Thursday 16 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যে পাঁচ কারণে পারেনি আর্জেন্টিনা


১ জুলাই ২০১৮ ১১:৩৪

মোসতাকিম হোসেন।। 

 

খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে প্রথম রাউন্ড পার হয়ে পরের পর্বে ওঠা। কিন্তু সেখান থেকে যোগ্যতর দল হিসেবেই ফ্রান্স জিতেছে, আর্জেন্টিনা বিদ্যা নিয়েছে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে। কিন্তু পুরো টুর্নামেন্টে এক নাইজেরিয়ার সঙ্গে বাদ দিলে আর্জেন্টিনা এমন ছন্নছাড়ার মতো খেলল কেন? সেই পাঁচটি কারণ একটু ব্যাখ্যা করা যাক।

বয়স যখন সমস্যা

নাইজেরিয়ার সঙ্গে ম্যাচে আর্জেন্টিনার স্কোয়াড ছিল বিশ্বকাপের স্কোয়াডে সবচেয়ে বেশি বয়সী। খেলোয়াড়দের গত বয়স ছিল ৩০এরও বেশি। কাল হিগুয়াইনের জায়গায় পাভন নামায় সেই বয়স খানিকটা কমেছে বটে, কিন্তু তারপরও আর্জেন্টিনার স্কোয়াডে বয়সীদের আধিক্য ছিল স্পষ্ট। মধ্যমাঠে মাসচেরানো, পেরেজদের ওপর বয়সের ছাপটা বোঝা গেছে ভালোমতোই। রক্ষণে রোহো, মার্কেদোরা তরুন এমবাপ্পের গতির সাথে তাল মেলাতে পারেননি। ফ্রান্সের ২৫ বছর বয়সী তরুণ দলটা তাই আর্জেন্টিনাকে ছিঁড়েখুঁড়েই খেয়েছে।

 

ভুল একাদশ

প্রতি ম্যাচেই আর্জেন্টিনার একাদশ নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। টুর্নামেন্টের আগ থেকে হোর্হে সাম্পাওলিকে দেখে মনে হয়েছিল, কোন কৌশলে দলকে খেলাতে হবে নিজেই জানেন না। ৪-৪-২ থেকে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে ম্যাচে ৩-৫-২তে নেমে আসা ছিল বড় একটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। ওই ম্যাচে বিধ্বস্ত হয়ে সেটার মাশুলও দিয়েছে। নাইজেরিয়ার সঙ্গে বানেগা ফেরায় প্রশ্ন উঠেছে, আরও আগে থেকে কেন খেলানো হলো না তাঁকে। পিএজসির তরুণ মিডফিল্ডার লে সেলসো ফরমে থাকলেও তাঁকে খেলানো হয়নি। কাল যেমন, পাভনকে প্রথম একাদশে নিয়ে আসা হলো। কিন্তু ডান প্রান্তে তেমন কিছুই করতে পারেননি এই তরুণ ফরোয়ার্ড।

বিজ্ঞাপন

 

ইন-ফর্মদের বাইরে রাখা

সিরি আর এই মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন মাউরো ইকার্দি, দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন ইন্টারের হয়ে। কিন্তু ২৩ জনের দলেই তাঁকে রাখা হয়নি। পাউলো দিবালা জুভেন্টাসের হয়ে দেখিয়েছেন, কেন তাঁকে পেতে বড় সব ক্লাব মরিয়া। কিন্তু আর্জেন্টিনার হয়ে তিনি সাকুল্যের আধ ঘণ্টাও খেলার সুযোগ পেলেন না। রাশিয়ার পরীক্ষিত পারেদেস, রক্ষনে গ্যারাইদের কেন চূড়ান্ত দলে নেওয়া হলো না, সেটাও প্রশ্ন। আর রোমেরোর জায়গায় গোলপোস্টে কোনো ভালো বিকল্প খুঁজে পায়নি আর্জেন্টিনা, সেটাও একটা বড় ব্যর্থতা।

মেসি-নির্ভরতা

ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে ম্যাচে হারের পরেই আর্জেন্টিনা কোচ হোর্হে সাম্পাওলি বলেছিলেন, এই হারে মেসির কোনো দোষ নেই। মেসিকে দিয়ে খেলানোর সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে দল, কিন্তু পারেনি। একজন খেলোয়াড়ের ওপর কতটা নির্ভরশীল হলে একজন কোচ এমন একটা কথা বলতে পারেন, সেই প্রশ্ন আপনি করতেই পারেন। মেসির ঘাড়ে সওয়ার হয়েই বিশ্বকাপে এসেছে আর্জেন্টিনা, কিন্তু মেসিকে ছাড়া প্ল্যান বি ঠিক করেনি কখনোই। তাই ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে যেদিন মেসির একটা খারাপ দিন গেল, সবাই যেন একসাথে বিবর্ণ হয়ে উঠলেন। আবার নাইজেরিয়ার সঙ্গে ম্যাচেও মেসি জাদুর ওপরেই নির্ভর করতে হলো। রোনালদোর পর্তুগাল ছাড়া সাম্প্রতিক ইতিহাসে কোনো দল একজন খেলোয়াড়ের ওপর একটা নির্ভরশীল কি না, সেটা একটা গবেষণার বিষয় হতে পারে।

ফেডারেশনের ‘সর্ষেতেই যখন ভূত’

দল নির্বাচন, সাম্পাওলির কৌশল বা মেসি-নির্ভরতা, এমন আসলে বরফের শুধু ওপরর অংশ। আর্জেন্টিনা দলের আসল সমস্যাটা লুকিয়ে আছে পানির তলাতেই, ওপর থেকে যা চোখে পড়ে না। আর্জেন্টাইন ফেডারেশন অনেক দিন থেকেই যেভাবে দুর্নীতি আর অনিয়মের আখড়া হয়ে উঠেছে, তাতে জাতীয় দলের ওপর সেই প্রভাব পড়তে বাধ্য। হুলিও গ্রন্দোনা মারা যাওয়ার পর থেকে এমনিতেই অভিভাবকহীন। ফেডারেশনের অবস্থা এমনই সঙ্গীন ছিল, কোচদের বেতন পর্যন্ত দিতে পারছিল না ঠিকমতো। খেলোয়াড় গড়ার কোনো পরিকল্পনা নেই ফেডারেশনের। যে আরজেন্টিনা এক সময় নিয়ম করে যুব বিশ্বকাপে শিরোপা জিতত, তারা গত এক যুগ ধরে সেখানে হারিয়ে খুঁজছে। মেসি-ডি মারিয়াদের পর সেই প্রজন্ম আর সেভাবে আসেনি, যেটার প্রভাব এখন বোঝা যাচ্ছে ভালোমতো। আর্জেন্টাইন প্রচারমাধ্যম বলছে, ফেডারেশনের এসব নিয়ে কোনো মাথাব্যথাও নেই। এমন হলে আকাশী-নীলদের সামনে গভীর অন্ধকারই অপেক্ষা করছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ এএম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর