বিজ্ঞাপন

উদ্বোধন করে নতুন পদ্ধতিটি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করলেন রেলমন্ত্রী

March 1, 2023 | 4:10 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ ছাড়া আজ থেকে মিলবে না রেলের টিকিট। আর বিদেশি নাগরিকরা পাসপোর্ট দেখিয়ে টিকিট নিতে পারবেন। মোট কথা রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কোনো যাত্রীই টিকিট পাবেন না। প্রাথমিকভাবে আন্তঃনগর এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। ‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’ নীতি নিয়ে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহের ব্যবস্থা পরবর্তীতে এটি বিস্তৃত করা হবে।

বিজ্ঞাপন

এই ব্যবস্থায় যাত্রীকে আগে নিজের ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে একটি নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। তারপর তিনি কাউন্টার ও অনলাইন থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। একইসঙ্গে রয়েছে ৭টি শর্ত।

টিকিট কালোবাজারি বন্ধ, বিনা টিকিটে ভ্রমণে জরিমানা ও ভাড়া আদায় সহজ করার লক্ষ্যে এই পদ্ধতিতে। বাংলাদেশ রেলওয়ে বলে আসছিল এই পদ্ধতিতে টিকিট কালোবাজারি বন্ধ হবে। তবে উদ্বোধনের দিন পদ্ধতিটি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন।

তিনি বলেন, ‘ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি পুরোপুরি বন্ধ হবে কি না জানি না। তবে, সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে নতুন নিয়মে ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু করে রেলওয়ে। কার্যক্রমটি পরিদর্শনে সকালে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন যান মন্ত্রী। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

রেলমন্ত্রী বলেন, যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য আমরা একাধিক কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। এতদিন টিকেট প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে অভিযোগ ছিল সেটা থেকে বের হয়ে আসার জন্যই আমরা ‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’ কার্যক্রম শুরু করেছি। যা আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, মূল বিষয় হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া এবং রেজিস্ট্রেশন ছাড়া টিকেট কেনা যাবে না এবং কেউ ভ্রমণ করতে পারবে না। এখন শুধুমাত্র আন্তঃনগর ট্রেনে এর ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে ,পর্যায়ক্রমে লোকাল ট্রেনেও এটি কার্যকর করা হবে। ৫০ শতাংশ অনলাইনে এবং ৫০ শতাংশ কাউন্টার থেকে টিকিট দেওয়া হবে। কিন্তু কোনোক্রমে রেজিস্ট্রেশন ছাড়া টিকিট পাওয়া যাবে না।

রেলমন্ত্রী বলেন, আগে টিকিট হলেই একজন যাত্রী ভ্রমণ করতে পারতেন, এখন আপনার টিকিটে আপনাকে ভ্রমণ করতে হবে। টিকিট থাকলেই ভ্রমণ করা যাবে না। জানি না টিকিট কালোবাজারি পুরোপুরি বন্ধ হবে কি না। তবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, এখন থেকে অন্যের টিকেটে ভ্রমণ করলে বিনা টিকেটের যাত্রী হিসেবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শকের (টিটিই) কাছে পজ মেশিন সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা বিনা টিকেটের যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করবেন এবং সেই টাকা সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা হবে। টিটিইদের বিরুদ্ধে এতদিন যে অভিযোগ ছিল টাকা সরকারি খাতে জমা না দেওয়ার সেটাও এর মাধ্যমে বন্ধ হয়ে যাবে।

মন্ত্রী বলেন, এই পদ্ধতিকে টেকসই করতে আমরা একসঙ্গে ১০০ পজ মেশিন হস্তান্তর করেছি এবং যারা এগুলো চালাবেন তাদেরকে ট্রেনিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়া আরও একটি সুবিধা আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে। সেটি হলো অনলাইনে টিকেট বাতিলের জন্য আর কাউন্টারে যেতে হবে না। আজ থেকে অনলাইনেই টিকেট বাতিল করা যাবে।

বিজ্ঞাপন

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এনআইডির তথ্য পাচারের কোন সুযোগ নেই কারণ আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করেছি। যতটুকু দরকার ততটুকু তথ্যই আমরা নেব এবং মূল সার্ভারের সঙ্গে তথ্যগুলো যুক্ত থাকবে।

পরে মন্ত্রী ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে যাত্রীদের সঙ্গে নতুন পদ্ধতিটি নিয়ে কথা বলেন। এ সময় বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার শাহাদাত আলী সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

নতুন নিয়মে যেভাবে টিকিট সংগ্রহ করা যাবে:

নতুন নিয়মে শুধু অনলাইন নয়, কাউন্টার থেকেও ট্রেনের টিকিট কিনতে নিবন্ধন করতে হবে। খুলতে হবে অ্যাকাউন্ট। কাউন্টার, অনলাইন ও অ্যাপের মাধ্যমে তা করা যাবে। ইন্টারনেট সুবিধার বাইরে থাকা যাত্রীরা সাধারণত মোবাইল ফোন থেকে এসএমএসের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। আগে থেকে যাদের রেলের ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করা আছে তাদের সাইন-ইন করে জন্ম নিবন্ধন সদন আপলোড করতে হবে। আর যাদের আগে থেকে নিবন্ধন নেই, একেবারেই নতুন-তাদের প্রথমে ওয়েবসাইট ভিজিট করে সাইন আপ করে জাতীয় পরিচয়পত্র আপলোডের মাধ্যমে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে।

পুরনো নিবন্ধনকারীদের ক্ষেত্রে:

ধাপ-১: বর্তমান username এবং Password দিয়ে https://etiket,railway.gov.bd-এ প্রবেশ করে BR <space> NID নম্বর space ticket.railway.gov.bd তে অথবা rail sheba app এ সাইন-ইন করতে হবে।

ধাপ-২: NID নম্বর এবং জন্ম তারিখ লিখে verify বাটনে ক্লিক করতে হবে। এরপর NID নম্বর জন্ম তারিখ সঠিকভাবে প্রবেশ করালে যদি NID নম্বরটি পূর্বে ব্যবহার করা না হয়ে থাকে তাহলে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন হবে।

নতুন নিবন্ধনকারীদের ক্ষেত্রে:

https://eticket.railway.gov.bd ওয়েবসাইট অথবা rail sheba app এ সাইন আপ করতে হবে এবং সঠিক NID নম্বর জন্ম তারিখ verify পূর্বক অন্যান্য তথ্য দিয়ে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।

অফলাইন নিবন্ধন:

মোবাইল থেকে মেসেজ অপশনে গিয়ে BR <space> NID নম্বর <space> জন্ম তারিখ (সাল-মাস-দিন) লিখে পাঠাতে হবে ২৬৯৬৯ নম্বরে। ফিরতি এসএমএসে রেলওয়ে জানাবে নিবন্ধন সফল হয়েছে কি না। সফল হলে অ্যাকাউন্ট নম্বর জানাবে। এরপর ওই অ্যাকাউন্টের বিপরীতে এনআইডি দেখিয়ে স্টেশনে কাউন্টার থেকে টিকিট কেনা যাবে।

বিদেশি নাগরিকরা পাসপোর্ট দিয়ে অ্যাকাউন্ট করতে পারবেন। একটি এনআইডি বা জন্ম নিবন্ধনের বিপরীতে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট সংগ্রহ করা যাবে। একটি নম্বর দিয়ে প্রতিদিন একবারই টিকিট কাটা যাবে। এছাড়া ভ্রমণের সময় যাত্রীকে এনআইডি বা জন্মনিবন্ধন সনদ বা পাসপোর্টের ছবি সম্বলিত নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড সঙ্গে রাখতে হবে। আরও দরকার হবে তাদের ই-মেইল নম্বর। থাকতে হবে ইন্টারনেট সম্পর্কে ধারণা ও স্মার্টফোন পরিচালনার জ্ঞান।

মানতে হবে যে ৭টি শর্ত:

১. ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের বাবা-মায়ের নাম ও এনআইডি দিয়ে নিবন্ধন করা রেলের অ্যাকাউন্ট বা জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। এমন ক্ষেত্রে টিকিটের ওপরে মুদ্রিত নামেরর সঙ্গে যাত্রীর সম্পর্ক যাচাইয়ের জন্য ভ্রমণকালে বাধ্যতামূলকভাবে জন্মনিবন্ধন সনদের ফটোকপি সঙ্গে রাখতে হবে।

২. বিদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে তাদের পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে পাসপোর্টের ছবি আপলোড করার মাধ্যমে নিবন্ধন শেষ করতে পারবেন।

৩. সফলভাবে এনআইডি/পাসপোর্ট/জন্মনিবন্ধন যাচাইপূর্বক নিবন্ধন ছাড়া কোনো যাত্রী আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট কিনতে পারবেন না।

৪. ভ্রমণকালে যাত্রীকে অবশ্যই নিজস্ব এনআইডি বা জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি অথবা পাসপোর্টের ছবি সম্বলিত আইডি কার্ড সঙ্গে রাখতে হবে।

৫. পরিচয়পত্রের সঙ্গে টিকিটের ওপরে মুদ্রিত কপিতে যাত্রীর তথ্য না মিললে বিনা টিকিটে ভ্রমণের দায়ে অভিযুক্ত করা হবে এবং রেলের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

৬. যাত্রীরা আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে এনআইডি/জন্ম নিবন্ধন বা পাসপোর্টেরর মাধ্যমে রেলওয়ের সিস্টেম থেকে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করতে পারবেন।

৭. দেশের বিভাগীয় শহরের রেলস্টেশন ও আন্তঃনগর ট্রেনের শুরুর স্টেশনগুলোতে সর্ব সাধারণের নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করার জন্য একটি হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হবে।

সারাবাংলা/ জেআর/এনইউ

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন