বিজ্ঞাপন

খাবার অপচয়— যা বিলাসিতা, তা অনেকের কাছে স্বপ্ন

November 20, 2023 | 12:27 pm

তৌহিদ-উল বারী

খাবার; যা ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব। এই অসম্ভবকে সম্ভব করতেই মানুষ ছুটছে নানা দূর-দুরান্তে। সংগ্রাম করছে দুমুঠো অন্ন জোগাড় করতে। অথচ এ খাবার অনেকের কাছে বিলাসিতা আবার অনেকের কাছে তা যেন স্বপ্ন।

বিজ্ঞাপন

যেখানে খাবারের থালায় দুমুঠো ভাতের জন্য মানুষ হাহাকার জীবন পার করছেন সেখানে সেই একই খাবার ডাস্টবিনে স্তূপ গড়ছেন। কতই না বাস্তবতার সমীকরণ! বস্তিতে বসবাস করা একটা রিকসা চালক সারাক্ষণ প্যাডেল মাড়িয়ে চাল কিনে নিতে পারলেই পরে বউ বাচ্চার মুখে খাবার জুটে সেখানে চার-তলায় বসে জমিদার বাবুরা বস্তির মানুষদের কান্ডকারখানা দেখে মুখ খুলে হি হি করে হাসছেন!

কি আজব! কি নির্মম! একদিকে খাবার অপচয়ের উৎসব হয়, অন্যদিকে ক্ষুধার্ত মানুষ অনাহারে থেকে মৃত্যুর প্রহর গুণে। আমরা বড়ই হতভাগা। আমরা আজকাল এতই আধুনিক হয়ে গেছি যে, মাছ-মাংসের গন্ধ নাকে না আসলে আমরা খেতেই বসি না। খেতে গিয়ে খাবার থালায় সাজিয়ে নিই যত ভালো ভালো খাবার। পরে পেঠ পুড়ে খেও থেকে যায় আরো দু’একজনের খাবার। পরে এগুলো দূর করে ঠেলে দিই ময়লার ঝুঁড়ি কিংবা ডাস্টবিনে। আর ওইদিকে খেতে না পেরে বস্তিতে মায়ের কোলে বসে শিশুটি ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদে।

কোথায় নেই এই অপচয়? যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই দেখি কেবল খাবারের অপচয়। বিয়ের অনুষ্ঠান, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, পার্টি পয়েন্ট, ছাত্রাবাস, সাধারণ বাড়িঘরসহ এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে খাবার নষ্ট হচ্ছে না। ডাস্টবিনগুলোর একটা বিশেষ অংশ পূর্ণ হচ্ছে নষ্ট-পচা খাবার দিয়ে। অথচ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির হিসাব অনুযায়ী ৮১ কোটি ১০ লাখ মানুষ প্রতি রাতে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যায়।

বিজ্ঞাপন

একটু চিন্তা করলেই দেখতে পাবো যে, খাবার অপচয়ের অন্যতম কারণগুলো হলোঃ প্রয়োজনের অতিরিক্ত রান্না, প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিনে তা ব্যবহার না করতে পারা ও যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে না পারা। আবার এ অপচয়ের তালিকাও যেন খুব দীর্ঘ সারির। যাতে করে দেশে বছরে আনুমানিক এক কোটি টনের বেশি খাবার অপচয় হয়। বছরে মাথাপিছু ৬৫ কেজি খাবার কখনো খাওয়া হয় না। যে পরিমাণ খাবার অপচয় হয় তার ৬১ শতাংশ হয় বাড়িতে পরিবারগুলো থেকে, ২৬ শতাংশ রেস্তোরাঁ থেকে এবং বাকি খাবার অপচয় হয় খাদ্যশস্য বিক্রি করা প্রতিষ্ঠান, সুপারশপ, দোকান ও বাজার থেকে।

রেস্টুরেন্ট ও বিয়ে বাড়িতে প্রত্যেক কাস্টমার ও অতিথিকে পরিবেশিত খাদ্যের সঙ্গে একটা এক্সট্রা প্লেট দেওয়া যেতে পারে। যা খেতে পারবে তা খাবে নতুবা বাকি খাবার ওই প্লেটেই রাখবে। পরবর্তীতে স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতায় তা সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু ও গরিবদের মাঝে বণ্টন করা যেতে পারে। এতে করে একদিকে খাবার অপচয় কিছুটা রোধ হবে অন্যদিকে বিত্তশালী ও সামর্থ্যবানদের খাদ্যে গরিব-অসহায়দের শরিক করার সুযোগ হবে। যা নিশ্চিত সম্প্রীতি ও শান্তির পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়ক হবে। আর অনাহারী, পথ-শিশু থেকে শুরু করে সুবিধাবঞ্চিতরা পেঠ পুড়ে খেয়ে হাসবে আপন হাসিতে।

লেখক: শিক্ষার্থী; বাকলিয়া সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম

বিজ্ঞাপন
প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন