বিজ্ঞাপন

ভোগান্তি এড়াতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার দাবি অভিভাবকদের

October 7, 2018 | 6:29 pm

।। তহিদুল ইসলাম, জাবি করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

মেয়েকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী মো. ফজলুর রহমান। তার মেয়ে ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষের ‘বি’, ‘সি’ ও ‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার্থী।

অক্টোবরের ২ তারিখে তিনি রংপুর থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন। ইতোমধ্যে ‘ডি’ ও ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষা শেষে অপেক্ষায় আছেন ৮ অক্টোবরের ‘সি’ ইউনিটের পরীক্ষার জন্য। ফলে মাত্র তিনটি পরীক্ষার জন্য নানা ভোগান্তি মাথায় নিয়ে তাকে সাতদিন সেখানে থাকতে হচ্ছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলে বসে সেই ভোগান্তির কথা সারাবাংলা প্রতিবেদককে শোনালেন ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, মেয়েকে এক ছাত্রী হলে ভাতিজির কাছে রেখে ৪-৫ দিন ধরে নিজে অবস্থান করছেন ওই হলে। এতদিন ধরে অপরিচিত এক শিক্ষার্থীর কক্ষে অবস্থান করায় ভেতরে ভেতরে কিছুটা বিব্রতও তিনি। কিন্তু মেয়ের পরীক্ষা এখনো বাকি থাকায় অনেকটা বাধ্য হয়েই তাকে থাকতে হচ্ছে সেখানে।

বিজ্ঞাপন

ভর্তি পরীক্ষার মৌসুমে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভোগান্তির এমন দৃশ্য কেবল একজনের জন্য নয়। অধিকাংশ ভর্তিচ্ছুই শিক্ষার্থীই ঢাকার বাইরে থেকে আসেন বলে ভোগান্তির এমন গল্পও অসংখ্য।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা থেকে মেয়েকে নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচিত কেউ না থাকায় গেটের পাশে থাকা একটি জেলা সমিতির হেল্প ডেস্কের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। উপায় না পেয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীকেও থাকার ব্যবস্থা করে দিতে অনুরোধ করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এক সাংবাদিক উভয়ের আবাসনের ব্যবস্থা করে দেন। ওই অভিভাবক আক্ষেপ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যদি সমন্বিত পরীক্ষা নেওয়া হতো তাহলে এত ভোগান্তি পোহাতে হত না।

কীভাবে এই ভোগান্তি কমিয়ে আনা যায় সেই প্রসঙ্গে ফজলুর রহমান বলছিলেন, ‘দেশে যতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় আছে সবার যদি একত্রে পরীক্ষা হতো তবে আমাদের এত ভোগান্তি পোহাতে হতো না। এক সপ্তাহ ধরে এখানে (জাবি) আছি মেয়ের পরীক্ষার জন্য। যাতায়াত আর খাবারের জন্য অনেক টাকা ব্যয় হচ্ছে, ভোগান্তিও নেহায়েত কম না। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হলো থাকার ক্ষেত্রে। মেয়ে এখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। এরপর রাবি, হাজী দানেশ ও বেগম রোকেয়াতে পর্যায়ক্রমে পরীক্ষা দেবে। সেই সময়গুলোতেও নিশ্চয়ই এমন ভোগান্তিই হবে।’

বিজ্ঞাপন

গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময় ভোগান্তির কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘সে সময় বালিরঘাটে ছিলাম। কোথায় বালিরঘাট আর কোথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়! খুব ভোগান্তি হয়েছিল। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হলে বারবার আমাদের এমন ভোগান্তি আর পোহাতে হত না। মেডিকেলে যদি সমন্বিত পরীক্ষা চালু থাকতে পারে তাহলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেনো একসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষা নেয় না।’

ফজলুর রহমানের মত অন্তত ২০ জন অভিভাবকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। প্রায় প্রত্যেকেই পরীক্ষা দিতে এসে অসহনীয় ভোগান্তির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা ভর্তিচ্ছুদের অভিভাবকরা অধিকাংশই আসেন ঢাকার বাইরে থেকে। অনেকেরই বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে পরিচিতজন কেউ থাকেন না। এতে তাদেরকে বাসস্থানের সমস্যায় পড়তে হয়। যার সমাধান করতে গিয়ে পরীক্ষার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিতে পারেন না সন্তানরা। তবে শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নয় প্রায় সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়া ভর্তিচ্ছু ও তাদের অভিভাবকদের একই সমস্যায় পড়তে হয়। অনেকে ভর্তিচ্ছু সময় মতো কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেন না। তখন নিমিষেই ধুলিস্যাৎ হয়ে যায় তাদের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিত পরীক্ষা নেওয়ার দাবি দীর্ঘদিনের। অতীতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। তবে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আপত্তির মুখে’ বাস্তবায়ন করা যায়নি। চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গভবনে দেশের ৪৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আব্দুল হামিদ, ভর্তিচ্ছুদের দুুর্দশা কমাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সে আহ্বানে সাড়া না দিয়ে এ বছরও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি পরীক্ষা নিজেদের পরিচালনায় আয়োজন করছে।

তবে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. নুরুল আলম। তিনি বলেন, ‘আমি তো আগে দায়িত্বে ছিলাম না। সুতরাং আগে কি হয়েছে না হয়েছে সেটা তো আমি জানি না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে না, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। কেন্দ্রীয় একটা কমিটি থাকবে। সে কমিটি সমন্বিত পরীক্ষা নেওয়ার জন্য কাজ করবে। এভাবে হতে পারে।’

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

সারাবাংলা/টিআই/এমআই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন