বিজ্ঞাপন

মানেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন কোচ সিসে

June 25, 2018 | 3:50 pm

।। স্পোর্টস ডেস্ক ।।

বিজ্ঞাপন

এবারের বিশ্বকাপের সবথেকে কম বয়সী কোচ ৪২ বছর বয়সী সেনেগালের অ্যালিও সিসে। ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার এই কোচকে দেখে বুঝার উপায় নেই, তিনি একটি জাতীয় দলকে নিয়ে বিশ্বকাপে এসেছেন। নিজেদের প্রথম ম্যাচে ফেভারিট পোল্যান্ডকে হারিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচে জাপানের বিপক্ষে ড্র করেছে তার শিষ্যরা। সেনেগাল গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলবে কলম্বিয়ার বিপক্ষে।

ক্যামেরার চোখে বিশ্বের অগনিত ফুটবল ভক্ত এবার দেখছেন ডাগআউটে থেকে সিসের দুরন্তপনা, স্টাইলিশ দিক-নির্দেশনা। দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে প্রস্তুত তার ছাত্ররা। সিসের দলের সবথেকে বড় অস্ত্র লিভারপুলে খেলা সাদিও মানে। দুর্দান্ত মৌসুম পার করা মানেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন কোচ সিসে।

জাপানের বিপক্ষে গত ম্যাচে সিসের সেনেগাল দুইবার এগিয়ে গেলেও ২-২ গোলের ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে। তাতে, বেশ চটেছেন সিসে, ‘আমরা মোটেই ভালো খেলিনি। পোল্যান্ডের বিপক্ষে আমার ছাত্ররা অসাধারণ পারফর্ম করলেও জাপানের বিপক্ষে তাদের সেভাবে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনেক গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেছে। দুইবার লিড নিয়েও তারা ম্যাচের ফল নিজেদের দিকে নিতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন শেষ ম্যাচে কলম্বিয়ার বিপক্ষে আমাদের জিততেই হবে।’

বিজ্ঞাপন

২০০২ সালের জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বকাপে সেনেগাল প্রথম খেলে। নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে প্রথম বিশ্বমঞ্চে অংশ নিয়ে সেবার কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল আফ্রিকান এই দেশটি। সেটিই তাদের প্রথম ও শেষ বিশ্বকাপ। এরপর আর বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে উঠতে পারেনি সেনেগাল। আফ্রিকা মহাদেশের ইতিহাসে মাত্র তিনটি দেশ এখন পর্যন্ত কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে পেরেছে। ১৯৯০ বিশ্বকাপে ক্যামেরুন, ২০০২ বিশ্বকাপে সেনেগাল এবং ২০১০ বিশ্বকাপে ঘানা খেলেছে শেষ আটে। গর্ব করার মতোই ব্যাপার সেনেগালের জন্য। সেই আলোচিত বিশ্বকাপে সেনেগালের হয়ে খেলেছিলেন বিশ্বকে চমকে দেওয়া ফুটবলার আল হাজি দিওফ, মুসা এনদায়ি, পাপা বুওবা দিওপ, দেশটির সর্বোচ্চ ম্যাচ এবং সর্বোচ্চ গোলদাতা হেনরি কামারা, টনি সিলভারা। সেই গোল্ডেন টিমের অধিনায়ক ছিলেন সিসে।

সিসে বর্তমান দলের সেরা তারকা সাদিও মানেকে দেখছেন বিশ্বসেরা এক ফুটবলার হিসেবে। তিনি যোগ করেন, বিশ্বসেরা ফুটবলার হতে একটা খেলোয়াড়কে যা যা করতে হয়, সাদিও মানে তার সবটুকুই করছে। তার কাছে আমাদের চাওয়া অনেক। স্পটলাইটের নিচে থাকা আমার এই ছাত্র দিনকে দিন নিজেকে আরও উপরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। পোল্যান্ডের বিপক্ষেও সে দুর্দান্ত ছিল, কিন্তু জাপান ম্যাচে একটি গোল করলেও আমি চেয়েছিলাম সে আরও বেশি স্কোর করুক। আমি কলম্বিয়ার বিপক্ষে মানেকে আরও ক্ষুরধার দেখতে চাই। আশা করি আমি আস্থা হারাবো না।

খেলোয়াড়ি জীবনে সিসে ছিলেন ডিফেন্ডার, খেলেছিলেন মিডফিল্ডার হিসেবেও। ১৯৯৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত খেলেছেন ক্লাব ক্যারিয়ারে। জাতীয় দলে খেলেছেন ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত। সেনেগালের জার্সিতে ৩৫ ম্যাচ খেলা সিসে ক্লাবের হয়ে খেলেছেন লিলে, সেডান (দুই কিস্তিতে), পিএসজি, মন্টিপিলিয়ার, বার্মিংহাম সিটি, পোর্টসমাউথ, নিমেসের জার্সিতে। ফ্রান্স আর ইংল্যান্ডের ক্লাব গুলোতে মাঠ মাতানো সিসে খেলেছেন ১৫৩টি ম্যাচ। সিসের হাত ধরে আরেকবার ক্রান্তিকাল পার করেছে সেনেগাল। খেলোয়াড়ি জীবনে দেশের জার্সিতে যেভাবে লড়েছেন,কোচ হিসেবে এই দলটাকেও ঠিক সেভাবেই গড়েছেন। নিজের সবকিছু দিয়ে হলেও সেনেগালকে দিয়ে আরেকটি রূপকথার গল্প তৈরি করাতে চেষ্টা করবেন সিসে-সে কথা বলাই যায়।

বিজ্ঞাপন

দ্বিতীয়বারের মতো ফিফা বিশ্বকাপের ২১তম আসরে জায়গা করে নিয়েছে দেশটি। সেনেগাল অনূর্ধ্ব-২৩ এর দায়িত্ব ছাড়ার পর কোচ হিসেবে মূল দলে সিসে দায়িত্ব নিয়েছেন ২০১৫ সালে। ফের একবার গর্জে উঠেছে আফ্রিকা মহাদেশের এ দেশটি। এবার ফুটবলার হিসেবে সিসে উপস্থিত না থাকলেও সাদিও মানেদের কোচ হিসেবে তিনি রয়েছেন ডাগআউটে। কোচ হিসেবে ২০০২ সালের পর আরেকটি সেরা প্রজন্ম সিসের হাতে। যথেষ্ট ব্যালেন্সড দল এবার সিসের সেনেগাল। একই সাথে অনেকদিন ধরে খেলোয়াড়দের অনুশীলন করিয়েছেন তিনি। যার কারণে দলের বোঝাপড়াটাও চমৎকার। খেলোয়াড়দের গড় বয়স ছাব্বিশ থেকে সাতাশের মধ্যে। বলতে গেলে সিসের দলে তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার এক অপূর্ব সমন্বয়। সিসে এবার যে দল নিয়ে বিশ্বকাপে গিয়েছেন, বড় কিছুর আশা দেখতেই পারে সেনেগাল। আর সিসের বিশ্বাস এবার ইতিহাস গড়ার সময় এসেছে সেনেগালের। এবার আফ্রিকার সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা হতে পারে বাছাইপর্বে কোনো ম্যাচ না হারা সিসের সেনেগালই।

সারাবাংলা/এমআরপি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন