কৌশল ও আক্রমনে এগিয়ে ইংল্যান্ড, মধ্যভাগে ক্রোয়েশিয়া
১১ জুলাই ২০১৮ ১৯:৩৩
।। জাহিদ হাসান এমিলি ।।
দুই দলের মধ্যে একটা জিনিস এবার এক। জয়ের জন্য যে কোন কিছু করতে পারে ক্রোয়েশিয়া ও ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপ অভিজ্ঞতা যদিও ক্রোয়েশিয়ার চেয়ে ঢের এগিয়ে ইংল্যান্ড। তবুও এটা বিশ্বকাপ বলেই এতো বিশ্লেষণ। দুই দলই মুখিয়ে থাকবে রেজাল্ট নিজেদের পক্ষে নিতে। নিজেদের ফুটবল ইতিহাসের সামনে দুটি দলই।
সেই ১৯৬৬ সালে বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছিল ইংল্যান্ড। ৫২ বছরের খিদাতো রয়ে গেছে। অর্ধ শতক ধরে শিরোপা খরায় ক্ষুধার্ত ইংলিশরা এবার স্লোগানই করে ফেলেছে-‘ইটস কামিং হোম’। সেই স্বপ্নের পথে এক পা বাড়িয়ে রেখেছেন হ্যারিকেন-রাশফোর্ডরা। অন্যদিকে ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপ মঞ্চে প্রথমবার অংশ নিয়েই চমকে দেয়া ক্রোয়েশিয়া এবার আছে দুর্দান্ত ফর্মে। অভিজ্ঞতা-তরুণ্য মিশেলে এ দল যেন বারুদ।
সেমি ফাইনালের এই ম্যাচের লড়াইয়ে এগিয়ে রাখবো ক্রোয়েশিয়াকে। ঠিক ১৯-২০ আরকি। ইংল্যান্ডও জিতে নিতে পারে। কারণ জ্লাতকো দালিচের দল টানা দুই ম্যাচ ১২০ মিনিট করে খেলেছে। একটু পরিশ্রান্ত থাকবে মনে হচ্ছে। ক্রোয়েশিয়ার কোচ দালিচ আর ইংল্যান্ডের কোচ গ্যারেথ সাউথগেট দুর্দান্ত দুই কোচ। তাদের কৌশলই এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে দলকে।
কৌশলই বদলে দিতে পারে দুই দলকে। ইংল্যান্ডে নেই কোনও ইঞ্জুরি বা কার্ড সমস্যা। পুরো শক্তির দল নিয়েই মাঠে নামবে তারা। অন্যদিকে ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে টানা দুই ম্যাচের পরিশ্রমতো আছেই। তারপরেও এরই নাম বিশ্বকাপ। কেউ ছেড়ে কথা বলবে না। দুই কোচই চাইবে ইতিহাস বদলাতে।
লড়াইটা স্বভাবতই হবে দুই দলের সেরা ফুটবলারদের মাঝেই। দ্বৈরথটাও হবে টানটান উত্তেজনায়। একদিকে ক্রোয়েশিার লুকা মদ্রিচ ও ইভান রাকিটিচের মতো বিশ্বসেরা মিডফিল্ডার অন্যদিকে হ্যারিকেন, ল্যাঙ্গার্ড-রাশফোর্ডদের মতো তরুণ গোলা।
ক্রোয়েশিয়ার লুকা মদ্রিচ নিঃসন্দেহে বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার। মদ্রিচ কেবল একজন খেলোয়াড়ই নয়, দুর্দান্ত একজন নেতাও। চলতি বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলেছে এ রিয়াল মাদ্রিদ তারকা। গোল পেয়েছে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই। সে ম্যাচে খেলেছেও দারুণ। তবে বিশ্বকাপে মদ্রিচ নিজের সেরাটা দেখিয়েছেন আর্জেন্টিনার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে। সেদিন ডি-বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত নৈপুণ্যে এক গোল করার পাশাপাশি ম্যাচজুড়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন এ তারকা মিডফিল্ডার। হয়েছেন ম্যাচসেরাও।
এখন পর্যন্ত চলতি বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচ খেলে তিনটিতেই ম্যাচসেরা হয়েছেন মদ্রিচ। দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে ডেনমার্কের বিপক্ষে কিছুটা ম্লান দেখালেও মদ্রিচ জ্বলে ওঠে শেষ আটে রাশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে। সে ম্যাচে একটি অ্যাসিস্টও করেছে তিনি। এছাড়া মাঠে তার উপস্থিতিও ছিল বেশ সপ্রভিত। জয়ের পথে সেদিনও ম্যাচসেরা হয়েছেন এ নাম্বার টেন। ম্যাচে মোট ১০২টি পাস দিয়েছেন মদ্রিচ এবং ১০টি ড্রিবলের চেষ্টা করে ৮টিতেই হয়েছেন সফল। পরে পেনাল্টি শুটআউটেও গুরুত্বপূর্ণ একটি গোল আসে তার কাছ থেকে।
অবশ্য মদ্রিচকে খুব সহজে ছাড় দেবে না হ্যারি কেনও। ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ স্বপ্নের অন্যতম নায়ক কেইন। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে থেকেই কথা হচ্ছিল তাকে নিয়ে। প্রথম ম্যাচে জোড়া গোল করে কেইন বুঝিয়ে দেয়, কেন তাকে নিয়ে এতো মাতামাতি। পরের ম্যাচে পানামার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে নিজেকে তুলে নেয় আরো ওপরে। দুই ম্যাচে পাঁচ গোল করে কেইন হয়ে ওঠেন গোল্ডেন বুটের সবচেয়ে বড় দাবিদার। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ বেলজিয়ামের বিপক্ষে বিশ্রামে থাকায় আর মাঠে নামা হয়নি তার। দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে কলম্বিয়ার বিপক্ষে করেছে আরো এক গোল।
টটেনহাম হটস্পার্সের এ গোলমেশিন বিশ্বকাপেও অব্যাহত রেখেছে নিজের গোলক্ষুধা। মদ্রিচের মতো তিন ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন তিনিও। বিশ্বকাপে গোল দেয়ায় সবার ওপরে তিনি। তবে কেইনের কাছে গোল্ডেন বল কিংবা বুটের চেয়ে বেশি আরাধ্য বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফিটি। আর সে লক্ষ্যে সফল হতে হলে আজকের ম্যাচে জ্বলে উঠতে হবে তাকে। তাই তাকে থামানোই আজ ক্রোয়েশিয়ার আসল চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। তাকে আটকানো নিয়ে ক্রোয়েশিয়ার কোচ জ্লাতকো দালিচ বলেছিলেন, ‘আমাদের দারুণ সেন্টারব্যাক আছে। আমরা মেসি এবং এরিকসেনকে আটকেছি। আশা করি কেইনকেও আটকাতে পারব।
এদিকে লড়াইটা কেবল কেন এবং মদ্রিচের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। এ ম্যাচে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের চ্যালেঞ্জ দুই গোলরক্ষক ড্যানিয়েল সুবাসিচ ও জর্ডান পিকফোর্ডেরও। দুজনই বিশ্বকাপে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। নকআউট পর্বে দুই ম্যাচে পেনাল্টি শুটআউটে রেকর্ড চারটি শট ঠেকিয়েছেন সুবাসিচ। আর সুইডেনের বিপক্ষে ইংলিশদের জয়ের নায়কই হলেন পিকফোর্ড। সে ম্যাচে এ এভারটন গোলরক্ষক ঠেকিয়ে দিয়েছেন তিনটি নিশ্চিত গোল।
এবার দুজনের সামনে চ্যালেঞ্জ অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। সে সঙ্গে গোল্ডেন গ্লাভস জয়ের হাতছানি তো আছেই। এ দুজন ছাড়াও এ ম্যাচে আছে আরো কিছু দ্বৈরথ। যেমন— দুই ডিফেন্ডার ক্রোয়েশিয়ার দেজান লভরেন বনাম ইংল্যান্ডের জন স্টোনস এবং মিডফিল্ডার ইভান রাকিটিচ বনাম ডেলে আলির দ্বৈরথও ছড়াতে পারে বাড়তি উত্তাপ।
সবমিলে খেলাটা হবে ক্রোয়েশিয়ার মধ্যমাঠের। এইদিকে ইংল্যান্ডে আছে তরুণদের বারুদ। জ্বলে উঠতে চাইবে তারাও। ক্রোয়েশিয়ার কোচ দালিচকে এগিয়ে রাখবো এই অর্থে- দলের আটজন ফুটবলার নয়টি গোল করে ফর্মেই আছে। অন্যদিকে ইংল্যান্ডের ফিনিশারের অভাব নেই।
কে পাল্টাবে ইতিহাস। লুঝনিকি স্টেডিয়ামে শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় দিয়েই ফাইনালে পা রাখতে হবে দুই দলকে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক