শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তায় শেষ আটে বেলজিয়াম
৩ জুলাই ২০১৮ ০১:১৯ | আপডেট: ৩ জুলাই ২০১৮ ০২:৩২
।। স্পোর্টস ডেস্ক ।।
রাশিয়া বিশ্বকাপের নকআউট পর্বের লড়াইয়ে শক্তিশালী বেলজিয়ামের মুখোমুখি হয় এশিয়ার দেশ জাপান। রুস্তভ-ন-দন্যুতে বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় শুরু হয় ম্যাচটি। জাপানকে শেষ মিনিটের গোলে (৩-২) হারিয়ে দেয় বেলজিয়াম। তাদের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে হবে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের বিপক্ষে।
প্রথমার্ধে কোনো দলই গোলের দেখা পায়নি। বিরতির পর হারাগুচি আর তাকাসি ইনুয়ির গোলে ২-০তে এগিয়ে যায় জাপান। পরে ব্যবধান কমাতে গোল করেন ভার্তোঘেন, আর বেলজিয়ামকে সমতায় ফেরান ফেলাইনি (২-২)। নির্ধারিত সময়ে আর কোনো গোল না হলে ম্যাচ গড়াতো অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। কয়েক সেকেন্ড বাকি থাকতে দুর্দান্ত এক কাউন্টার অ্যাটাকে চাদলির গোলে ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে যায় বেলজিয়াম। আর এই স্কোরেই জয় নিশ্চিত করে র্যাংকিংয়ের তিন নম্বরে থাকা দলটি।
শুরু থেকেই আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে গড়ায় ম্যাচ। খেলার চতুর্থ মিনিটে লুকাকুর চেষ্টা ব্যর্থ হয়। দশম মিনিটে তাকাসি ইনুয়ির ক্রস থেকে গোল আদায় করে নিতে পারেননি ইয়া ওসাকো। ভিনসেন্ট কোম্পানির দারুণ দক্ষতায় বল ক্লিয়ার হয়। ২১ মিনিটের মাথায় জাপান গোল পোস্টের ২০ গজ দূর থেকে শট নেন লুকাকু। এবারো ব্যর্থ হতে হয় তাকে। পরের মিনিটে ডি ব্রুইনের সেট পিস থেকে নেওয়া শট জাপানিজ ডিফেন্সে বাধা পায়।
২৫ মিনিটের মাথায় সবথেকে বড় সুযোগ নষ্ট হয় বেলজিয়ামের। লুকাকুর আলতো টোকায় বল জাপানের জালে জড়াতে পারতো। কিন্তু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই তারকা বলে পা লাগালেও নিজের পায়েই পেঁচিয়ে ফেলেন। ২৭ মিনিটে ইডেন হ্যাজার্ডের ২০ গজ দূর থেকে নেওয়া শটেও স্কোর হয়নি। প্রথমার্ধের বাকি সময়েও গোলের দেখা পায়নি জাপান-বেলজিয়াম। বিরতির আগে ৫৫ শতাংশ বল নিজেদের দখলে রেখেছিল বেলজিয়াম আর বাকি ৪৫ শতাংশ বল নিজেদের কাছে রেখেছিল জাপান।
বিরতির পর ম্যাচের ৪৮তম মিনিটে জাপানকে এগিয়ে নেন হারাগুচি। সতীর্থের বাড়ানো বলে জোরালো শট নেন তিনি, বেলজিয়ামের গোলরক্ষক থিবাউট কোরতিউসের চেষ্টা ব্যর্থ করে বল জালে জড়ায় (১-০)। ৫০তম মিনিটে হ্যাজার্ডের জোরালো শট জাপানিজ গোলপোস্টে লেগে ফিরে আসে। ৫২ মিনিটের মাথায় ব্যবধান দ্বিগুন করেন ইনুয়ি। বেলজিয়ামের ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া আচমকা শটের বল কোরতিউসের নাগালের বাইরে দিয়ে জালে জড়ায় (২-০)।
৬৩ মিনিটের মাথায় হ্যাজার্ডের তুলে দেওয়া দারুণ বলে হেড করতে পারেননি লুকাকু। মাথা ছোঁয়ালেই গোলের দেখা পেতে পারতেন তিনি। ৬৬ মিনিটে ওসাকোর শট পা দিয়ে আটকিয়ে দেন কোরতিউস। ৬৮ মিনিটে ফেলাইনির বাড়ানো বলে শট নিতে পারেননি লুকাকু। ৬৯ মিনিটে ব্যবধান কমান বেলজিয়ামের ভার্তোঘেন। অ্যাসিস্ট করার জন্য সতীর্থদের দিকে হেড করে বল বাড়িয়েছিলেন তিনি, তবে বল সরাসরি জালে জড়ায় (২-১)।
৭৩ মিনিটে হ্যাজার্ডের জোরালো শট জাপানের ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে দিক বদলালে হতাশা বাড়ে বেলজিয়ানদের। ৭৪ মিনিটের মাথায় বদলি খেলোয়াড় ফেলাইনির হেডে সমতায় ফেরে বেলজিয়াম (২-২)। ৮৪ মিনিটে শিনজি কাগওয়ার শট বেলজিয়ামের জালের বাইরে দিয়ে চলে যায়। ৮৬ মিনিটে জাপানের গোলরক্ষক কাওয়াসিমা ডাবল সেভ করেন। প্রথমে ডি ব্রুইনের হেড সেভ করেন, ফিরতি বলে শট নেন লুকাকু। এবারো কর্নারের বিনিময়ে দলকে রক্ষা করেন জাপানিজ গোলরক্ষক। দুই মিনিট পর ফেলাইনির দূরপাল্লার জোরালো শট রুখে দেন কাওয়াসিমা। ৯০ মিনিটে কেউ আর গোল পায়নি। যোগ করা অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিটে (৯৪ মিনিট) দারুণ এক কাউন্টার অ্যাটাক থেকে গোল করেন বেলজিয়ামের বদলি খেলোয়াড় চাদলি (৩-২)। এর সাথেই রেফারির শেষ বাঁশি। পুরো ম্যাচের বল পজিশনে বেলজিয়াম এগিয়ে (৫৬ শতাংশ)।
এবারের আসরের শুরু থেকেই নিজেদের সামর্থ্য জানান দিয়েছিল বেলজিয়াম। দলের দুই প্রধান অস্ত্র লুকাকু-হ্যাজার্ডদের আক্রমণে গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচই জিতে নেয় তারা। নিজেদের প্রথম ম্যাচে পানামাকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেয়ার পর, দ্বিতীয় ম্যাচে তিউনিসিয়াকে হারায় ৫-২ গোলে। আর শেষ ম্যাচে ফেভারিট ইংল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই শেষ ষোলোতে জায়গা করে নেয় তারা।
অন্যদিকে, ‘এইচ’ গ্রুপের রানার্সআপ হয়েই শেষ ষোলোতে উঠে আসে এশিয়ার দেশ জাপান। নিজেদের প্রথম ম্যাচে কলম্বিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে শুরু করে জাপান। তবে, দ্বিতীয় ম্যাচে সেনেগালের বিপক্ষে ২-২ গোলে ড্র, আর শেষ ম্যাচে পোল্যান্ডের কাছে ১-০ গোলে হেরেও নকআউট পর্বে জায়গা করে নেয় জাপানিজরা।
সারাবাংলা/এমআরপি