বিজ্ঞাপন

অভিযোগের পাহাড়ে ডা. রিয়াদ, নির্বিকার বিএসএমএমইউ প্রশাসন

January 10, 2018 | 10:14 pm

জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

এটাই প্রথম নয়, বঙ্গন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক ডা. রিয়াদের বিরুদ্ধে রয়েছে আরও নানান অভিযোগ। অতীতে নারী রোগীদের সঙ্গে অশালীন আচরণের অভিযোগ তো ছিলই, রোগীর স্বজনকে আঘাত করে রক্তাক্ত করেছেন এই চিকিৎসক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রিয়ভাজন এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সদস্য হওয়ায় বারবার অপরাধ করেও পার পেয়ে যান ডা. রিয়াদ সিদ্দিকী প্রাণ।

বিএসএমএমইউ’র একাধিক সূত্র সারাবাংলাকে জানায়, এবারই প্রথম নয়, ডা. রিয়াদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আরও উঠেছে। কিন্তু বরাবরই তাকে প্রশ্রয় দিয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একইসঙ্গে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নির্বাহী সদস্য হওয়ায়- ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে বারবারই তিনি চাপা দিয়ে দেন সব অপকর্মের তথ্য। আর নিজের খুঁটি শক্ত করতে ডা. রিয়াদ কয়েকজন চিকিৎসককে নিয়ে গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট।

চিকিৎসকরাই বলছেন, যে ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যালয়, সেখানে কিভাবে ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটে- সেটাই বড় প্রশ্ন!

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডা. রিয়াদের একাধিক সহকর্মী বলেন, এর আগে যেসব অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল- সেগুলোর বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলেই আজ খোদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন ঘৃণ্য কাজ হয়েছে। তাদের মন্তব্য, হাসপাতাল-বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলেই জানেন।

কয়েকমাস আগে ঘটে যাওয়া আরেক নারীর অভিযোগের কথা তুলে ধরে তারা বলেন, তখন যদি আমলে নেওয়া হতো। অন্তত তিরষ্কার করা হতো- তাহলে এত বড় ঘটনা ঘটানোর সাহস পেতেন না ডা. রিয়াদ।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, এর আগে হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসা এক নারী রোগী তার বিরুদ্ধে অশালীন আচরণের লিখিত অভিযোগ নিয়ে হাসপাতাল পরিচালকের কক্ষে যান। খবর পেয়ে ডা. রিয়াদের কয়েকজন সহযোগী তখনই পরিচালকের কক্ষে হাজির হন এবং ওই নারী ও তার বাবাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। শুধু তাই নয়, হুমকি-ধমকি দিয়ে তাদের পরিচালকের কার্যালয় থেকে বের করে দেয়। বলা হয়, ভবিষ্যতে তাদের হাসপাতাল ক্যাম্পাসে দেখা গেলে ক্ষতি হবে।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রি. জেনারেল আব্দুল্লাহ আল হারুণ সারাবাংলাকে বলেন, আমি তখন নতুন ছিলাম, ডা. রিয়াদকে আমি চিনতামও না। আর এতদিন পর এসে সেই ঘটনা মনেও করতে পারছি না।

বুধবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ তলায় ডা. রিয়াদের কক্ষে তালা ঝুলতে দেখা যায়। প্রশাসন থেকে বলা হয়, বাবার অসুস্থতার কথা জানিয়ে আজ ১০ জানুয়ারি থেকে ছুটিতে রয়েছেন। তবে কতদিনের ছুটি নিয়েছেন- তা জানাতে পারেননি কেউ।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাদি কিংবা থানা থেকে কেউ যোগাযোগ করেনি দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান। হাসপাতালের পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল হারুণও একই কথা বলেছেন।

তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিপন কুমার বিশ্বাস সারাবাংলাকে বলেন, তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

প্রক্টর ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কিছু জানি না। কাল রাতে টেলিভিশন দেখে এবং আজ সকালে পত্রিকা পড়ে এ সর্ম্পকে  জানতে পারি। তারপর সকালেই প্রশাসনের সবাই মিলে আমরা বসেছিলাম, সেখানে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবীও।

তিনি বলেন, যেহেতু বিষয়টি এখন আদালতে চলে গেছে, তাই এটি এখন আদালতের এখতিয়ার। আমরা আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি- জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, আমরা আদালতের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না, সত্যিকার অর্থে ডা. রিয়াদ সিদ্দিকী যদি দোষী হন তাহলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার সাজা হবে। একইসঙ্গে ডা. রিয়াদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যদি মিথ্যা হয় তাহলে অভিযোগকারীও শাস্তি পাবেন- সে দাবি করছি।

এ প্রসঙ্গে জানতে ডা. রিয়াদ সিদ্দিকীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলে প্রতিবারই বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ১০ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি ফেসবুকে ওয়ালে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ অস্বীকার করেন।

ডা, রিয়াদ বলেন, ‘বন্ধুরা, সামাজিক মাধ্যমগুলোতে আমাকে নিয়ে যে অপপ্রচার চলছে, তাতে আমি খুব মর্মাহত, সারা জীবন সততার সাথে চিকিৎসা ও জীবনযাপন করেছি, আমাকে টাকা চেয়ে ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছিল তাতে আমি সারা দেইনি বলে আজ ওই কুচক্রী মহল আমার নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছে’।

চিকিৎসা পেশার ওপর হামলা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বন্ধুরা আপনারা আমাকে চেনেন আমি কেমন, আজ মহান ডাক্তারি পেশার উপর বারবার হামলা হচ্ছে… আমার আইনের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা আছে.. সত্য প্রমাণিত হবে.. আমি একজন ডাক্তার, একজন বাবা, একজন স্বামী, এবং একজন সন্তান হিসেবে আপনাদের সহযোগিতা চাইছি… আমার পাশে এসে দাড়ান’।

এই স্ট্যাটাসের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে টিএসসি পর্যন্ত প্রতিটি এলাকায় সিসি ক্যামেরার অর্ন্তভুক্ত, সেখানে প্রতিটি বিষয় নিশ্চয়ই রয়েছে। তার কাছে যদি টাকা চাওয়া হয়, সেই এসএমএসটিও ডা. রিয়াদের মোবাইলে ফোনে থাকার কথা।

ডা. রিয়াদ স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সদস্য হওয়ায় এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সারাবাংলা/জেএ/এটি/এমএম

আরও পড়ুন:

রোগীকে ধর্ষণের অভিযোগে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা

* প্রতিবাদ করলে মেরে ফেলার হুমকি দেন ওই চিকিৎসক

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন