বিজ্ঞাপন

চলচ্চিত্র অনুদান প্রক্রিয়ায় সংস্কার প্রস্তাব

July 29, 2019 | 7:18 pm

এন্টারটেইনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট

চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদান শুরু হয় ১৯৭৬-৭৭ অর্থবছর থেকে। তখন থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত মোট ২০ বার অনুদান দেয়া হয়েছে চলচ্চিত্রে। এই ২০ বারে মোট ৮২টি ছবিকে দেয়া হয়েছে অনুদান। এর মধ্যে নির্মিত হয়েছে এবং ন্যূনতম একটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ৫৪টি ছবি। অন্যদিক অনুদান পাওয়ার পরও তৈরি করা হয়নি ১৭টি ছবি।

বিজ্ঞাপন

১৯৭৬-৭৭ অর্থবছর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত মোট ৪৩ কার্যবছর পার হলেও এরমধ্যে ২০ বছর অনুদান দেওয়া হয়নি।  অনুদানে নির্মিত অনেক সিনেমাই যেমন রীনা ব্রাউন, খাঁচা, মেঘমল্লার, জীবনঢুলী, গেরিলা, আমার বন্ধু রাশেদ আলোচিত হলেও বেশিরভাগই একটি দুটি হলে মুক্তি পয়েছে। বর্তমান বাস্তবতায় অনুদানপ্রাপ্ত ছবির সাফল্য ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদানের প্রসঙ্গটি জড়িয়ে পড়েছে নতুন কিছু বিতর্কে। প্রধান আপত্তিগুলোর সার-সংক্ষেপ হলো-

ক. অনুদান প্রদানে বাছাই কমিটির সুপারিশ বিবেচনায় রাখছে না অনুদান কমিটি। অনুদান কমিটির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াটি অনুদান নীতিমালাতেও বেশ খানিকটা অনির্দিষ্ট। এক্ষেত্রে বাছাই কমিটির সুপারিশ অগ্রাহ্য করলে স্বেচ্ছাচারিতার সম্ভাবনা বৃদ্ধিপাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

খ. অনুদান নীতিমালার ১২ (ছ) ধারায় আবেদনকারী প্রযোজক বা পরিচালকের সাক্ষাৎকার নেওয়ার কথা বলা থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ আছে।

গ. এমন পরিচালকের প্রস্তাবিত চলচ্চিত্রকে অনুদান প্রদান করা হচ্ছে যার চলচ্চিত্র নির্মাণের সাথে কোনো পূর্ব সংশ্লিষ্টতা নেই।

ঘ. এমন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বা প্রযোজককে অনুদান প্রদান করা হচ্ছে যাদের আর্থিক সক্ষমতা এবং কারিগরি কাঠামোগত সক্ষমতা স্পষ্ট নয়।

বিজ্ঞাপন

ঙ. নির্মাণাধীন, সমাপ্ত বা মুক্তিপ্রাপ্ত কোনো চলচ্চিত্রকে অনুদান না দেওয়ার কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে নীতিমালার ১২ (চ) ধারায়।

চ. অনুদান নীতিমালার ৩০ ধারায় বলা হয়েছে, অনুদানপ্রাপ্ত ছবির প্রযোজক সরকারি অনুমতি নিয়ে সহ-প্রযোজক গ্রহণ করতে পারবেন, কিন্তু সহযোগী প্রযোজকের কাছে স্বত্ব হস্তান্তর করা যাবে না। অভিযোগ আছে, এমনটি ঘটেছে কোনো ছবির ক্ষেত্রে এবং এরকম ছবির প্রযোজক পুনরায় অনুদান প্রদান করেছেন।

এছাড়াও অনুদান কমিটিতে কোনো কোনো সদস্য বছরের পর বছর ধরে কাজ করা নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে।

অনুদান প্রদান প্রক্রিয়ায় সংস্কার প্রসঙ্গে যা বলা হয়-

বিজ্ঞাপন

ক. বাছাই কমিটির জন্য নির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে নম্বর প্রদানের ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রতিটি বিষয়ে প্রতি সদস্য আলাদাভাবে নম্বর দেবেন। এই নম্বর গড় করে বাছাই কমিটির প্রদত্ত নম্বর চূড়ান্ত করা হবে।

খ. বাছাই কমিটির জন্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এবং প্রযোজকের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনার প্রয়োজন নেই। কারণ রাষ্ট্র একটি উৎকৃষ্ট চলচ্চিত্রের উন্নত অর্থায়নের ব্যবস্থা করবে।

গ. অনুদান কমিটি বাছাই কমিটির কাছ থেকে উত্তীর্ণ ছবিগুলো নিয়ে কাজ করবে। বর্তমান নীতিমালার ১২ (ছ) ধারাটি তাদের মূল বিবেচ্য বিষয় হবে। অর্থাৎ তারা প্রযোজক ও পরিচালকের একটি বিস্তারিত সাক্ষাৎকার গ্রহণ করবেন।

ঘ. বাছাই কমিটির দেওয়া গড় নম্বর থেকে শতকরা ৪০ ভাগ এবং অনুদান কমিটির দেওয়া নম্বর থেকে শতকরা ৬০ ভাগ নিয়ে  চূড়ান্ত নম্বর স্থির করা হবে। এই নম্বরই হবে অনুদান প্রদানের একমাত্র ভিত্তি। যদি একাধিক আবেদনকারী সমানর নম্বর পান তাহেলে নিচের ক্রমানুসারে তাদের স্থান নির্ধারণ করা হবে।

১) প্রথমবার আবেদনকারী হলে তিনি অগ্রাধিকার পাবেন।

২) কেউই প্রথমবার আবেদনকারী না হলে কিংবা উভয়ই তা হলে সাক্ষাৎকারে যিনি বেশি নম্বর পেয়েছেন (গড়) তিনি অ্রগাধিকার পাবেন।

৩) সাক্ষাৎকার পর্বে উভয়ের গড় নম্বর সমান হলে বাছাই কমিটির কাছে বিষয়বস্তু, সংলাপ ও চিত্রনাট্য বিষয়ে যিনি গড়ে বেশি নম্বর পেয়েছেন তিনি অগ্রাধিকার পাবেন।

৪) এক্ষেত্রে তারা সমান সমান হলে বিশেষ প্রস্তাবনায় তাদের একই স্থানে রাখা হবে। এক্ষেত্রে একটির বেশি ছবিকে অনুদান প্রদান করা হবে।

ঙ. দুই পর্যায়ে প্রদত্ত সকল নম্বর ও টীকা সংরক্ষন করা হবে। জনসাধারণের পক্ষে কেউ এই ফলাফল পত্র দেখতে চাওয়া মাত্র তা প্রকাশ করা হবে।

চ. কোনো কমিটির কারো ভেটো ক্ষমতা থাকবে না।

ছ. দুই কমিটিতে যারা বিশেষজ্ঞ হিসেবে থাকবেন তাদের চলচ্চিত্র বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অথবা চলচ্চিত্র নির্মাণের অভিজ্ঞতা অথবা নির্মাণের অন্যান্য বিভাগে কাজ করার অভিজ্ঞতা বা চলচ্চিত্র বিষয়ে লেখালেখি করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

জ. সরকারি কর্মকর্তারা যারা কমিটির সদস্য হবেন তাদের অন্তত পক্ষে মানসম্পন্ন ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স করা থাকতে হবে। সরকারি কর্মকর্তাদের যে প্রশিক্ষণ তাতে চলচ্চিত্র বিষয়ে তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ বিবেচনা হওয়া প্রয়োজন।

ঝ. বিশেষজ্ঞ হিসেবে যারা কমিটিতে থাকবেন তারা দুই বছরের বেশি কমিটিতে থাকতে পারবেন না।

ঞ. বাছাই ও অনুদান কমিটিতে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়টি এমন হওয়া প্রয়োজন যে কাহিনী, প্রামাণ্য ও নিরীক্ষামূলক চলচ্চিত্রের প্রস্তাব বিবেচনার মতো দক্ষতা সেখানে প্রাপ্ত হয়।

অনুদান প্রাপ্ত চলচ্চিত্রের জীবন-চক্র বিষয়ে প্রস্তাবনা-

ক. এমন পরিমাণ অর্থ অনুদান প্রদান করা হবে যা চলচ্চিত্রটি নির্মাণের জন্য যথেষ্ট। প্রস্তাবিত চলচ্চিত্রটির বাজেট বাস্তবসম্মত কি না, তা বিবেচনা করার দক্ষতা বাছাই কমিটির থাকতে হবে।

খ. একটি চলচ্চিত্র নির্মাণে কতদিন সময় লাগা বাস্তবসম্মত তা স্থির করে সেভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণের সময় সীমা নির্ধারণ করা যেতে পারে। নির্ধারিত সময়ের পর ছবির শেষ না হলে অজুহাত যত কম শোনা যায় ততই ভালো।

গ. নির্মাণাধীন চলচ্চিত্রকে অন্যান্য শর্ত পূরণ সাপেক্ষে অনুদান দেয়া যেতে পারে। ইতিমধ্যে বিনিয়োগকৃত অর্থ অনুদানের কাটা থেকে সমন্বয় করা যেতে পারে। এ বিষয়ে আর্থিক নিরীক্ষণ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।

ঘ. অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের সর্বাধিক প্রদর্শনী নিশ্চিত করতে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া প্রয়োজন।

ঙ. সমগ্র অনুদান প্রক্রিয়াটি দেখভালের জন্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি আলাদা অধিদপ্তর সৃষ্টি করা যেতে পারে।

এই গবেষণাটি লিখিত আকারে বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের পক্ষে তৈরি করেছেন চলচ্চিত্র গবেষক মাহমুদুল হোসেন। সোমবার (২৯ জুলাই) বেলা ১২টা ৩০ মিনিটে শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার হলে এক আলোচনা সভায় এই প্রবন্ধটি পাঠ করা হয়।

সভায় উপস্থিত থাকার কথা ছিল তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের। কিন্তু তিনি সভায় উপস্থিত হতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে তার অনুপস্থিতিতেই প্রবন্ধ পাঠ করেন মাহমুদুল হোসেন। পরে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন উপস্থিত চলচ্চিত্র কর্মীরা।

সভায় উপস্থিত ছিলেন অনুদান কমিটির সদস্য এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ। তিনি জানান, লিখিত প্রবন্ধসহ মুক্ত আলাপটি লিখিত আকারে প্রদান করা হবে তথ্য মন্ত্রণালয়ে।

সারাবাংলা/পিএ

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন