বিজ্ঞাপন

সড়কপথে আকাশ পথের ভাড়া!

June 2, 2020 | 7:07 pm

সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বাসের ভাড়া বিমানের ভাড়ার প্রায় সমান হয়ে গেছে। বিশেষ করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের ভাড়া কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিমানকে ছাড়িয়ে গেছে। আর দূরপাল্লার নন-এসি বাসেও সরকার নির্ধারিত অতিরিক্ত ৬০ শতাংশের চেয়ে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে থেকেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস ভাড়ায় সরকারের নিয়ন্ত্রণ ছিল না। মালিকরা ভাড়া নির্ধারণ করতেন  ইচ্ছামতো। করোনা পরিস্থিতিতে সেই ভাড়া এখন আকাশচুম্বী। আকাশপথে ঢাকা থেকে কোনো কোনো গন্তব্যে যেতে সর্বনিম্ন যে ভাড়া, এসি বাসে করে সেই গন্তব্যে যেতে গুনতে হচ্ছে সেই একই ভাড়া।

রাজধানীর গাবতলী, মহখালী, সায়েদাবাদসহ বিভিন্ন বাস কাউন্টারে দেখা গেছে নতুন বাস ভাড়ার তালিকা। সেখানে সবচেয়ে অনিয়ন্ত্রিত এসি বাসের ভাড়া।

ঢাকা থেকে সিলেটে যেতে চান— এমন একজন ব্যবসায়ী মুনতাসির জানান, ঢাকা থেকে সিলেট আকাশপথে সর্বনিম্ন ১৯০০ টাকায় যাতায়াত করেছেন। এখন গ্রিনলাইন ও এনা হুন্দাই বিজনেস ক্লাস বাসের ভাড়া প্রায় একই হয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির আগে বিশেষ অফারে ঢাকা-সিলেট রুটে বিমান টিকিট পাওয়া গেছে ১৫০০ টাকাতেও। আর বর্তমানে একই রুটে এনা হুন্দাই এসি বা‌সের ভাড়া হয়েছে ১৫০০ টাকা।

এদিকে, ঢাকা-কক্সবাজার রু‌টে উড়োজাহাজের সর্বনিম্ন ভাড়া পাওয়া গেছে ৩ হাজার টাকা। একই রুটে শ‌্যামলী হুন্দাই এসি বা‌সের ভাড়া ২৩০০ টাকা। আবার ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে সর্বনিম্ন বিমান ভাড়া পাওয়া গেছে ১৯০০ টাকা। বিজনেস ক্লাসের এসি বাসের ভাড়াও এই রুটে কাছাকাছি।

পরিবহন কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকা থেকে যাওয়ার সময় যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। আবার আসার সময় অর্ধেক যাত্রী নিয়ে আসতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস সবগুলো না ছেড়ে কিছু কিছু বাস ছাড়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে এর চেয়ে কম ভাড়া নিলে তারা খরচই তুলতে পারবেন না।

বিজ্ঞাপন

মহাখালী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, কোনো কোনো বাস অর্ধেকের চেয়েও কম যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে। তবে ঢাকার দিকে আসার সময় যাত্রী থাকছে অর্ধেক। এই টার্মিনালে বাসে জীবাণুনাশক স্প্রে করছে এবং যাত্রীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজ করে বাসে তুলছে এনা পরিবহন। তবে ছোট ছোট পরিবহন কোম্পানিগুলোকে এসব বিষয়ে উদাসীন দেখা গেছে। সায়েদাবাদ টার্মিনাল-কেন্দ্রিক বাসেও এসব স্বাস্থ্যবিধি খুব একটা মানতে দেখা যায়নি তেমন কাউকে।

মহাখালী টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, দুই প্রান্তে দুটি জীবাণুনাশক টানেল বসানো হয়েছে, যদিও এগুলো না বসাতে এখন স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিদেশনা রয়েছে। তবে সাধারণ যাত্রীরাও কেউ এই টানেল ব্যবহার করছেন না। আবার পরিবহন সংশ্লিষ্টদের মুখে মাস্ক থাকলেও অনেক যাত্রীকেই দেখা যাচ্ছে মাস্ক ছাড়াই বাসে উঠে যাচ্ছেন। তাদের তেমন কিছু বলাও হচ্ছে না।

এদিকে, বেশিরভাগ পরিবহনেই দেখা গেছে, যাত্রীদের কাছ থেকে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৬০ শতাংশ ভাড়া বেশি নিচ্ছে। তবে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ আছে শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের বিরুদ্ধে। মেহেরপুর রুটে রয়েল ও পূর্বাশা বাস কোম্পানিও নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অনেক বেশি নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। খুলনা-কুষ্টিয়া, খুলনা-চুয়াডাঙ্গা, খুলনা-পিরোজপুর, খুলনা-পাইকগাছা, খুলনা-ফরিদপুর, খুলনা-কালনা, খুলনা-গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন রুটের বাসগুলো ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে তার সঙ্গে আরও ২০ টাকা বাড়তি নিচ্ছে বলেও অভিযোগ মিলেছে।

এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা গেছে এসবি সুপার ডিলাক্স বাসকে। ঢাকা-কুষ্টিয়া-শৈলকুপা-মেহেরপুর রুটে তাদের এসি বাসের ভাড়া ১০০০ টাকা। যাত্রীদের কাছ থেকে  কাছ থেকে এখন ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি হারে ভাড়া নিচ্ছে তারা।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, রাজধানীর আশপাশের বাসগুলোতেও নির্ধারিত বাড়তি ৬০ শতাংশের চেয়ে বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন যাত্রীরা। ঢাকা-আরিচা, নবীনগর-চন্দ্রা ও বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর মহাসড়কের বাসগুলোর যাত্রীদের অভিযোগ, ৬০ শতাংশ বেশি না নিয়ে তাদের কাছ থেকে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্যবিধিও যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

ঢাকা থেকে দূরপাল্লায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শত শত বাস চালায় গ্রীনলাইন পরিবহন। এই কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার আব্দুস সাত্তার জানান, তাদের সব বাস অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। এজন্য ভাড়া সমন্বয় করা হয়েছে। এসি বাসের ভাড়া সরকার নির্ধারণ করে দেয়নি বলে নিজেরাই হিসাব করে বাড়িয়ে নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

শ্যামলী পরিবহনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাকেশ ঘোষ জানান, সরকার নির্ধারিত ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর পর তারাও ভাড়ার তালিকা আপডেট করেছেন। তাদের ঢাকা-কক্সবাজার রুটে তাদের নন-এসি বাসের ভাড়া ছিল ৮০০ টাকা, সেটি এখন ১২০০ টাকা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এনা ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দ আতিক জানান, ‘প্রতিটি বাসের প্রতিটি ট্রিপ শেষে তা জীবাণুনাশক স্প্রে করে জীবাণুমুক্ত করছি আমরা। মাস্ক না থাকলে কোনো যাত্রীকে বাসে তোলা হচ্ছে না। আর সরকার নির্ধারিত ভাড়াই নিচ্ছি আমরা।’ বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ কেউ দেখাতে পারবে না— এমন দাবি করেন তিনি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ’র পরিচালক লোকমান হোসেন মোল্লা সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাসের ভাড়া নিয়ে কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। আর সব টার্মিনালে আমাদের মনিটরিং টিম বসবে, সে প্রস্তুতি চলছে।’ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে ভাড়া এখনো বিআরটিএ নির্ধারণ করেনি বলে জানালেন তিনিও।

সারাবাংলা/এসএ/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন