বিজ্ঞাপন

আশিক মুস্তাফা-এর ছোটদের গল্প ‘দাভাইয়ের অনলাইন ক্লাস’

May 3, 2022 | 3:13 pm

চিৎকার দিয়ে হাঁচড়ে-পাঁচড়ে ছাদে এলো অরণ্য। অইতো, দাভাই খুব মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করছেন। কার? অরণ্যের। অরণ্য কথা বলতে শেখার পর থেকে দাদাভাইকে দাভাই বলেই ডাকে। এখনও। দাভাই আগে শহরে থাকলেও এখন থাকেন গ্রামে। মাঝেমধ্যে শহরে আসেন। কাজে। কাজ শেষে চলে যান। কেউ দাভাইকে জিজ্ঞেস করলে বলেন,
‘ইদে চান্দে শহরে আসি।
তাছাড়া গ্রামেই আমার বাস।
গ্রামের বাতাসেই নিই নিঃশ্বাস।’

বিজ্ঞাপন

এই ইদে-চান্দে আসা দাভাই কিছুদিন আগে শহরে এসে পড়েছেন লকডাউনে। কাউন্টডাউন শুরু করে দিয়েছেন লকডাউন ঘোষণার পর থেকেই। কবে শেষ হবে আর কবে ফিরবেন বাড়ি! কিন্তু কিছুই করার নেই দেখে অরণ্যের ক্লাসে মনোযোগ দেন। অনলাইন ক্লাস। প্রথম শ্রেণির ‘আমার বাংলা বই’, ‘প্রাথমিক গণিত’ ও ‘ইংলিশ ফর টুডে’ পড়ান মিস। আর তা মনোযোগ দিয়ে শোনেন অরণ্যের দাভাই। নোট নেন। হোমওয়ার্ক করেন। ছবি তুলে আবার এসব পাঠিয়ে দেন মিসদের কাছে। দাভাই এত্তো এত্তো কাজ করেন আর অরণ্য দাভাইয়ের মাথায় কালো চুল খোঁজে। দাভাই ক্লাস করেন অরণ্য চুপি চুপি দাভাইয়ের মাথায় চুইংগাম লাগিয়ে আকাশে কাক দেখে! দাভাই ক্লাস করেন আর অরণ্য মোড়ায় বসে দাভাইয়ের কাঁদে পা তুলে গেম খেলে। মায়ের মোবাইলে। অনলাইন ক্লাস একটা মোবাইলে হয় না তার। দুইটা লাগে। তাছাড়া ঘরেও করা যায় না ক্লাস। ছাদে করতে হয়। তাই তো বাবা আর মায়ের মোবাইল দুটো নিয়ে দাভাইয়ের সঙ্গে সে এখন নিয়মিত ছাদে ক্লাস করে। তার এত্তো কাজ! এই কাজের ভিড়ে ক্লাসে মনোযোগ দেওয়া যায়? তাই দাভাই মনোযোগ দিয়ে তার ক্লাস করেন।

সেদিন ড্রইং ক্লাস চলছে। ৪০ মিনিটের ক্লাস। ২০ মিনিট হয়ে গেছে। হঠাৎ ডাউনলোড নামের আইডি থেকে একজন বলে, ‘মিস, মিস, আমার মা এতো খারাপ কেন?’

দু-একজন হেসে ওঠে। দাভাইয়ের চক্ষু চড়কগাছ! কি বলেরে পিচ্চিটা?

বিজ্ঞাপন

মিস কিছু বলছেন না। ক্লাসে মনোযোগী। ডাউনলোড আইডি থেকে ফের বলে, ‘তোমরা কেউ আমার মা’টাকে নিয়ে যাও। একদম সহ্য হয় না আমার।’

এবারও কেউ কথা বলে না। মিসও না। একই আইডি থেকে আবারও বলে, ‘আমার মা’টা একদম আমার কথা শোনে না। ক্লাস করতে ভালো লাগে না আমার, তবু ক্লাস করতে বলে। প্লিজ, তোমরা কেউ আমার মাটাকে নিয়ে যা-ও-ও!’

দাভাই হেসে ওঠেন। অরণ্য ডুবে আছে গেমে। মিস বলেন, ‘এসব বলে না বাবা। সবাই তোমাকে কী ভাববে বলো? দেখো আমি কি করাচ্ছি।’ এই বলে তিনি ক্লাসে মনোযোগ দেন। একটা মাস্ক এঁকে তাতে জলরং করতে থাকেন। হাই তুলতে তুলতে সিকিউরিটি নামের আইডি থেকে একজন বলে, ‘মিস, আরও কঠিন মাস্কের ছবি আঁকা যায় না? এটা তো একেবারে সহজ হয়ে গেলো।’ মিস কথা বলেন না। ক্লাসে মনোযোগী।

বিজ্ঞাপন

রোদেলা নামের আইডি থেকে একজন ছড়া বলতে থাকে-
‘বৈশাখী ঝড়
কতো দিন পর
অই দেখো এলো
কাঁচা আম খেলো।’

দাভাই বলেন, ‘ঝড়ে আম খায়?’

মিস এবার বলেন, ‘অ্যাই, বড়োদের কথা বলা যাবে না ক্লাসে।’

দাভাই জিভে আলতো একটা কামড় দিয়ে চুপসে যান। তিনি ভুলে গিয়েছিলেন, এটা অরণ্যের ক্লাস। তিনি মিসের মতো করে একটা মাস্ক বানিয়ে তাতে রং করতে থাকেন। ডাউনলোড আইডি থেকে ফের পিচ্ছিটা বলে, ‘মিস মিস, আমি আর থাকতে পারছি না। মুখের ভেতর ব্যথা পেয়েছি। আমি কি যাবো?’

বিজ্ঞাপন

মিস বলেন, ‘এই তো, আর একটু বাবা। ছবিতে রং করে নাও।’

মাইসুন নামের আইডি থেকে একজন বলে, ‘আচ্ছা মিস, আমি কি মাস্কের ওপরের দিকে আকাশ আর মেঘ দিতে পারবো?’

মিস বলেন, ‘ওসব দিতে হবে না বাবু, আমি যেই রং দিচ্ছি তাই দাও।’

‘আচ্ছা’ বলে চুপ হয়ে যায় মাইসুন।

ডরিমন নামের আইডি থেকে একজন বলে, ‘মিস, আমার সাদা কালার পছন্দ। আমি সাদা কালার দিয়ে রং করি?’

‘হুম, কথা বলে না বাবা।’ এই বলে মিস রং করতে থাকেন তার আঁকা মাস্কে। আর বলেন, ‘একটু পর সবার কাজ দেখবো। কাজ রেডি করো তোমরা।’

অরণ্য এই কথা শুনে দাভাই’র কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে বলে, ‘মিস আমার নেট চলে যাবে এখনই।’

অমনি সে নেট থেকে বেরিয়ে দাভাইকে বলে, ‘জানো দাভাই, বাবার ওপর বড্ড মন খারাপ আমার। তুমি একটু বকে দিও তো।’ তারপর দু’জনে রং আর কাগজ গুছিয়ে ছাদ থেকে নেমে আসে। বাসায় আসতেই অরণ্যের বাবা ছেলেকে বুকে জড়িয়ে বলেন, ‘নাও, এই রেসিং কার তোমার। এটি ভালো রেজাল্টের উপহার। তবে রিমোট এখন পাবে না। অনলাইন ক্লাসে মনোযোগী হলে তবেই দেওয়া হবে রিমোট।’ বাবার কথা শুনে রেসিং কারটা জানলা দিয়ে ফেলে দিতে ইচ্ছে করলো অরণ্যের। কিন্তু তা করলো না। জোরে একটা চিৎকার দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকলো। কার দিকে? দাভাইয়ের দিকে!

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন