বিজ্ঞাপন

সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে খরচ ৩১৯ কোটি, পরামর্শক ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন

October 27, 2020 | 8:05 am

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকার ট্রাফিক অবকাঠামো উন্নয়ন করবে সরকার। এর জন্য ৩১৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় সড়ক উন্নয়নসহ নর্দমা-ফুটপাত উন্নয়ন, যাত্রী ছাউনি নির্মাণ, ফুটওভারব্রিজ উন্নয়ন ও নির্মাণসহ ফুটওভারব্রিজে এস্কেলেটর স্থাপনের কাজও করা হবে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ট্রাফিক অবকাঠামো উন্নয়নসহ সড়ক নিরাপত্তা’ শীর্ষক এই প্রকল্পে প্রায় দেড় কোটি টাকা রাখা হয়েছে পরামর্শক ব্যয়। এই ব্যয় নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। যদিও ডিএনসিসি দাবি করছে, দুই বছর ধরে চার জন পরামর্শক কাজ করবেন বলে এই ব্যয় খুব একটা বেশি নয়।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পটির মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২৫৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ও বাস্তবায়নকারী সংস্থা ডিএনসিসির নিজস্ব তহবিল থেকে ৬৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। এরই মধ্যে প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ হয়েছে।

কমিশন সূত্র বলছে, প্রকল্পটির প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের ৮ মার্চ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। ফলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আজকের (মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর) সভায় প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হতে পারে বলে জানা গেছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ডিএনসিসি।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের প্রকল্পের আওতায় ১৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন, ৯ দশমিক শূন্য পাঁচ কিলোমিটার পার্শ্ব-নর্দমা নির্মাণ, ছয় দশমিক ৫৮ কিলোমিটার পাইপ নর্দমা নির্মাণ, ২৬ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার ফুটপাত উন্নয়ন, সাত দশমিক ৭৪ কিলোমিটার সড়ক মিডিয়ান স্থাপন, ২২ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার এমএস গ্রিল ফেন্সিং স্থাপন ও ২২ দশমিক ৩১ কিলোমিটার এসএস গ্রিল ফেন্সিং স্থাপন করা হবে। এছাড়া এক হাজার ৭১০টি ট্রাফিক সাইন স্থাপন, ৫০টি যাত্রী ছাউনি নির্মাণ, ৩৬টি নতুন ফুটওভারব্রিজ স্থাপন ও ৪৭টি বিদ্যমান ফুটওভারব্রিজের উন্নয়ন এবং ১৬টি ফুটওভারব্রিজে এস্কেলেটর স্থাপন করা হবে এই প্রকল্পের আওতায়।

স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্র জানায়, ৩৬টি ওয়ার্ড নিয়ে ২০১১ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন গঠিত হয়। ওই সময় এর আয়তন ছিল ৮২ দশমিক ৩৬ বর্গকিলোমিটার। আরও ১৮টি ওয়ার্ড যুক্ত হওয়ার পর এই সিটি করপোরেশনের আয়তন হয়েছে ১৯৬ দশমিক ২২৮ বর্গকিলোমিটার। এই সিটিতে প্রায় ১ হাজার ৩৪০ কিলোমিটার সড়ক নেটওর্য়াক রয়েছে। এখানকার প্রধান সড়কসহ অন্যান্য শাখা সড়কগুলোতে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যার ফলে একদিকে যেমন যানজট তৈরি হয়, অন্যদিকে পথচারীদের মধ্যেও নিরাপদে সড়ক ও ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার নিয়ে অনাগ্রহ দেখা যায়। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সরকার বিভাগ বলছে, ডিএনসিসি এলাকায় প্রধান সড়কগুলোতে নিরাপত্তা বাড়াতে প্রকৌশলগত দিকগুলো বিবেচনায় নিয়ে ট্রাফিক অবকাঠামো নির্মাণ করা জরুরি। তাই ডিএনসিসি’র সড়কগুলো পরিকল্পিতভাবে উন্নয়নের মাধ্যমে সড়ক ব্যবহারকারী জনসাধারণ ও যানবাহনের নিরাপত্তা বাড়ানো, যান চলাচল সহজ করা এবং সর্বোপরি সড়ক, ফুটপাত ও ফুটওভারব্রিজ ব্যবহারে জনসচেতনতা বাড়াতে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় পরিকল্পনা কমিশনও মনে করছে, প্রকল্পটি পাস হলে নাগরিকরা উপকৃত হবেন।

বিজ্ঞাপন

পরামর্শক ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন
ডিএনসিসি এলাকার ট্রাফিক অবকাঠামো উন্নয়নের এই প্রকল্পে দুই বছরের জন্য চার জন পরামর্শক রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তাদের পেছনে খরচ ধরা হয়েছে ১ কোটি ৫২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। সড়ক অবকাঠামোসহ নর্দমা, ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ, স্থাপন বা উন্নয়নের কাজ দীর্ঘ দিন ধরেই সিটি করপোরেশন করে আসছে। ফলে এরকম একটি প্রকল্পে পরামর্শক রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক লিড ইকোনমিকস্ট ড. জাহিদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, যেকোনো প্রকল্পেই পরামর্শক কেন প্রয়োজন, তার একটি সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা থাকা উচিত। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সবসময় এসব কাজ করে আসছে। এ প্রকল্পের আওতায় এমন কোনো কাজ তো নেই, যেটি নতুন। ফলে এরই মধ্যে এসব বিষয়ে তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞ কর্মকর্তা তৈরি হওয়ার কথা। তাই টাকার অঙ্ক কম হোক আর বেশি হোক, এটা নিয়ে সুনির্দিষ্ট উত্তর থাকা উচিত। সরকারি কোষাগারের একটি টাকাও খরচ করতে হলে তার জন্যও যুক্তিযুক্ত কারণ উপস্থাপন করতে হবে।

আর উত্তর সিটি করপোরেশন মনে করছে, পরামর্শকের এই ব্যয় ‘খুব বেশি নয়’। ডিএনসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার মো. ফরহাদ সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের নিজস্ব জনবল কম থাকায় চার জন পরার্শক নিয়োগ করা হবে। তারা দুই বছরব্যাপী কাজ করবেন। তাদের প্রত্যেকের মাসিক বেতন ধরা হবে ১ লাখ টাকা। এই টাকার অঙ্ক এমন বেশি কিছু নয়।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন