কোথা থেকে কোথায় ক্রোয়েশিয়া-বাংলাদেশ
১৩ জুলাই ২০১৮ ১৫:৫৫ | আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৮ ১৪:৪৩
।। স্পোর্টস ডেস্ক ।।
রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়া। র্যাংকিংয়ের ৭ নম্বর দল ফ্রান্সকে ১৫ জুলাইয়ের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে হারিয়ে দিলেই নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে অনন্য এক অর্জনের খাতায় গল্প লিখে রাখবে ১৯৯১ সালে স্বাধীন হওয়া দেশটি। স্বাধীনতার ২৭ বছর পর ক্রোয়েটরা যেখানে বিশ্বমঞ্চের ফাইনালে উঠেছে, ১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়ার পরও বিশ্বকাপের মূল আসরের মুখ দেখেনি বাংলাদেশ।
যেসব সার্বভৌম রাষ্ট্র ও নির্ভরশীল এলাকাকে জাতিসংঘ দেশ বা রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, কেবল সেগুলিকে তালিকাভুক্ত করা হলে বাংলাদেশের অবস্থান ৯২তম, আয়তন ৫৬ হাজার ৯৭৭ বর্গ মাইল। আর ক্রোয়েশিয়ার অবস্থান ১২১তম, আয়তন ২১ হাজার ৮৫১ বর্গ মাইল। বাংলাদেশের জনসংখ্যা যেখানে প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি, সেখানে ক্রোয়েশিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ৪১ লাখ ৫৫ হাজার মাত্র। এতো বেশি জনসংখ্যা থাকতেও বাংলাদেশ যেখানে ফুটবলার তৈরি করতে পারছে না, এশিয়ার গণ্ডি পেরুতে পারছে না, সেখানে ক্রোয়েশিয়া অল্প জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করেছে।
অথচ খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, বাংলাদেশ-ক্রোয়েশিয়া হাত ধরাধরি করেই ছিল ফিফা র্যাংকিংয়ে। ১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের ফুটবল র্যাংকিংয়ে ছিল ১১৯ নম্বরে আর ক্রোয়েশিয়া ছিল ১১৬ নম্বরে।
বাংলাদেশ-ক্রোয়েশিয়ার র্যাংকিংটা একটু চোখ বুলিয়ে নিন:
১৯৯৩ ডিসেম্বর: বাংলাদেশ ১১৬, ক্রোয়েশিয়া ১২২
১৯৯৪ ডিসেম্বর: বাংলাদেশ ১৩০, ক্রোয়েশিয়া ৬২
১৯৯৫ ডিসেম্বর: বাংলাদেশ ১৩৮, ক্রোয়েশিয়া ৪১
১৯৯৬ ডিসেম্বর: বাংলাদেশ ১৩৬, ক্রোয়েশিয়া ২৪
১৯৯৭ ডিসেম্বর: বাংলাদেশ ১৪১, ক্রোয়েশিয়া ১৯
১৯৯৮ ডিসেম্বর: বাংলাদেশ ১৫৭, ক্রোয়েশিয়া ৪
১৯৯৮ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে অংশ নেয় ক্রোয়েশিয়া। সেবার চমক দেখিয়েই সেমিতে উঠেছিল ক্রোয়েটরা। ব্রাজিলকে ৩-০ গোলে হারিয়ে ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জিতেছিল স্বাগতিক ফ্রান্স। এই ফ্রান্সের কাছে সেবার সেমিতে এগিয়ে গিয়েও হেরেছিল ক্রোয়েশিয়া। ম্যাচের ৪৬ মিনিটে ডেভর সুকারের গোলে লিড নিলেও ম্যাচের ৪৭ ও ৬৯ মিনিটে ফরাসি কিংবদন্তি লিলিয়ান থুরামের জোড়া গোলে হারতে হয় ক্রোয়েটদের। এবার সেই ফ্রান্সের বিপক্ষেই শিরোপার জন্য লড়বে প্রথমবার ফাইনালে উঠা ক্রোয়েশিয়া।
রিয়াল মাদ্রিদের লুকা মদ্রিচ ও কোভাচিচ, বার্সেলোনার ইভান রেকিটিচ, জুভেন্টাসের মারিও মানজুকিচ ও ইন্টারের পেরিসিচের মতো খেলোয়াড় যে দলে আছে, তাদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন থাকার কথা নয়। রক্ষণেও করলুকা ও লভরেনদের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। কিন্তু তারপরও ক্রোয়েশিয়ার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছিল। কাগজে কলমে শক্তিশালী দল নিয়ে এলেও বিশ্বকাপের আগে এই ক্রোয়েশিয়াকে নিয়ে চলছিল সমালোচনা। সেটার কারণ অনেক। এমনিতেই ক্রোয়েশিয়া ফুটবল ফেডারেশন নানান রকম দুর্নীতির অভিযোগে জেরবার। খেলোয়াড়দের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিল না। তার ওপর খেলোয়াড়েরা নিজেদের মধ্যেও যেন তেমন ঐকবদ্ধ ছিরেন না। নামি-দামি সব ক্লাবে খেলেও জাতীয় দলের জার্সি চড়ালে তারা হয়ে পড়েন বিবর্ণ।
গত ইউরোতে পর্তুগালের বিপক্ষে ম্যাচে যেমন হতশ্রী খেলেই বিদায় নিতে হয়েছিল ক্রোয়েশিয়াকে। এবারও কি তেমন কিছু হবে? এমন প্রশ্ন উঠেছিল বিশ্বকাপে চারবার অংশ নেওয়া দলটিকে নিয়ে। তবে, গ্রুপ পর্বেই সব সমালোচনাকে তুরি মেরে উড়িয়ে দিয়েছিল ক্রোয়েটরা। গ্রুপ পর্বে দুর্দান্ত ছিল ক্রোয়েশিয়া। নিজেদের প্রথম ম্যাচে নাইজেরিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করে দলটি। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার পর আইসল্যান্ডকে ২-১ ব্যবধানে হারায় ক্রোয়েটরা। শেষ ষোলোতে ডেনমার্ক ও কোয়ার্টার-ফাইনালে স্বাগতিক রাশিয়াকে টাইব্রেকারে হারায় দলটি।
আবার আসি বাংলাদেশ-ক্রোয়েশিয়া প্রসঙ্গে। গত বিশ্বকাপের পর ২০১৫ সালের মার্চে ফিফা র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৮২ নম্বরে আর ক্রোয়েশিয়া র্যাংকিংয়ে ছিল ১৮ নম্বরে।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ ১৮৫, ক্রোয়েশিয়া ১৪
২০১৭ সালে বাংলাদেশ ১৯৭, ক্রোয়েশিয়া ১৭
২০১৮ সালের (জানুয়ারি থেকে মার্চ) বাংলাদেশ ১৯৭, ক্রোয়েশিয়া ১৫
২০১৮ সালের (এপ্রিল থেকে মে) বাংলাদেশ ১৯৭, ক্রোয়েশিয়া ১৮
সবশেষ প্রকাশিত র্যাংকিংয়ে (৭ জুন) বাংলাদেশের অবস্থানের কিছুটা উন্নতি হয়েছে, তিন ধাপ এগিয়ে উঠেছে ১৯৪ নম্বরে আর ক্রোয়েশিয়ার অবনতি হয়েছে। দুই ধাপ পিছিয়ে ক্রোয়েটরা নেমে গেছে ২০ নম্বরে। বিশ্বকাপ শেষে ক্রোয়েশিয়া যে র্যাংকিংয়ে বিশাল লাফ দেবে সেটা বলাই যায়। আর বাংলাদেশ যেভাবে র্যাংকিয়ের তলানিতে ঢুকছে তাতে লাল-সবুজদের প্রতিনিধিরা কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটা বলা মুশকিল। বর্তমানে বাংলাদেশের ঠিক উপরেই আছে কুক আইল্যান্ড, আমেরিকান সামোয়া, তিমোর লেসতে, গুয়াম, আরুবা, সেশালস, সাওটোমি-ই-প্রাসিপি। দেশগুলোর নাম শুনেছেন কখনো?
সারাবাংলা/এমআরপি