শৈল্পিক ফুটবল কি পাওয়ার ফুটবলের কাছে জিম্মি?
৯ জুলাই ২০১৮ ২৩:০৩
।। জাহিদ হাসান এমিলি ।।
একটা যুগ গেছে যখন শৈল্পিক ফুটবলের রাজত্ব ছিল। লাতিন আমেরিকার দেশগুলো সেজন্যই সমাদৃত হতো। স্বতন্ত্র ফুটবল প্রদর্শনী আর ছোট ছোট পাসে দুর্দান্ত ফুটবল বিমোহিত করতো সবাইকে। দেশ-বিদেশে সেই দেশগুলোর ভক্তকূলই বেশি এই কারণেই। বিশেষ করে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করছেন সম্ভাব্য সেই কারণেই।
ছোটবেলা থেকেই তাই বাবা-দাদাদের মুখে পেলে-ম্যারাডোনার কথাই শুনতাম। বল পায়ে ফুটবল নিদর্শন বা ফ্রি-স্টাইল দেখানোয় সেরা ছিল তারা। শরীরের যে কোন স্থানে বল নিয়ে এগিয়ে যেতে পারতেন মাঠের যে কোন জায়গায়। যার প্রভাব পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে নিমিষেই।
সে জন্য রোনালদিনহো-রোনালদো-মেসিদের মতো স্বতন্ত্র সেরা ফুটবলারদের জন্ম হয়েছে। তারাই লাতিন আমেরিকার রক্ত বহন করে যাচ্ছে। বর্তমানে কুতিনহো-নেইমাররা সেটারই ধারক ও বাহক।
তবে, ধীরে ধীরে ফুটবলের রক্তে ঢুকে গেছে গতি আর শক্তি। গতি আর শক্তি নির্ভর খেলাগুলো ছাড়িয়ে যাচ্ছে লাতিন আমেরিকার শৈল্পিক ফুটবলকে। মাঝে ২০০২ বাদ দিলে শেষ চার আসরের বিশ্বকাপ গেছে ইউরোপের ঘরে। এরমধ্যে গত আসরে আর্জেন্টিনা ছাড়া কোনও দলই জায়গা করে নিতে পারে নি ফাইনালে।
এটার ব্যাখ্যা আছে। বর্তমান ফুটবল অনেক বেশি গতিনির্ভর। শক্তি নির্ভর। ইউরোপের দলগুলোতে মেসি-নেইমারদের মতো সুপারস্টার না থাকলেও দলগুলো অনেকবেশি টিম ওয়ার্কে সফল। এমন না যে, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার টিম ওয়ার্ক ভালো নয়। কথা হচ্ছে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে জিততেই হবে যেকোনভাবেই জিততে চায়। গতি-শক্তির মাধ্যমে দলীয় ফুটবল প্রদর্শন করে ম্যাচ বের করে নিয়ে আসছে। কে গোল করছে তাতে কোনও আসে যায় না তাদের। জয় চাই যেকোন মূল্যে। টেকটিকসের দেখলেই বুঝবেন-পাওয়ার ফুটবলের মাধ্যমে গোল করে রক্ষণভাগ শক্তিশালী করে জমাটবদ্ধ খেলা খেলে থাকবে।
গোল না খেয়ে কিভাবে গোল দিতে হবে সেই ট্যাকটিক্স আয়ত্ত্ব করে দলগুলো। বড় বড় পাসে খেলা বের করে নিয়ে আসার প্রবণতা দেখা যায় তাদের মধ্যে।অনেকেই হয়তো বলবেন তাহলে স্পেন কিভাবে জিতেছে?
সেটারও ব্যাখ্যা আছে। সম্প্রতি সময়ে যারাই বিশ্বকাপ নিচ্ছে তাদের দেশের লিগ অনেক চাঙা। বিশেষ করে দুই-একটি দল খুবই শক্তিশালী। এবং ওই দেশের বেশিরভাগ খেলোয়াড় এই দুই-একটি ক্লাবে খেলছে। তাতে টিম ওয়ার্ক আর সতীর্থদের বোঝাপড়া অন্যরকম হবে স্বভাবতই। স্পেনের সময় বার্সালোনা আর রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়ই বেশি ছিল। এবং জার্মানির দলে বেশিরভাগ ফুটবলার বায়ার্ন মিউনিখ আর বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে খেলে আসছে। দেশের হয়ে খেললে তখন সুবিধাটাও পায় বেশি। তাছাড়া এবার বেলজিয়াম-ইংল্যান্ড-ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়ার বেশিরভাগ খেলোয়াড় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের। এতেই প্রমাণ হয় তারা গতি ও শক্তির ফুটবলে বিশ্বাসী। এবং এদেরই জয়জয়কার। র্যাঙ্কিংয়েও ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ছাড়া ইউরোপের সবগুলো দলের আধিপত্য।
লাতিন আমেরিকার দলগুলোকেও সেই জায়াগা থেকে বের হতে হবে বলে মনে হয় আমার। ফুটবলে অনেক যুগ কেটে গেছে। দিনশেষে জয়ই সব। শৈল্পিক ফুটবলে জয় না আসলে সেই খেলার কোনও মূল্য থাকে না দিনশেষে।
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক