দেশের মানুষদের মাতামাতি মাত্রাতিরিক্ত কি?
২৬ জুন ২০১৮ ২১:৪৫
আব্দুল আজীজ, সাবেক ফিফা রেফারি
বিশ্বকাপ ফুটবলে গ্রুপ পর্যায়ের শেষ দুটি খেলা সবসময় একই সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। এটার কারণ কেউ যেন আলাদা সুবিধা না পায়। ১৯৭৮ সালের আর্জেন্টিনার পেরুর সাথে ৬-০ গোলে জিতা নিয়ে এখনও কথা উঠে। ১৯৮২ সালে আলজেরিয়াকে বাদ করে দেওয়া পশ্চিম জার্মানী আর অস্ট্রিয়ার সেই খেলাটি নিয়ে এখনও আলোচনা হয়।
জার্মানী ১-০ গোলে জয় পেলে আলজেরিয়া বাদ যাবে, অস্ট্রিয়া আর জার্মানী উঠে যাবে তাই ১-০ হওয়ার পর কেউ আর গোল দেওয়ার চেষ্টা করে নি। ১৯৮৬ সাল থেকেই তাই গ্রুপের শেষ দুটি খেলা একসাথে হয়ে আসছে। যদিও ইউরো ২০০৪ এ একটা মজার ঘটনা ঘটেছিল, সুইডেন আর ডেনমার্ক ২-২ হলে ইতালী যেভাবেই বুলগেরিয়াকে হারাক, বাদ পরে যাবে, হয়েছিলও তাই।
গতকালের খেলায় উরুগুয়ে তার শক্তি বুঝিয়েছে রাশিয়াকে হারিয়ে। দুই ম্যাচে দাপুটে জয় পাওয়া রাশিয়া অবশেষে পা মাটিতে নামাতে বাধ্য হয়েছে। এটা তাদের জন্য অশনী সংকেত। ভুল থেকে অবশ্য শিখে আসতে হবে নক আউটে। সুয়ারেজ-কাভানী দুইজনই গোল পাওয়াতে উরুগুয়ে আত্মবিশ্বাসের পারদ অনেক উপরে থাকার কথা।
সৌদি আরব চমক দেখিয়েছে মিশরকে হারিয়ে। তাদের উন্নতি দেখে আমিও চমকে গেছি। এখন আমার মনে হছে রাশিয়া আর সৌদি আরব রি-ম্যাচ হলে ফলাফল ভিন্ন হতে পারে, অন্তত সৌদি আরব ৫ গোল খাবে না।
মরক্কোর ক্ষেত্রেও একই কথা বলা চলে। তাদের ভাগ্য খারাপ তারা আগের দুই খেলায় জাল খুঁজে পায় নি। নাহলে স্পেন বা পর্তুগালকে বিপদে ফেলার সামর্থ্য তারা দেখিয়েছে। ইরানের ক্ষেত্রে আমি বলব সবই ঠিক ছিল, ৯৪ মিনিটে গোলটা মিস না করলে ইতিহাস লেখা হয়ে যেত। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো বেঁচে গেছেন যে হলুদ কার্ড পেয়েছে। রেফারির লালা কার্ড দিলেও করার কিছু থাকত না, কারণ এই ফাউল রেফারির অগোচরে ছিল না।
বাংলাদেশি সমর্থকদের আরেকটু সহনশীল হতে হবে বলে আমি মনে করি। আমরা আবেগী জাত, আবেগের তোরে ফুটবলের সাথে ব্যক্তিগত জীবনের লাঞ্ছনা বঞ্চনাও নিয়ে আসি। পতাকা টানাতে গিয়ে আহত হওয়া খুব আশার কথা না, খুবই হতাশার কথা। ভারতে শুনলাম এক ছেলে আত্মহত্যা করেছে! কেনরে বাবা? মেসির দেশের কারোর মরা খবর পাইলাম না, তোর তাইলে মরার কি আছে?
খেলা নিয়ে খুনশুটি, একজনের আরেকজনের সাথে মজা করা থাকবেই, কিন্তু সব কিছুরই সীমা থাকে। কিডনি ঠিক রাখার জন্য পানি অপরিহার্য কিন্তু পানিও প্রয়োজনের থেকে বেশি খেলে কিডনির ক্ষতি হয়। আমাদের সমস্যা আমরা সব কিছুই অতিরিক্ত করি।
শ্রুতিলিখন: রাসয়াত রহমান জিকো