বিশ্বকাপে বন্ধুত্বের বার্তা, রাশিয়া মানেই বন্ধ দরজা নয়
১৫ জুলাই ২০১৮ ২০:০৫
। সন্দীপন বসু ।
স্নায়ুযুদ্ধের পর রাশিয়া মানেই ছিল বিশ্বের কাছে বন্ধ দরজা। স্নায়ুযুদ্ধের পর কেন্দ্রীভূত বিশ্বপরাশক্তিই ইউরোপের সবচেয়ে বড় দেশটিকে প্রায় একঘরে করে ফেলে। এর পরের একদশকে পরাক্রমশালী সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে- রাশিয়া অনেকটাই হৃতশক্তির দেশে পরিণত হয়।
নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি একসময়ের বিশ্বের পরাশক্তি রাশিয়া কূটনৈতিকভাবে পশ্চিমাদের কাছ থেকে অনেকটা নেপথ্যে চলে যায়। ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন, জোসেফ স্টালিন, লিও তলস্তয়, থিওডর দস্তয়ভস্কি, আন্তেন চেকভ, আলেকজান্ডার পুশকিনের কাজে ধন্য- ইতিহাস আর গৌরবের দেশ রাশিয়ায় এই কিছুদিন আগেও পশ্চিমাবিশ্বের নতুন প্রজন্মের কাছে ছিল অনেকটাই রহস্যাবৃত।
তবে নীরবেই যে দেশটিতে হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারের কাজ চলছিল তা বোধহয় বুঝতে পারেননি অনেকেই। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপ বন্ধুত্বের বার্তায় বুঝিয়ে দিল- রাশিয়া মানেই প্রচলিত ধারণার আর বন্ধ দরজা নয়।
ফুটবলের সবচেয়ে বড় আয়োজন, বিশ্বকাপের মানে এক একটা দেশের কাছে এক এক রকম। কোন দেশ চায় অর্থনীতি চাঙ্গা করতে, আবার কেউ গুছিয়ে নিতে চায় ক্রীড়ার পরিকাঠামো। কারও কাছে আবার বিশ্বকাপ মানে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন। কিন্তু, রাশিয়ার কাছে বিশ্বকাপটা এবারে একেবারেই অন্যরকম একটা সুযোগ নিয়ে এসেছিল। আর এই সুযোগটা পাওয়ার জন্য অনেকদিন ধরেই অপেক্ষা করছিল কমিউনিজম-উত্তর রাশিয়ার মানুষ।
পশ্চিমা গণমাধ্যম এতোদিন রাশিয়াকে বিশ্বের কাছে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল বন্ধ দরজা হিসেবেই। তাই রাশিয়া মানেই পশ্চিম দুনিয়ার কাছে উপভোগের রঙিন আলোকচ্ছটা নয়, কঠোর শত্রুতা আর নিয়মের বেড়াজালে মোড়া। যে দেশে কেজিবি আছে, আছে আরো নানা রাষ্ট্রীয় পেটোয়া বাহিনী। যে দেশের মানুষ মানেই রসকষহীন, বিবর্ণ। তবে বিশ্বকাপের মাধ্যমে এই ধারণাটাই বদলে দিতে চান এখানকার মানুষ। এমনিতে রাশিয়ায় ইংরেজি জানা মানুষের সংখ্যা খুব কম। রাস্তাঘাটে ৫০ জনকে জিজ্ঞাসা করলে একজন হয়তো বলবেন, আমি ভালো ইংরেজি বলতে পারি না। বাকিরা নীরস মলিন মুখে জবাব দেবেন- ‘নুয়েত’ মানে ‘না’।
তবু এবারে কাজান থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গ পর্যন্ত বিশ্বকাপের যাত্রাপথে দেশটির মানুষরা বারবার বিশ্ববাসীকে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন- পশ্চিমারা তাদের যেভাবে দেখে বা দেখায়, আসলে তারা তেমন নন। রাশিয়া মানে শত্রুতা, এই ধারণাটাই বদলে দিতে চান তারা। গোটা বিশ্বকে তারা জানাতে চান, আমরাও বন্ধুত্ব করতে জানি। আমরা আদৌ গোমড়ামুখো ‘বোরিং’ একটা জাতি নই। আমরাও পশ্চিম দুনিয়ার মতোই হাসিখুশি, খোলামেলা।
রাশিয়া নিয়ে এই বার্তাটা বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়লে দেশেরই লাভ হবে বলে মনে করেন এখানকার মানুষজন। তাই রাশিয়ার কাছে এই বিশ্বকাপটা শুধু ফুটবল মাঠেই নয়, মাঠের বাইরেও বিশ্বজয়ের একটা সুযোগ।
– দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে
সারাবাংলা/ এসবি