সাকিব-তামিমে সিরিজে সমতা ফেরাল বাংলাদেশ
৫ আগস্ট ২০১৮ ০৯:৪১
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
গল্পটা হতে পারত আবার তীরে এসে তরী ডুবে যাওয়ার। টি-টোয়েন্টিতে এই বছরে কয়েক বার শেষে এসে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে বাংলাদেশের। হতে পারত আজও। সুযোগটা করে দিয়েছিল বাংলাদেশই, বিপজ্জনক রভম্যান পাওয়েলের ক্যাচ যে দুইবার ফেলে দিয়েছিলেন আরিফুল-সাকিব। তবে শেষ ওভারে গিয়ে স্নায়ুচাপ হারাননি নাজমুল ইসলাম অপু। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা জিতেছে ১২ রানে, ১-১ ব্যবধানে সমতা ফিরিয়েছে সিরিজেও।
অথচ পাওয়েল যতক্ষণ ছিলেন, বাংলাদেশের জন্য জয়টা মনে হচ্ছিল বেশ দূরের পথ। তৃতীয় ওয়ানডেতে আরেকটু হলেই ম্যাচটা বের করে নিয়েছিলেন, আজও ১৮তম ওভারের পরেও ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভরসা হয়ে। শেষ দুই ওভারে ৩১ রান দরকার ওয়েস্ট ইন্ডিজের, হাতে ছিল ৪ উইকেট। মোস্তাফিজের দ্বিতীয় বলে একটা চারও মারলেন, কিন্তু এর পরেই স্লোয়ার বলটা ঠিকঠাক টাইমিং হলো না। স্লোয়ার বলটা মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন উইকেটের পেছনে।
নাটক বাকি ছিল তখনও। নার্স শেষ দুই বলে চার-ছয় মারলেন, শেষ ওভারে দরকার ১৫ রান। কিন্তু নাজমুলের ওভারে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন, দারুণ এক ক্যাচে আগের মিসের প্রায়শ্চিত্ত করলেন আরিফুল। শেষ পর্যন্ত ওই ওভার থেকে ১ রান নিতে পেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বাংলাদেশ অবশ্য শুরু থেকেই স্বাগতিকদের চেপে ধরেছিল। এভিন লুইস আরও একবার ব্যর্থ, আজ ১ রান করেই এলবিডব্লু মোস্তাফিজের বলে। এক ওভার পরে রাসেলও মোস্তাফিজের বলে ফিরে যান ১০ বলে ১৭ রান করে। স্যামুয়েলস প্রথম দুই বলেই নিলেন ১০ রান, তৃতীয় বলে সাকিবের বলে আউট। খানিক পর রামদীন রুবেলের বলে ফিরে গেলেন, ৫৮ রানে ৪ উইকেট হারাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
তবে ফ্লেচার আর পাওয়েল বাঁচিয়ে রেখেছিলেন ক্যারিবিয়ানদের আশা। দুজন পঞ্চম উইকেটে যোগ করলেন ৫৮ রান, জুটিটা ভাঙলেন অপু। ৩৮ বলে ৪৩ রান করার পর ফিরিয়ে দিলেন ফ্লেচারকে। এরপর বিপজ্জনক ব্রাথওয়েটকে ফেরালেন সাকিব, ম্যাচটাও হেলে পড়ল বাংলাদেশের দিকে।
তামিমের সঙ্গে মিলে সাকিব তার আগে আসল কাজ সেরে রেখেছিলেন ব্যাট হাতে। ওয়ানডেতে দুজনের ব্যাটেই জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। আজ টি-টোয়েন্টিতেও আরও একবার চওড়া হয়ে উঠল তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের ব্যাট। দুজনের ফিফটিতে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ পেয়েছিল ১৭১ রানের পুঁজি।
অথচ দুজন যখন জুটি বেঁধেছিলেন, ফ্লোরিডার লডারহিলে বাংলাদেশের নৌকা প্রথম ওয়ানডের মতোই কাঁপছে। লিটন দাস শুরুতেও অ্যাশলি নার্সের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেছেন মাত্র ১ রান করেই। নার্সের পরের ওভারেই আউট মুশফিক, রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন পয়েন্টে। ২৪ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
সৌম্য সরকার নেমে এসেছিলেন চারে, শুরুটা খারাপ হয়নি। নার্সের বলে ছয় মেরে জানান দিচ্ছিলেন, আজ হয়তো কিছু করতে পারেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধুঁকতে ধুঁকতেই শেষ হয়ে গেছে ১৮ বলে ১৪ রানের ইনিংস। ৭.৪ ওভারে বাংলাদেশ তখন তুলেছে ৪৮ রান।
সাকিব আর তামিম এসেই স্কোরবোর্ড সচল করার কাজটা শুরু করেন। তামিম শুরু থেকেই বেশ আগ্রাসী ছিলেন, স্যামুয়েল বদ্রিকে দারুণ এক শটে সীমানা পান করে পেয়েছিলেন নিজের প্রথম ছয়। সাকিবও শুরু থেকেই খেলছিলেন দারুণ সব শট। তামিমের অবশ্য ভাগ্য ভালোই বলতে হবে, ৪৭ রানের সময় তাঁর সহজ ক্যাচ ফেলে দিয়েছেন রভম্যাণ পাওয়েল। তবে তার খানিক পরেই ৩৫ বলে পেয়ে গেছেন ফিফটি। কিমু পলের ওই ওভারেই সাকিব পেলেন নিজের প্রথম ছয়।
তবে ফিফটির জন্যই যেন অপেক্ষা করছিলেন তামিম। আন্দ্রে রাসেল প্রথম দুই ওভার দারুণ করেছিলেন, তৃতীয় ওভারে এসে এমন কিছু স্বপ্নেও বধ হয় ভাবেননি। প্রথম বলে এলো ছয়, এক বল বাদে আবার ছয়। পরের বলে এলো চার, পরের বলে আবার ছয়। ৫ বলে ২২ রান নিলেন তামিম, শেষ বলে ফিরে গেলেন ক্যাচ দিয়ে। ৪৪ বলে ৭৪ রান করে ফিরে গেছেন।
তখন মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশের স্কোর ১৮০ও হয়ে যেতে পারে। সাকিবও তার খানিক পর ফিফটি পেয়ে গেলেন। তবে শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে সেভাবে ঝড় তুলতে পারলেন না। শেষ ওভারে গিয়ে যখন আউট হলেন, নামের পাশে ৩৮ বলে ৬০ রান। বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত করল ১৭১। হাজার চারেক বাংলাদেশি সমর্থকদের উল্লাসে তখন মুখর লডারডেল। নাটকীয় জয়ের পর সেই উচ্ছ্বাস থেকে গেছে ম্যাচ শেষেও।
সারাবাংলা/এএম/এসএন