বিশ্বকাপে গোলরক্ষকদের পেনাল্টি প্রতারণা
৪ জুলাই ২০১৮ ১৭:৩৪ | আপডেট: ৪ জুলাই ২০১৮ ১৮:২৪
।। স্পোর্টস ডেস্ক ।।
বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর লড়াই শেষ হতে না হতেই নতুন এক বিতর্ক মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। আর সেটি হলো টাইব্রেকার বিতর্ক। রাশিয়ায় ছোটো-বড় দলগুলোর লড়াই হচ্ছে প্রায় সমানে সমানে। অনেক ম্যাচের ফলাফল ঠিক হচ্ছে একেবারে অন্তিম লগ্নে কিংবা টাইব্রেকারে। টাইব্রেকারে গড়ানো ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিচ্ছেন গোলরক্ষকরা, রাতারাতি হয়ে যাচ্ছেন জাতীয় বীর। তবে, সেটি নিয়েও কিন্তু আলোচনা-সমালোচনা থেমে নেই। ইতোমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, রাশিয়ায় কী তবে পেনাল্টি বিতর্কে জড়াচ্ছেন গোলরক্ষকরা?
‘পেনাল্টি শটের ক্ষেত্রে গোলরক্ষক গোললাইনের ওপর দাঁড়াবে… বলে কিক হওয়ার আগে তিনি কোনোভাবেই গোললাইন ছাড়তে পারবেন না’-এটাই ফুটবলের বিধিবদ্ধ নিয়ম। কিন্তু, রাশিয়া বিশ্বকাপে এর ব্যতিক্রম বেশ দেখা যাচ্ছে। রেফারির চোখের সামনেই গোলরক্ষক পেনাল্টি কিক হওয়ার আগেই বেড়িয়ে আসছেন গোললাইন ছেড়ে। অথচ রেফারি গোলের বাঁশি বাজিয়ে দিচ্ছেন। এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার ঘটেছে এমন ঘটনা।
এবারের বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ভিডিও অ্যাসিসটেন্ট রেফারিং (ভিএআর) এর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে তা পেনাল্টি শুট-আউটের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়… ফলে ভিডিও দেখে সিদ্ধান্ত দেওয়ার সুযোগ থাকছে না। আর সেই সুযোগটাই নিচ্ছেন কোনও কোনও গোলরক্ষক। শেষ ষোলোর ৮টি ম্যাচের তিনটিই মিমাংসা হয়েছে টাইব্রেকারে। যার ফ্রিজ ফ্রেমে দেখা গেছে রাশিয়ার ইগোর আকিনফিভ, ডেনমার্কের ক্যাসপার স্কিমিচেল ও ক্রোয়েশিয়ার ড্যানিয়েল সুবাসিচ বারবারই প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের বলে কিক নেওয়ার আগেই ছাড়ছেন গোললাইন। এই তিনজন এ পর্যন্ত মোট ১৫টি পেনাল্টি শট মোকাবেলা করে ৭টি ঠেকিয়ে দিয়েছেন। আর নিয়ম ভঙ্গ করেই তারা সেটা করতে পেরেছেন বলে বিতর্ক উঠেছে। এছাড়া, টাইব্রেকারে রাশিয়ার বিপক্ষে হেরে যাওয়ার আগে স্পেনের ডেভিড ডি গিয়া একই কৌশলে একটি স্পট কিক গোলবারের উপর দিয়ে পাঠাতে পেরেছেন, আর একটি কিকে গোল হজম করেছেন।
ডেনমার্কের ক্যাসপার স্কিমিচেল শুধু টাইব্রেকারের সময়ই নয়, ম্যাচ চলাকালীন ক্রোয়েশিয়া যখন পেনাল্টি পায়, তখনও একই কাজ করেছিলেন। লুকা মদ্রিচের মারা কিক তিনি বাঁচিয়ে দেন ঠিকই, কিন্তু পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, লাইন ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন ডেনমার্কের এই গোলরক্ষক।
ফিফার আইনে এ ধরনের নিয়ম ভঙ্গে গোলরক্ষককে সতর্ক করে দিয়ে ফের কিক নেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। গোলরক্ষককে সাজাও দেওয়া হতে পারে। পেনাল্টি কিকের ক্ষেত্রে অনেক সময় কিক নিতে আসা খেলোয়াড়রাও নিয়ম ভাঙছেন। অনেকেই রেফারির বাঁশি বাজার আগেই কিক নিয়ে নেন। সে ক্ষেত্রেও রয়েছে সতর্ক করে দিয়ে ফের কিক নেওয়ার বিধান। কিক নেওয়া খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে না ঘটলেও এবারের বিশ্বকাপে নকআউট পর্বের আট ম্যাচের অন্তত তিনটিতেই ফ্রিজ ফ্রেমে গোলরক্ষকের এমন অনিয়ম দেখা গেছে। তবে এ জন্য তাদের কোনও সাজা মেলেনি।
অথচ গত মে মাসেই অনূর্ধ্ব-১৭ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালে এই বিধানের চরম মূল্য দিতে হয়েছে আয়ারল্যান্ডকে। নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে তাদের গোলরক্ষক জেমস কোরকোরান এমন অপরাধে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। আর ফলে যা হবার তাই, দ্বিতীয় গোলরক্ষককে দিয়ে পেনাল্টি মোকাবেলা করে টুর্নামেন্ট থেকেই বাদ পড়তে হয়েছিলো আয়ারল্যান্ডকে।
এমন নয় যে, এবারের বিশ্বকাপেই এটা হচ্ছে। এ ঘটনা অহরহই ঘটে। আর রেফারির চোখ এড়িয়ে অনেক গোলরক্ষকই গোল ঠেকানোর কৃতিত্ব নিয়ে নেন। আবার সবক্ষেত্রেই যে গোল ঠেকে যায় তাও নয়। গোলরক্ষক এগিয়ে থাকার পরেও গোল হয়। ডেনমার্কের সিমন কেজরের কথাই ধরা যাক। সুবাসিচ স্পষ্টতই গোল লাইন ছেড়ে বাইরে ছিলেন, কিন্তু কেজরের গোলে তাতে কোনই বাধা সৃষ্টি হয়নি। তবে মাঠে ডেনমার্কের গোলরক্ষক ক্যাসপার স্কিমিচেলকে খুব রেগে যেতেও দেখা যায়। রেফারির দৃষ্টি আকর্ষণও করেন, কারণ পেনাল্টি কিক নেওয়ার দৌড়টি নিতে ক্রোয়েশিয়ার ক্র্যামারিচ বার বার থেমে যাচ্ছিলেন, গোলও পেয়েছিলেন তিনি।
তবে, এক্ষেত্রে নিয়মটি হচ্ছে- কিক নেওয়ার জন্য পুরো দৌড় শেষ করে কিক নেওয়া থেকে বিরত থাকলে সেটি অপরাধ। তবে দৌড় নেওয়ার সময় একাধিকবার থামায় কোনও ক্রটি নেই।
গ্রুপ পর্বে পর্তুগালের অধিনায়ক ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর একটি পেনাল্টি কিক মোকাবেলায় ইরানের গোলরক্ষক আলিরেজা বিরানভান্দ একটি অদ্ভুত কৌশল দেখিয়েছেন। ইরানের গোলরক্ষক গোললাইনের বাইরে নয়, বরং ভেতরে অনেকখানি ঢুকে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। এতে পর্তুগিজ দলনেতার দৌড়ের গতিবিধি নজরে রাখতে বেশ সুবিধা হয়- আর ফল হিসেবে গোলটিও ঠেকিয়ে দিতে পেরেছিলেন।
সারাবাংলা/এমএম