গ্রুপ পর্বেই বাদ চ্যাম্পিয়ন জার্মানি
২৭ জুন ২০১৮ ২২:০৩ | আপডেট: ২৮ জুন ২০১৮ ১২:০৪
।। স্পোর্টস ডেস্ক ।।
২০০৬ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ইতালি ও ২০১০ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে অনুসরণ করলো ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। গ্রুপের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে জয়ের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে গেছে ২-০ গোলের ব্যবধানে। তাতে গ্রুপ পর্ব থেকেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে। এর আগে ২০০৬ সালের চ্যাম্পিয়ন ইতালি ২০১০ সালের বিশ্বকাপে এবং ২০১০ সালের চ্যাম্পিয়ন স্পেন ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের আসরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল।
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানির মুখোমুখি হয়ে ২-০ গোলে তাদের হারিয়ে দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। চরম নাটকীয় ম্যাচের যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে দুই গোল দেয় কোরিয়ানরা। বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় কাজান স্টেডিয়ামে নামে জার্মানি-দক্ষিণ কোরিয়া। একই সময়ে গ্রুপ ‘এফ’র অন্য ম্যাচে ইয়েকাতেরিনবুর্গে মেক্সিকোর বিপক্ষে মাঠে নামে সুইডেন। সুইডিশরা জিতেছে ৩-০ গোলে। শেষ ষোলোতে টিকিট কাটে সুইডেন আর মেক্সিকো।
প্রথমার্ধে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানদের আটকে রাখে কোরিয়ানরা। ওদিকে মেক্সিকানদের আটকে রাখে সুইডিশরা। দুটি ম্যাচের প্রথমার্ধে গোল পায়নি কোনো দলই। দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্ত খেলা সুইডেন ৩-০ গোলে হারিয়ে দেয় মেক্সিকোকে। আর দক্ষিণ কোরিয়া হারিয়ে দেয় জার্মানকে। কোরিয়ার সঙ্গে রাশিয়া থেকে বিদায় নিলো র্যাংকিংয়ের এক নম্বর দল জার্মানি।
আগেই গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিশ্চিত হয় দক্ষিণ কোরিয়ার। অন্যদিকে, শেষ ষোলোতে যেতে লড়াই চালায় মেক্সিকো, জার্মানি আর সুইডেনের। গ্রুপের শেষ ম্যাচে নামার আগে মেক্সিকোর পয়েন্ট ছিল ৬, জার্মানি আর সুইডেনের সংগ্রহে ছিল ৩ পয়েন্ট। আর দুটি ম্যাচেই হেরে যাওয়া কোরিয়ার পয়েন্ট ছিল শূন্য। তাই শেষ ষোলো নিশ্চিত করতে লড়াই করেছে মেক্সিকো, জার্মানি আর সুইডেন। এই ম্যাচ শেষে সুইডেন ৬, মেক্সিকো ৬, দক্ষিণ কোরিয়া ৩, তলানিতে থাকা জার্মানি ৩ পয়েন্ট পেয়েছে।
ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানির বিপক্ষে ম্যাচের শুরু থেকেই চাপে পড়ে কোরিয়ানরা। ম্যাচের ১৪ মিনিটের মাথায় কোরিয়ান ডিফেন্ডারের কাছ থেকে বল কেড়ে নেন লিয়ন গোরেতজকা। গোলবারের বামপ্রান্ত থেকে সতীর্থের দিকে বল বাড়িয়ে দিলেও কোরিয়ান ডিফেন্ডারের পায়ে বল বাইরে চয়ে যায়। ১৮ মিনিটের মাথায় সামি খেদিরার ভয়ঙ্কর ট্যাকলে জার্মানির ডি-বক্সের ঠিক বাইরে ফ্রি-কিক পায় কোরিয়া। শট নেন জং উ ইয়ং, জার্মান গোলরক্ষক ম্যানুয়েল ন্যুয়ের এই জোরালো শট রুখে দিলেও বল নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি। বক্সে থাকা কোরিয়ান অধিনায়ক সন হেং মিন দ্বিতীয়বার বলে শট নেওয়ার আগেই অবশ্য ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্লিয়ার করেন ন্যুয়ের। নিশ্চিত গোল হজমের হাত থেকে রক্ষা পায় জার্মানরা।
২৬ মিনিটের মাথায় আবারো বেঁচে যায় জার্মানরা। কোরিয়ান অধিনায়ক সন হেং মিনের জোরালো শট গোলবারের উপর দিয়ে চলে গেলে হতাশা বাড়ে। ৩৩ মিনিটের মাথায় মার্কো রিউসের দারুণ শট আটকে যায় কোরিয়ার এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে। ৩৯ মিনিটে রিউসের আরেকটি সহজ সুযোগ নষ্ট হয়। পরের মিনিটে ম্যাট হুমেলসের দুর্বল শট সামনে দাঁড়ানো কোরিয়ান গোলরক্ষকের আটকে দিতে সমস্যা হলেও কোনো বিপদ ঘটেনি।
প্রথমার্ধের বাকি সময়ে কোনো গোল না হলে সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল। বিরতির পর ৪৯ মিনিটের লিয়নের দারুণ হেড রুখে দেন গোলরক্ষক হাইয়েন উ। দুই মিনিট পর টিমো ওয়ার্নার গোলপোস্টের খুব কাছ থেকে শট নিলেও বল জালের বাইরে আশ্রয় নেয়।
৬২ মিনিটের মাথায় কোরিয়ান ডি-বক্সের বাইরে থেকে দারুণ এক পাস দিয়েছিলেন মেসুত ওজিল। তবে, বলের নাগাল পাননি জোনাস হেক্টর। ৬৬ মিনিটে মুন সিউন মিনের শট আকটে যায় জার্মান ডিফেন্সে। ৬৯ মিনিটে জার্মান তারকা মারিও গোমেজের হেড থেকে যাওয়া বল নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন কোরিয়ান গোলরক্ষক হাইয়েন উ। ৭০ মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া টনি ক্রুসের শট পোস্টের উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। ৭২ মিনিটে কিমিচের বাড়ানো ক্রস থেকে বল পায়ে লাগাতে ব্যর্থ হন গোমেজ, সহজ গোলও পাওয়া হয়নি জার্মানদের।
৭৯ মিনিটের মাথায় কোরিয়ান অধিনায়ক সন হেং মিনের জোরালো শট পোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে গেলে হতাশা বাড়ে। পরের মিনিটে জার্মান তারকা গোমেজের শট আটকে দেন কোরিয়ান গোলরক্ষক। ৮৮ মিনিটে হুমেলসের হেড জালের বাইরে দিয়ে চলে যায়। যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে জার্মানদের জালে বল ঢুকিয়ে দেয় কোরিয়ানরা। তবে, অফসাইটের কারণে রেফারি ভিএআর এর শরণাপন্ন হয়। ভিডিও দেখে কিম ইয়ংয়ুনের গোল বাতিল হয়নি। ১-০ গোলে লিড নেয় কোরিয়ানরা। দুই মিনিট পরেই কোরিয়ান অধিনায়ক সন হেং মিন ফাঁকা জালে বল জড়ান (২-০)। ম্যাচের বাকি সময়ে গোল শোধ করতে পারেনি জার্মানি।
প্রথম ম্যাচে মেক্সিকোর বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে চাপে পড়েছিল জার্মানি। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে সুইডেনকে ২-১ গোলে হারিয়ে শেষ ষোলোর আশা বাঁচিয়ে রাখে গতবারের চ্যাম্পিয়নরা। পরের রাউন্ডে যেতে জয় তুলে নিতে হতো জার্মানদের। আরো একটা পথ খোলা ছিল জার্মানদের জন্য। মেক্সিকোর কাছে সুইডেন হারলে, সেক্ষেত্রে শুধু ড্র করলেই দ্বিতীয় রাউন্ডে চলে যাবে জার্মানি-এমন সমীকরণ মাথায় রেখেছিল জার্মানরা।
বিশ্বকাপের সবচেয়ে সফলতম দলগুলোর একটি জার্মানি। সর্বশেষ চার আসরে অন্তত সেমিফাইনাল খেলেছে। বিশ্বকাপে ১৮ বার অংশ নিয়ে ১৩ বার সেমিফাইনাল আর ৮ বার ফাইনাল খেলে ৪ বার ( ১৯৫৪, ১৯৭৪, ১৯৯০, ২০১৪) শিরোপা জিতেছে জার্মানরা। এবার গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হলো তাদের।
অন্যদিকে, এবারের আসরে প্রথম দুই ম্যাচের একটিতেও জয় পায়নি দক্ষিণ কোরিয়া। কোরিয়ানদের বিশ্বকাপ মানেই সেই ২০০২ সালের স্মৃতি। নিজ দেশে সেবার তারা চলে গিয়েছিল সেমিফাইনাল পর্যন্ত। এরপর প্রতিবারই তারা বিশ্বকাপ খেলেছে। এশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি বার বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে কোরিয়া। এবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারিয়েই দেশে ফিরছে তারা।
সারাবাংলা/এমআরপি