বিজ্ঞাপন

নওফেল অনুসারীদের বাদ দিয়ে আরও ১ ওয়ার্ডে সম্মেলন

March 20, 2023 | 11:12 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারীদের বাদ দিয়ে চট্টগ্রামে আরও একটি ওয়ার্ডে সম্মেলন করেছে নগর আওয়ামী লীগ। এর প্রতিবাদে নওফেলের অনুসারী নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করেছেন। এছাড়া ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের ‘বিরোধী’ হিসেবে পরিচিত নগর আওয়ামী লীগের নেতারা এ সম্মেলন বর্জন করেছেন।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২০ মার্চ) নগরীর মুসলিম এডুকেশন সোসাইটি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের সম্মেলন হয়েছে। বিদ্যালয়ের মূল ফটকের বিপরীতেই আ জ ম নাছির উদ্দীনের বাসভবন।

একইভাবে গত শনিবার (১৮ মার্চ) নগরীর বাগমনিরাম ওয়ার্ডের সম্মেলন সম্পন্ন হয়। সেদিনও একতরফা সম্মেলনের অভিযোগ এনে নওফেলের অনুসারীরা বিক্ষোভ করেন।

চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনের এমপি মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। আন্দরকিল্লা ও বাগমনিরাম ওয়ার্ড এই নির্বাচনি আসনের মধ্যে পড়েছে। তবে উভয় সম্মেলনে স্বাগতিক এমপি হলেও নওফেলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে জানান নগর আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক জহরলাল হাজারী।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাগমনিরাম ওয়ার্ডের সম্মেলনের সময় উপমন্ত্রী মহোদয় চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু উনাকে একবারের জন্যও সম্মেলনে যেতে বলা হয়নি। গতকালও (রোববার) বিকেল পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রামে ছিলেন এবং বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। এই নির্বাচনি এলাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ড আন্দরকিল্লার সম্মেলনেও উনাকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি।’

জানা গেছে, আন্দরকিল্লাসহ পাঁচটি ওয়ার্ডে সম্মেলনের জন্য নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে আছেন। আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের সম্মেলনের ব্যানারে উদ্বোধক হিসেবে নাম থাকলেও দোভাষ যাননি।

দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা হলেও জহিরুল আলম দোভাষ এবং তার নেতৃত্বাধীন সাংগঠনিক কমিটিকে সম্মেলনের বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন জহরলাল হাজারী। এ বিষয়ে জহিরুল আলম দোভাষকে সকাল থেকে কয়েকবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

বিজ্ঞাপন

দোভাষের অনুপস্থিতিতে মাহতাব উদ্দিন ও আ জ ম নাছির জাতীয় ও দলীয় পতাকা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এ সময় নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান মাহমুদ হাসনী, দফতর সম্পাদক হাসান মাহমুদ শমসের, নির্বাহী সদস্য হাজী বেলাল আহমেদ ছিলেন। তারা সবাই মাহতাব-নাছিরের বলয়ের নেতা হিসেবে পরিচিত।

ওয়ার্ড সম্মেলন নিয়ে এই বিরোধ প্রসঙ্গে নেতাদের কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

উদ্বোধন শেষে বিকেলে বিদ্যালয়ের তৃতীয় তলায় আজিজ হলে কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইকবাল হাসানকে সভাপতি এবং আশীষ ভট্টাচার্যকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।

জানা গেছে, আ জ ম নাছিরের অনুসারী ইকবাল হাসান এতদিন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছিলেন। দীর্ঘ সময় ধরে ওয়ার্ডে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন প্রবীণ নেতা এস কে পাল। দুই বছর আগে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে গেলে তার অনুপস্থিতিতে ইকবাল হাসানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে এস কে পাল দেশে ফিরলেও তাকে আর দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয়নি।

বিজ্ঞাপন

আশীষ ভট্টাচার্য ২০১০ সালে আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডে আ জ ম নাছির উদ্দীনের সমর্থনে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করে হেরেছিলেন। রেঁস্তোরা ও ওষুধ ব্যবসায় জড়িত আশীষ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত।

এদিকে, সম্মেলন চলাকালে নগরীর লালদিঘীতে জেলা পরিষদ চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন চসিক কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী। তিনি নগর আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। পাশাপাশি তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্যও।

সমাবশে জহরলাল হাজারী বলেন, ‘মহানগর আওয়ামী লীগের একজন নেতা তার বাসার সামনের মাঠে তথাকথিত সম্মেলন করে পকেট কমিটি করেছেন। সম্মেলনের আগে কোনো প্রস্তুতি সভা হয়নি। সম্মেলনের কাউন্সিলরদের অবহিত করা হয়নি। আমি নিজে একজন কাউন্সিলর, আমাকে একবার বলা হয়নি। এই ওয়ার্ডের এমপি মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে দাওয়াত করা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এমনকি সাংগঠনিক সমন্বয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা জহিরুল আলম দোভাষকেও অবহিত করা হয়নি। নগর আওয়ামী লীগের সম্মানিত অধিকাংশ নেতাকে না জানিয়ে একতরফাভাবে সম্মেলন করা হয়েছে। শক্তি প্রদর্শন করে নিজের লোকজন ছাড়া অন্যদের বাদ দিতে বাসার সামনের মাঠে সম্মেলন করা হয়েছে।’

‘সাজানো’ কাউন্সিল বাতিলের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগকে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন আমাদের প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। উনার সঙ্গে যারা রাজনীতি করেছেন, যাদের ত্যাগ, মেধা, শ্রমে আওয়ামী লীগের ভিত্তি তৈরি হয়েছে, তাদের বাদ দিয়ে দলকে দুর্বল করে ফেলা হচ্ছে।’

জহরলাল হাজারী ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আকুল আবেদন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগকে রক্ষা করুন। আওয়ামী লীগের নেতা সেজে কেউ দলকে বিএনপি-জামায়াতের মতো অশুভ শক্তির হাতে তুলে দেবে, এটা আমরা মেনে নেব না। এই কাউন্সিল বাতিল করে পুনঃকাউন্সিলের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় আমরা পাল্টা কমিটি গঠনে বাধ্য হব।’

বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে আন্দরকিল্লা পর্যন্ত যান। এ সময় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মধ্যে মহিউদ্দিন শাহ্, তারেক হায়দার বাবু, আনোয়ার ইসলাম শাহ, লিটন দাশ, শওকত আজীম খান, আমিনুল ইসলাম আজাদ, আলী রেজা, মিনহাজ উদ্দিন অভি, সরফরাজ চৌধুরী হিরু, মো. আলমগীর, রফিক উদ্দিন শাহ্, হানিফ জ্যাকি, আবুল বশর, বাবুল চন্দ্র, নঈম উদ্দিন শাহ, শেখর দাশ, ইমতিয়াজ কামাল তুষার, জসিম উদ্দিন, সাইফুল্লাহ সাইফ, ফয়সাল উদ্দিন রাব্বি, মো. সেলিম এবং মো. ফয়সাল আনান ছিলেন।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের শেষদিকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সম্মেলন শুরু হলে বিরোধ চাঙ্গা হয়। নেতারা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। পাল্টাপাল্টির মধ্যে গত ১১ ফেব্রুয়ারি নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ডের সম্মেলন সম্পন্ন হয়, যাতে আপত্তি তোলেন মাহতাব-নাছিরের বিরোধীরা।

এই প্রেক্ষাপটে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ নিয়ে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যান চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উভয়পক্ষের নেতারা। সভানেত্রী ঐক্যবদ্ধভাবে তৃণমূলের সম্মেলন শেষ করার তাগিদ দেন। কিন্তু একমাসের মাথায় নগর আওয়ামী লীগ ওয়ার্ড পর্যায়ে যে সম্মেলন শুরু করেছে, তাতে সভানেত্রীর নির্দেশনা অমান্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ মাহতাব-নাছিরের বিরোধী নেতাদের।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন