মিচেল স্টার্কের ফুল লেংথের ডেলিভারিটি পয়েন্টের দিকে ঠেলেই সিঙ্গেল নেওয়ার জন্য ভোঁ-দৌড় দিলেন কাইল ভেরেইন। দৌড়াতে দৌড়াতেই উল্লাস শুরু করে দিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার অন্য ক্রিকেটাররাও যোগ দেন উল্লাসে। কারও কারও চোখে দেখা গেল আনন্দ-অশ্রুও! এই সিঙ্গেলটা দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটের জন্য স্মরণীয়, অপবাদ মুক্তিও। ‘চোকার্স’ অপবাদ ঘুুচিয়ে অবশেষে বড় কোনো শিরোপার দেখা পেল দক্ষিণ আফ্রিকা। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়ারা এখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। লর্ডসে চার দিনেই অজিদের হারিয়ে স্বপ্নের শিরোপা নিশ্চিত করল প্রোটিয়ারা।
অবিস্মরণীয় জয়ের জন্য আজ ৬৯ রান লাগত দক্ষিণ আফ্রিকার, হাতে ছিল ৮ উইকেট। তবুও সবাই বাজি ধরেনি নিশ্চয় দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে। কারণ এমন পরিস্থিতি থেকে বারবার ভেঙে পরে বলেই তো যুগের পর যুগ ধরে দক্ষিণ আফ্রিকার গায়ে ‘চোকার্স’ অপবাদ লেগে আছে। আজ সেই অপবাদটা ঘুচল।
আগের দিন পায়ে ব্যথা নিয়ে বুক চিতিয়ে লড়াই করা অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা আজ ফিরেছেন মাত্র ১ রান যোগ করেই। মহাকাব্যিক এক ইনিংস খেলা এইডেন মার্করাম দক্ষিণ আফ্রিকাকে পথ হারাতে দেননি। ফিরেছেন দলকে জয় থেকে খানিক দূরে রেখে।
দ্বিতীয় ইনিংসে টেম্বা বাভুমা ও মার্করামের ১৪৭ রানের জুটিটিই ম্যাচ থেকে ছিটকে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়াকে। প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৩৮ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় ইনিংসে সেই দলটার সামনে জয়ের জন্য যখন ২৮২ রানের টার্গেট দাঁড়াল তখন ক’জনই বা ভেবেছিলেন ইতিহাস লিখতে পারবেন প্রোটিয়ারা।
চতুর্থ ইনিংসে এতো বড় টার্গেট তাড়া করতে নেমে জয়ের ঘটনা মাত্র ৫০টি। আর লর্ডসে এতো রান তাড়া করে জয়ের ঘটনা মাত্র দুটি। সে হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা অসাধ্য সাধনই করেছে।
দ্বিতীয় ইনিংসে গতকাল ২ উইকেটে ২১৩ রান তুলে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। স্মরণীয় এক সেঞ্চুরি করে অপরাজিত ছিলেন এইডেন মার্করাম টেম্বা বাভুমা অপরাজিত ছিলেন ৬৫ রানে। বাভুমা আজ ফিরেছেন ব্যক্তিগত ৬৬ রানে।
তবে মার্করাম দলকে টেনেছেন জয়ের আরও কাছে। ২০৮ বল খেলে ১৪টি চারের সাহায্যে ১৩৬ রান করে ফিরেছেন মার্করাম। মুল্ডারের ২৭ ও ডেভিড বেডিংহ্যামের ২১ রানের দুটি ইনিংস দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ে অবদান রেখেছে।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে তুলেছিল ২১২ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংস গুটিয়ে যায় ১৩৮ রানে। পরে অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংসে তোলে ২০২ রান। যাতে দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে জয়ের জন্য টার্গেট ছিল ২৮২ রানের। ৫ উইকেট হারিয়ে সেই টার্গেট পেরিয়ে ইতিহাস লিখল দক্ষিণ আফ্রিকা।