Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ক্যারিবিয়ানে সিরিজ জয়েই বাজল মাশরাফিদের ক্যালিপসো


২৯ জুলাই ২০১৮ ০৯:৩৩

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

৪৮তম ওভার যখন শেষ, তখনও ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ৩৪ রান। কঠিন কিন্তু, অসম্ভব নয়। বিশেষ করে রভম্যান পাওয়েলের মতো একজন যখন মূর্তিমান ত্রাস হয়ে দাঁড়িয়েছেন। রুবেল হোসেনের কাছে বল তুলে দেওয়ার সময় মাশরাফি বিন মুর্তজা কি ইশান কোণে মেঘ দেখতে পাচ্ছিলেন? শেষের আগের ওভারে গিয়ে যে গড়বড় করে ফেলা এই বছর রুবেল অভ্যাসই বানিয়ে ফেলেছেন!

রুবেল এবার আর খেই হারিয়ে ফেলেননি। বাংলাদেশেরও তীরে এসে আর তরী ডোবেনি, পাওয়েলের অতিমানবীয় ইনিংসটা শেষ পর্যন্ত বৃথাই গেছে। শেষ ওভারে দরকার ২৮ রান, প্রথম বলে ছয় মেরে পাওয়েল একটু হয়তো মাশরাফির শিরদাঁড়া বেয়ে ভয়ের একটা স্রোত বইয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মোস্তাফিজুর রহমান মাথা ঠাণ্ডা রেখে জয় এনে দিয়েছেন। ১৮ রানের জয়ে বাংলাদেশ সিরিজটা জিতেছে ২-১ ব্যবধানে। ৯ বছর পর এশিয়ার বাইরে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে খর্বশক্তির এই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধবলধোলাই করেছিল, এবার হারাল পূর্ণশক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।

তবে পাওয়েল একটা ভয় ধরিয়ে দিচ্ছিলেনই। যখন নেমেছিলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য কাজটা কঠিন থেকে কঠিন হয়ে উঠছে। শাই হোপ ক্রিজে অনেকক্ষণ থেকেও আশার বদলে জাগিয়ে যাচ্ছেন হতাশা। রান তুলতে সংগ্রাম করতে হচ্ছিল তাঁকে, শেষ ১০ ওভারে ওভারপ্রতি ১০ রানেরও বেশি করতে হতো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। শেষ ১০ ওভারে এত রান কখনো করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

তবে পাওয়াল ভাবছিলেন অন্য কিছু। যে মোস্তাফিজ প্রথম স্পেলে ছিলেন দুর্দান্ত, তাঁকেই একের পর এক আছড়ে ফেলতে শুরু করলেন মাঠের বাইরে। শেষ ৩ ওভারে যখন দরকার ৪০ রান, খুব অসম্ভব মনে হচ্ছিল না তা। এর মধ্যে পাওয়েল পেয়ে গেছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কারও দ্বিতীয় দ্রুততম ফিফটি। কিন্তু অন্য পাশ থেকে কারও সহায়তা পেলেন না, সেটাই কাল হলো। ৪৮তম ওভারে এসে মোস্তাফিজের বলে ক্যাচ দিলেন রুবেল। এরপর বলের সঙ্গে রানের ব্যবধানটা বাড়তেই লাগল। পাওয়েলের ৪১ বলে অপরাজিত ৭৪ রানের ইনিংসড়টা দিন শেষে বৃথাই গেছে।

বিজ্ঞাপন

যেমন বৃথা গেছে ক্রিস গেইলের ইনিংসটাও। এই সিরিজে বড় কিছু করতে পারেননি, তবে আজ মনে হচ্ছিল সব অপ্রাপ্তি পুষিয়ে দেবেন। প্রথম ম্যাচে যেমন খোলসের ভেতর ঢুকে ছিলেন, আজ একটু ঝুঁকি নিয়ে শট খেলছিলেন সুযীগ পেলেই। অন্য পাশের আরেক বিপজ্জনক এভিন লুইসকে আজও ঢোঁড়া সাপ বানিয়ে রাখলেন মাশরাফি, টানা তিন ম্যাচে ফিরিয়ে দিয়েছেন এই ওপেনারকে। তবে গেইল মোসাদ্দেক-মাহমুদউল্লাহকে সীমানাছাড়া করছিলেন, আবার সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইকও সচল রেখেছেন।

শেষ পর্যন্ত ত্রাতা রুবেল। গেইল মারতেই চেয়েছিলেন, কিন্তু ঠিকঠাক না হওয়া লং অনে ক্যাচ দেন মিরাজকে। ৬৬ বলে ৭৩ রানের ইনিংসটা শেষ হলো, বাংলাদেশের ঘাড়ের ওপর থেকে বড় বোঝাও নেমে গেল। এরপর হোপ ও এই সিরিজের আবিষ্কার শিমরন হেটমেয়ার ৬৭ রানের জুটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পথে রেখেছিলেন। কিন্তু রান রেট বেড়ে যাচ্ছিল তরতর করে। সেটার সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে ৩০ রানে বোল্ড হেটমেয়ার, পরে হোপ ফিরে গেছেন ৬৪ রানে। যে দূরত্ব আর কখনোই ঘোঁচানো হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের।

তবে বাংলাদেশের ইনিংসের অনেকটুকু জুড়ে থাকবেন তামিম ইকবালই। এই সিরিজটা যেন নিজের করে নেওয়ার পণ করেছেন। প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি, ফিফটির পর আজ আবার করেছেন সেঞ্চুরি। এক সিরিজে ২৮৭ রান করার জন্য ম্যাচসেরা তো বটেই, সিরিজসেরার পুরস্কারও উঠেছে তাঁর হাতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজেও তিন ম্যাচ সিরিজে এত রান করতে পারেনি কেউ।

আজও সেই রান করতে হয়েছে স্রোতের বিপরীতে বৈঠা বেয়ে। এনামুল হক বিজয় আজও সুযোগ নষ্ট করেছেন, আজ ৩১ বলে ১০ রান করে ইনিংসের শুরুটাই করে গেছেন স্লথ। প্রথম ১০ ওভারে দলের রান ৩৭, তামিম আর সাকিব মিলে এরপর শুরু করলেন সেটি মেরামত করা। ৮১ রানের জুটিটা যখন জমে উঠেছে, সাকিব আউট হয়ে গেলেন ৩৭ রানে। মুশফিক শুরু থেকেই অধৈর্য, শেষ পর্যন্ত স্কুপ করতে গিয়ে ১০ রানেই অ্যাশলি নার্সের বলে বোল্ড। তবে তামিম সুযোগ পেলেই সিঙ্গেল নিচ্ছিলেন, বাউন্ডারি মারছিলেন কমই। শেষ পর্যন্ত ১২০ বলে যখন ১০০ করছেন, নামের পাশে সাতটি চার আর দুইটি ছয়। যার মানে মাত্র ৪০ এসেছে বাউন্ডারি থেকে। এর পরেই অবশ্য আউট হয়ে গেছেন, আর মঞ্চটা তৈরি করে দিয়ে গেছেন ঝড় তোলার জন্য।

বিজ্ঞাপন

শেষ ১০ ওভারে সেই ঝড়ে বাংলাদেশ তুলেছে ৯৬ রান। মাহমুদউল্লাহই এখানে পথ দেখিয়েছেন, ৪৯ বলে ৬৭ রান করে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন ৩০০র বেশি। তার আগেই অবশ্য ম্যাচের সবচেয়ে বড় চমকের জন্ম দিয়েছেন মাশরাফি। তামিমের আউটের পর ছয় নম্বরে সাব্বির-মোসাদ্দেককে টপকে নেমে গেছেন। আসলে হোল্ডারের বলে পর পত তিন চারে মাশরাফিই শুরু করেছেন তোপের। ২৫ বলে ৩৬ রানের ইনিংসের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহও অন্য পাশ থেকে খেলেছেন দারুণ। শেষ দুই ওভারে ৩০ রানের বেশি তুলেছে বাংলাদেশ,৪৯ বলে ৬৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন মাহমুদউল্লাহ।

শেষ পর্যন্ত এই কটি রানই হয়ে গেছে মহামূল্যবান। বোলিং ভালো করেও আরও একবার পরাজয় চোখ রাঙাচ্ছিল বাংলাদেশকে। শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি, মাশরাফিও দলকে জিতিয়েই ফিরেছেন দেশে।

 

 

সারাবাংলা/এএম/এসএন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর