ফ্রান্সের কাছে হেরে আর্জেন্টিনার বিদায়
৩০ জুন ২০১৮ ২১:০৩ | আপডেট: ৩০ জুন ২০১৮ ২২:৩৭
।। স্পোর্টস ডেস্ক ।।
আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স ম্যাচ দিয়েই শুরু হলো বিশ্বকাপের নক আউট পর্বের ম্যাচ। রাশিয়ার কাজানে শনিবার (৩০ জুন) রাত আটটায় মুখোমুখি হয় দুই দল। ফ্রান্সের বিপক্ষে ৪-৩ গোলে হেরে বিদায় নিতে হলো ১৯৭৮, ১৯৮৬ সালের শিরোপা জয়ী আর্জেন্টিনাকে। প্রথমার্ধে গ্রিজম্যানের পেনাল্টি গোলের সুবাদে ১-০তে এগিয়ে যায় ফ্রান্স, তবে ডি মারিয়ার গোলে সমতায় ফেরে আর্জেন্টিনা। বিরতির পর মার্কাদোর গোলে ২-১ গোলের লিড নেয় আর্জেন্টিনা। পরে পাভার্ডের গোলে সমতায় ফেরে ফরাসিরা। এরপর এমবাপের গোলে ৩-২ গোলের লিড নেয় ফ্রান্স। পরে আবারো গোল করেন এমবাপে (৪-২)। যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে ব্যবধান কমান আগুয়েরো (৪-৩)।
ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে বার্সা তারকা স্যামুয়েল উমতিতি ক্লাব সতীর্থ মেসিকে ফাউল করলে ফ্রি-কিক পায় আর্জেন্টিনা। সেট পিসের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি জর্জ সাম্পাওলির শিষ্যরা। দুই মিনিট পর বামপাশ দিয়ে ডি মারিয়া বল বাড়ালেও কোনো সতীর্থ ছিলেন না ফরাসিদের ডি-বক্সে। সপ্তম মিনিটে এমবাপেকে আর্জেন্টিনার বক্সের সামনে ফেলে দেন মাশ্চেরানো। শট নেন গ্রিজম্যান, বল আর্জেন্টিনার পোস্টে লেগে ফিরে আসে।
ম্যাচের ১১ মিনিটের মাথায় কাউন্টার অ্যাটাক থেকে আক্রমণে যায় ফ্রান্স। এমবাপের দারুণ গতির কাছে হার মানলে ডি-বক্সে তাকে পেছনে থেকে ফেলে দেন রোহো। পেনাল্টি পায় ফরাসিরা, শট নেন গ্রিজম্যান। আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক আরমানিকে ফাঁকি দিতে সমস্যা হয়নি গ্রিজম্যানের। ১-০ গোলের লিড নেয় ফরাসিরা (১৩ মিনিট)।
ম্যাচের ১৯ মিনিটে এমবাপেকে নিজেদের ডি-বক্সের ঠিক বাইরেই ফাউল করেন তাগলিয়াফিকো। পল পগবা শট নিলেও গোলবারের উপর দিয়ে বল চলে যায়। ২৪ মিনিটের মাথায় মাশ্চেরানোর বাড়ানো বল নিজের নাগালে নিতে ব্যর্থ হন ফরাসি ডি-বক্সে ঢুকে যাওয়া এনজো পেরেজ। ২৬ মিনিটের মাথায় গ্রিজম্যান দ্রুতগতিতে বল নিয়ে প্রবেশ করলেও তার ক্রস রুখে দেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক আরমানি। দুই মিনিট পরেই গ্রিজম্যানের জোরালো শট থেকে বল পান জিরুদ, তবে বল নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি তিনি। একই সময়ে ফরাসি বক্সে উমতিতির হাতে বল লাগলে আর্জেন্টিনার পেনাল্টির আবেদনে সাড়া দেননি রেফারি। ৩০ মিনিটে এমবাপের সুযোগ ছিল লিড বাড়ানোর। তবে, এ যাত্রায় তাগলিয়াফিকো বল ক্লিয়ার করেন।
খেলার ৩৯ মিনিটের মাথায় পাভার্ড বল বাড়িয়ে দেন গ্রিজম্যানকে। তবে, হেড করতে ব্যর্থ হন গ্রিজম্যান। ৪১ মিনিটের মাথায় ফরাসিদের ডি-বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট নেন ডি মারিয়া। ৩০ গজ দূর থেকে আসা বল ফরাসি গোলরক্ষক লোরিস ঝাঁপিয়ে পড়লেও জালে জড়ানো থেকে রক্ষা করতে পারেননি (১-১)। ৪৩ মিনিটে হলুদ কার্ড দেখেন মাশ্চেরানো। ফলে, এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞায় পড়লেন তিনি। বিরতির আগে ৬২ শতাংশ বল নিজেদের দখলে রেখেছিল আর্জেন্টিনা, বাকি ৩৮ শতাংশ বল ছিল ফ্রান্সের পায়ে।
বিরতির পর রোহোর বদলি হিসেবে মাঠে নামেন আর্জেন্টিনার ফেদেরিকো ফ্যাজিও। ৪৮ মিনিটের মাথায় লিড নেয় আর্জেন্টিনা। মেসির জোরালো শট মার্কাদোর পায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে। বল জালে জড়ালে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ৫৫ মিনিটে পেরেজ বল বাড়িয়ে দেন গোলরক্ষক আরমানিকে। তবে, আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারলে সুযোগ আসে বলের কাছাকাছি থাকা গ্রিজম্যানে। শেষে আরমানিই রক্ষা করেন। ৫৭ মিনিটের মাথায় সমতায় ফেরে ফ্রান্স। পাভার্ডের বাঁকানো শটে আর্জেন্টিনার জালে বল জড়ায় (২-২)।
৬৪ মিনিটের মাথায় এমবাপের গোলে এগিয়ে যায় ফরাসিরা (৩-২)। আর্জেন্টিনার বক্সে জটলা থেকে শট নেন পিএসজির তারকা, জালে বল জড়ালে এগিয়ে যায় ফরাসিরা। ৬৬ মিনিটে পেরেজের বদলি হিসেবে মাঠে নামেন আগুয়েরো। ৬৮ মিনিটের মাথায় নিজের দ্বিতীয় আর দলের চতুর্থ গোল করেন এমবাপে (৪-২)। ৭০ মিনিটের মাথায় আবারো আর্জেন্টিনার ডিফেন্সকে তছনছ করে দেয় ফরাসিরা। তবে, জিরুদের জোরালো শট জালের বাইরে জড়ায়।
৭৫ মিনিটের মাথায় পাভোনের বদলি হিসেবে মাঠে নামেন মেজা। আর ফ্রান্সের মাতুইদির বদলে মাঠে আসেন তোলিসো। ৭৯ মিনিটের মাথায় মেসি দারুণভাবে বল বানিয়ে দেন আগুয়েরোকে। তবে, ম্যানচেস্টার সিটির তারকার দুর্বল শট রুখে দেন ফরাসি গোলরক্ষক লোরিস। ৮৩ মিনিটের মাথায় গ্রিজম্যানের বদলি হিসেবে মাঠে নামেন নাবিল ফেকির। ৮৪ মিনিটে ফিনিশিংয়ের অভাবে গোল করতে পারেননি আগুয়েরো। পরের মিনিটে ফরাসি ডিফেন্স চিঁড়ে শট নিয়েছিলেন মেসি। তার শট নিজের গ্লাভসবন্দি করেন লোরিস।
ম্যাচের ৮৮ মিনিটে জোড়া গোল করা এমবাপের বদলি হিসেবে নামেন থাওভিন। পরের মিনিটে ডি মারিয়ার শট রুখে দেন উমতিতি। যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে মেসির দারুণ এক পাস থেকে হেড করে ফরাসিদের জালে বল জড়ান আগুয়েরো (৪-৩)। পুরো ম্যাচে আর্জেন্টিনার বল পজিশন দাঁড়ায় ৫৯ শতাংশ আর ফ্রান্সের ৪১ শতাংশ।
আর্জেন্টিনার শুরুর একাদশ: ফ্রাঙ্কো আরমানি, গ্যাব্রিয়েল মার্কাদো, নিকোলাস অটামেন্ডি, মার্কোস রোহো, নিকোলাস তাগলিয়াফিকো, হাভিয়ের মাশ্চেরানো, এনজো পেরেজ, এভার বানেগা, ডি মারিয়া, ক্রিস্টিয়ান পাভোন এবং লিওনেল মেসি। কোচ: জর্জ সাম্পাওলি।
ফ্রান্সের শুরুর একাদশ: হুগো লোরিস, বেঞ্জামিন পাভার্ড, রাফায়েল ভারানে, স্যামুয়েল উমতিতি, লুকাস হার্নান্দেজ, এনগোলো কান্তে, পল পগবা, কাইলিয়ান এমবাপে, অ্যান্তোনিও গ্রিজম্যান, ব্লেইসিস মাতুইদি, অলিভার জিরুদ। কোচ: দিদিয়ের দেশম। ফ্রান্সের হয়ে সর্বোচ্চ ৮০ ম্যাচে দায়িত্ব পালনের রেকর্ড গড়লেন দেশম। এর আগে রেমন্ড ডমিনেখ ৭৯ ম্যাচে ফরাসিদের ডাগআউটে ছিলেন তিনি।
সারাবাংলা/এমআরপি