবেষণায় বাংলাদেশের ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত রোগীদের এ সংখ্যা উঠে আসে। গবেষক দলটি সারাদেশে ফ্যাটি লিভার রোগ বা লিভারে চর্বি রোগের প্রাদুর্ভাব রোগ নির্ণয়ের জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকা এবং দেশের চারটি বিভাগের চারটি জেলা ও চারটি উপজেলাতে এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী ১ হাজার ৬৯৪ জন পুরুষ এবং ১ হাজার ৮৮ জন সুস্থ  নারী এ গবেষণাতে অংশগ্রহণ করেন।

গবেষণা থেকে পাওয়া ফলাফলে জানা যায়, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ মানুষ লিভারে চর্বি রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে গ্রামের ৭৩ দশমিক ২১ শতাংশ স্থূলকায় নারী রয়েছেন সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে, ডায়াবেটিস আক্রান্তদের মধ্যে ৭১ শতাংশ এবং উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্তদের মধ্যে ৬১ শতাংশ মানুষের মধ্যে লিভারে চর্বি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

চিকিৎসকরা বলছেন, ওজন বেশি হলে লিভারে চর্বি রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি থাকে। গবেষণাতেও এর সত্যতা মিলেছে। সেখানে দেখা যায়, স্থূলকায় আক্রান্তদের ৬৪ শতাংশ এ রোগে আক্রান্ত আর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায় ঝুঁকি। সাধারণত ৪৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সীদের মধ্যে শতকরা ৫৫ শতাংশ মানুষের এ রোগের প্রাদুর্ভাব সবচাইতে বেশি।

স্থূলকায় আক্রান্ত হলে শতকরা ১০ শতাংশ ৭১ গুণ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বাড়ে। ডায়াবেটিস আক্রান্তদের ঝুঁকি প্রায় শতকরা ২ দশমিক ৭১ গুণ বেশি। এ ছাড়া বিবাহিতদের মধ্যে লিভারে চর্বি রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা গেছে। আবার যাদের আয় কম তাদের তুলনায় উচ্চ আয়ের মানুষের ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হবার হার প্রায় দেড় গুণ বেশি।

বাংলাদেশ হেপাটোলজি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম সারাবাংলাকে এ বিষয়ে বলেন, লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ লিভারে চর্বি জমাজনিত প্রদাহ। চিকিৎসাবিজ্ঞানে একে স্টিয়াটো হেপাটাইটিস বলা হয়।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের পর ফ্যাটি লিভার ক্রনিক হেপাটাইটিসের অন্যতম কারণ। আর লিভারে চর্বি বা ফ্যাটি লিভারের মূল কারণ ফাস্ট ফুড বা জাঙ্ক ফুড। ফ্যাটি লিভারের কারণে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং শরীরে ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার সঙ্গে সরাসরি সর্ম্পকিত। আমাদের দেশে আশঙ্কানজক হারে এ রোগের প্রার্দুভাব বাড়ছে বলেও মন্তব্য করেন অধ্যাপক শাহিনুল আলম। তিনি বলেন, এ হারে যদি রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে তাহলে ভবিষ্যতে লিভার প্রতিস্থাপনের অন্যতম কারণ হতে যাচ্ছে এই ফ্যাটি লিভার।

অন্যদিকে, ফ্যাটি লিভারের জন্য শতভাগ কার্যকর কোনো ওষুধও আবিষ্কৃত হয়নি বলে মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব।

তিনি সারাবাংলাকে বলেন, স্টিয়াটো হেপাটাইটিসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ পরবর্তীতে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হতে পারে। এদের লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হবারও ঝুঁকি অনেক বেশি। এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরে লিভার প্রতিস্থাপনের অন্যতম কারণ হতে চলেছে এই ফ্যাটি লিভার। কারণ, ফ্যাটি লিভার থেকে একবার লিভার সিরোসিস হলে সাত বছরের মধ্যে ১৫ শতাংশ রোগীর এবং দশ বছরের মধ্যে ২৫ শতাংশ রোগীরা মৃত্য ঝুঁকিতে থাকেন। তাই ফ্যাটি লিভার চিকিৎসার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে, লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রতিরোধ করা।

যার কারণে, অতিরিক্ত মেদ কমিয়ে ফেলতে হবে। আবার অপরিকল্পিতভাবে ওজন কমালে তাতে লিভার সিরোসিসের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট, শারীরিক ব্যায়াম কিংবা ওষুধ খেতে হবে। যদিও, ফ্যাটি লিভারের জন্য শতভাগ কার্যকর কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। তবে কিছু ওষুধ রয়েছে যেগুলো উপকারী তবে সেগুলো সেবনে চিকিৎসকের পরমার্শ এখানে খুব জরুরি।

সারাবাংলা/জেএ/এমআই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন